শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০২৫, ১০:১১ দুপুর
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্কারজয়ী তথ্যচিত্রের পরিচালককে মার পশ্চিম ভূখণ্ডে

দক্ষিণ গাজ়ার রাফা শহরের তেল আল-সুলতান এলাকার অবস্থাও শোচনীয়। লাগাতার বিস্ফোরণে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জায়গাটি।

ফের জ্বলছে গাজ়া। দক্ষিণ গাজ়া ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় হাসপাতালে রবিবার রাতে হামলা চালাল ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। গত সপ্তাহ থেকে যুদ্ধবিরতি শেষ করেছে ইজ়রায়েল। তার পর থেকে লাগাতার আকাশপথে হামলা চলছে গাজ়ায়। এমনিতেই মৃতদেহ ও জখম রোগীর ভিড়ে উপচে যাচ্ছিল খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল। তার মধ্যে গত কাল রাতে শল্যচিকিৎসা ভবনে এসে পড়েছে বোমা। অন্য দিকে পশ্চিম ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলি বসবাসকারীদের হামলায় অস্কারজয়ী তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’-এর সহ-পরিচালক হামদান বাল্লাল আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই তথ্যচিত্রের আর এক সহ-পরিচালক ইউভাল আব্রাহাম। তিনি জানান, হামলার পরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ডেকেছিলেন বাল্লাল। তাঁর মাথা ও পেটে আঘাত লেগেছে। ইজ়রায়েলি সেনারা সেই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে। এর পরে তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ইজ়রায়েলি বাহিনী স্বীকার করে নিয়েছে যে তারা খান ইউনিসের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। তবে তাদের দাবি, ওই হাসপাতালকে ঘাঁটি বানিয়েছিল প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠী হামাস। ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর জন্য ‘দায়ী’ হামাস-ই, তারা নয়।

১৭ মাস ধরে চলা হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নাসের হাসপাতাল-ই অগণিত প্রাণহানির সাক্ষী। আগেও বহু বার নিশানা করে হয়েছে এই হাসপাতালকে। আইডিএফ-এর দাবি, এ বারের হামলায় কয়েক ডজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকশো সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে। যদিও তার ‘দায়’ হামাসের।

দক্ষিণ গাজ়ার রাফা শহরের তেল আল-সুলতান এলাকার অবস্থাও শোচনীয়। লাগাতার বিস্ফোরণে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জায়গাটি। এর মধ্যে ওই অঞ্চলের বাসিন্দা কয়েক হাজার প্যালেস্টাইনিকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। এ সব নতুন কিছু নয়। গত দেড় বছরে একটা ছোট্ট ভূখণ্ডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ২০ লক্ষ প্যালেস্টাইনি। কোনও জায়গাই নিরাপদ নেই। শুধু আইডিএফ-এর নির্দেশ অনুসরণ করে জায়গা বদল। তেল আল-সুলতানের বাসিন্দারা হেঁটে মুওয়াসি পৌঁছেছেন। সে জায়গাও ধ্বংসের উপরে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘ যুদ্ধ, দারিদ্র, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থায় যেন এক ‘আবর্জনা স্তূপ’। তার মধ্যে কোনও মতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেঁড়া-ফাটা তাবুর ছাউনিতে মাথা গুঁজেছেন শরণার্থীরা। স্থানীয় সাংবাকি মুস্তাফা গাবের এই শরণার্থীদের এক জন। তিনি বলেন, ‘‘বন্দুকের নলের মুখে সব কিছু চলছে। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে ট্যাঙ্ক, ড্রোন ফায়ারের শব্দ।’’ আমাল নাসার নামে আর এক শরণার্থী বলেন, ‘‘মানুষের ভিড়ের মাঝে গোলা এসে পড়েছে। গুলি চালানো হচ্ছে বেপরোয়া ভাবে।’’ মুওয়াসিতে পালিয়ে এসেছেন আয়দা আবু শের। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘বয়স্ক মানুষদের রাস্তায় ধাক্কা মেরে ফেলা হচ্ছে। এক জন বয়স্ক মহিলা ছেলেকে চিৎকার করে বলছিলেন, এখান থেকে চলে যাও। আমি এখানেই মরব। যথেষ্ট হয়েছে। আমরা ক্লান্ত। আর পারছি না।’’

ইজ়রায়েলি বাহিনী মেনে নিয়েছে যে তারা কিছু ‘সন্দেহজনক’ গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। পরে জানা যায় সেগুলি অ্যাম্বুল্যান্স ও দমকলের গাড়ি। তবে নিজেদের সাফল্যও জাহির করেছে তারা। জানিয়েছে, এক শীর্ষস্থানীয় হামাস নেতা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে।

গাজ়া সিটিতে একটি শরণার্থী শিবিরের পাশে এ দিন বোমা ফেলেছে আইডিএফ। কিছু ক্ষণ আগে ওই শিবিরেই লোকজনকে সরিয়ে এনেছিল তারা। স্থানীয় বাসিন্দা নিদা হাসুনা বলেন, ‘‘আমার স্বামী দৃষ্টিহীন। বিস্ফোরণের শব্দে প্রাণ বাঁচাতে খালি পায়েই ছুটতে শুরু করেন তিনি। বাচ্চারাও যে যার মতো ছুটতে শুরু করে।’’ অন্ধকারে এই ছুটে চলা কবে শেষ হবে, সেই অপেক্ষাও ছেড়ে দিয়েছেন প্যালেস্টাইনিরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়