পতিত আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।দলটিকে নিষিদ্ধ, নিবন্ধন বাতিল কিংবা গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আমার দেশ ঈদ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব প্রস্তাব দেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের বিষয়ে একটা পন্থা হচ্ছে- নিষিদ্ধ করা। নিষিদ্ধ করতে হলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আর একটা হচ্ছে- ইলেকশন কমিশন যদি তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। তারা দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে না, কিন্তু আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তৃতীয় একটা পদ্ধতি গণভোট করা। মানুষের কাছে জানতে চান, আওয়ামী লীগ দল থাকবে কি, থাকবে না?
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, কথা সাহিত্যিক সালাউদ্দিন শুভ্র, আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক সম্পাদক গাজিউল হাসান খান, কথা সাহিত্যিক আতা সরকার, ইউসুফ শরীফ, কবি শাহীন রেজা, কবি জাকীর আবু জাফর, ইতিহাস গবেষক মো. আব্দুল মান্নান, সাংবাদিক শফিকুর রহমান, আমার দেশ পত্রিকার ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদুর রহমান প্রমুখ।
মাহমুদুর রহমান বলেন, গতকাল (শুক্রবার) আমি একটা ইন্টারভিউ শুনলাম। এটা শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে। ইন্টারভিউটা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সর্বশেষ তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। ওই ইন্টারভিউ ডয়চে ভেলেতে শোনার পরে আমার মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের বোধহয় পুনর্জন্মের আর কোনো সম্ভাবনা নাই। কেন মনে হয়েছে, আপনারা যারা শুনেছেন ডয়চে ভেলে তার ইন্টারভিউ। তিনি বলেছেন- আওয়ামী লীগের নাইনটি নাইন পয়েন্ট নাইনটি নাইন পার্সেন্ট লোক নাকি শেখ হাসিনাকে এখনো তাদের নেতা মনে করে। যদি একটা দলের নাইনটি নাইন পার্সেন্ট লোক, একজন খুনি, হত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট, মিথ্যাবাদী, লুটেরা মহিলাকে তাদের নেতা মনে করে, তাহলে বলতে হবে এই দলটার জিনে সমস্যা আছে। সেই দলের পুনর্জন্মের সম্ভাবনা কমে যায়। তিনি আরও একটা কথা বলেছেন- যদি সুযোগও দেওয়া হয়, তাহলেও নাকি তারা ড. ইউনূসের সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। বিতর্ক মিটেই গেল। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তারা ড. ইউনূসের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, তাহলে তার বক্তব্য থেকে দুটি বিষয় পরিষ্কার হলো- একটা হলো যে তারা এখনো একজন গণহত্যাকারী, একজন ফ্যাসিস্ট, লুটেরাকে তাদের নেত্রী মনে করে। তার মানে তারা তাদের অপকর্মের জন্যে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়। অনুতাপ না করলে তো আল্লাহও মাফ করেন না। যারা অনুতাপ করবে না তাদেরকে মাফ করার আমরা বান্দা কারা? যারা অনুতাপ করছে না, তাদেরকে মাফ করার সুযোগটা কোথায়?
তিনি বলেন, এখন যে তর্ক চলছে- (আওয়ামী লীগ) নিষিদ্ধ করা কিংবা নির্বাচনে তাদেরকে বাদ দিয়ে দেওয়া। আমি মনে করি, এটা খুব যুক্তিসঙ্গত দাবি। এই দাবি তুলছে কেবলমাত্র পরিষ্কারভাবে ছাত্রদের দল এনসিপি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তারা তুলেছে পরিষ্কারভাবে। কিন্তু বিএনপি এবং জামায়াত এই প্রসঙ্গে এখনো পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দেয় নাই। আমি ছাত্রদের দলের উদ্দেশে বলব যে, সারা দেশের মানুষের মধ্যে যদি ঐক্য না হয়, তাহলে এমন কোনো দাবি বাস্তবায়ন করা কঠিন।
তিনি রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা একসঙ্গে বসেন, আপনারা সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা এই ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে পারব না। এটা করতে গিয়ে যদি আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কাজেই আমার আহ্বান হচ্ছে, বড় দল হিসেবে বিএনপির প্রতি, আপনারা নেতৃত্ব দেন। আপনারা আহ্বান করুন, এই তরুণ ছেলেদের জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ছোটখাটো দল যারা আছে, যারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাইরে যারা আছে, তাদের সঙ্গে বসেন এবং যে বিতর্ক চলছে, এটার একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান আপনারা বের করুন। কারণ, অনেকগুলো সমাধান হতে পারে। রাস্তাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছি, কোনটা নেওয়া হবে, সেটা রাজনীতিবিদরা ঠিক করবেন। সেটার দায়িত্ব আমাদের না। আমাদের কাজ পথ দেখিয়ে দেওয়া। রাজনীতিবিদরা ইউনাইটেড হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। উৎস: যুগান্তর।