ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ভুলভাবে উপস্থাপন করে সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর শিরোনাম করা হয়েছে; যাতে জনমনে ভুল বার্তা যায়।
গণমাধ্যমে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশের বিষয়টি নজরে এনেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহর একটি স্ট্যাটাস নিজের ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন।একই পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহর পোস্টটি ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাল ওই পোস্টে সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মোদির বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ট্রাম্প যা বলেছে, সেটাকে কয়েকটা মিডিয়া ভুল ভেবে প্রচার করছে। ডেইলি স্টার বাংলা ভার্সনে যেমন হেডিং দিয়েছে— ‘বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি: ট্রাম্প’
ডেইলি স্টারকে দেখাদেখি আরও কয়েকটা মিডিয়াও একই টাইপ মিসলিডিং শিরোনাম দিচ্ছে। তাদের এসব শিরোনাম দেখে এবং নিউজ দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্প যেন মোদিকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশ ইস্যু ডিল করার জন্য।
তিনি বলেন, আপনারা যারা এ নিউজটা করবেন, খুব মনোযোগ দিয়ে অনলাইন থেকে ওই ভিডিওটা দেখবেন। ইংলিশের ওপর মোটামুটি লেভেলের দক্ষতা থাকলেই বুঝবেন সেখানে কোন প্রেক্ষাপটে এবং কীভাবে কনভারসেশন চলছিল।
ট্রাম্পকে এক ইন্ডিয়ান সাংবাদিক যে প্রশ্নটা করেছিল, তার সামারি হলো— বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশে রেজিম চেঞ্জ (হাসিনার পতন) ইস্যুতে আমেরিকার ডিপ স্টেটের ভূমিকা আছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? উত্তরে ট্রাম্প বলেছে— না, আমেরিকার ডিপস্টেটের কোনই ভূমিকা নাই। এবং তারপর চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে মোদির দিকে ইঙ্গিত করে (যেহেতু ইন্ডিয়ান সাংবাদিক মনগড়া তত্ত্ব প্রচার করতে চাচ্ছিল, তাই ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকে রেফার করে দিয়ে) ট্রাম্প বলেছেন বাংলাদেশ ইস্যুতে ওই প্রশ্নের উত্তরটা মোদির ওপর ছেড়ে দিলাম! মানে, বাংলাদেশ সংক্রান্ত ওই প্রশ্নটার উত্তর মোদিকে দিতে বলেছিলেন ট্রাম্প। এই হলো ঘটনার সামারি।
শিরোনামের সমালোচনা করে সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ বলেন, চিন্তা করেন যারা এই হেডলাইন করছে যে– বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি, তারা ঠিক কী বুঝে এই শিরোনাম করছে? অন্যদের কথা বাদ। ডেইলি স্টার ইংলিশ টু বাংলা অনুবাদ পারে না— এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে জনগণকে ম্যানিপুলেট কেন করতে চান আপনারা? আর অন্য যেসব মিডিয়া এই টাইপ কাজ করতেছেন, জাস্ট ধুপধাপ কপি-পেস্ট না করে একটু কনভারসেশনটা শুনে আসুন। শুনে তারপর খবর প্রকাশ করুন।
তিনি আরও বলেন, এখন কিন্তু আর ওই যুগ নাই যে, যেমন খুশি তেমন মিসইন্টারপ্রেট করে জনগণকে যা গেলাইতে চাইবেন, জনগণ সেটাই গিলবে! অনেক সুযোগসন্ধানী লোকজন আছেন, যারা এই খবরটা ম্যানিপুলেট করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করবে।
দেশপ্রেমিক সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা সত্যটা প্রচার করুন এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে সবার কাছে প্রকৃত সত্যটা উপস্থাপন করুন। এতে করে যারা মিসলিডিং শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে সবাই সচেতন থাকতে পারবে।
ট্রাম্পের বক্তব্যের বিভ্রান্তিকর শিরোনামের সমালোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব সাংবাদিক মারুফ কামাল খানও। ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কী বলেছিলেন তা তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
‘বুঝেন অ্যালায়’ শিরোনামে মারুফ কামাল লেখেন, ‘নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে আমেরিকার ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। বরং মোদি বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছেন। আমি তো পড়েছি শত শত বছর ধরে কাজ চলছে। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাপারে জবাব দেওয়ার দায়িত্ব আমি মোদির হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের ভুল অনুবাদ করা হয়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস উইংয়ে মিনিস্টার (প্রেস) সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা বলেন, ‘But I will leave Bangladesh to the Prime Minister.’ ট্রাম্পের বক্তব্যের এই লাইনটির অনুবাদ অনেকে করছে এভাবে যে, ‘বাংলাদেশের বিষয় মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি’।এটা শতভাগ ভুল অনুবাদ।এমন কাজ কেউ করেছেন না বুঝে সরলভাবে, কেউ করেছেন উদ্দেশমূলকভাবে। দ্য ডেইলি স্টার বাংলারও প্রথম অনুবাদ ভুল ছিল।ভালো যে, পরবর্তীতে তারা সংশোধন করেছে।
তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে এই বাক্যটি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এই প্রশ্নটি আমি মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। মানে এই প্রশ্নের উত্তর তিনি মোদিকে দিতে বলেছেন। এবং মোদি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। ট্রাম্প বাংলাদেশকে মোদির হাতে ছেড়ে দেন নাই।
আপনার মতামত লিখুন :