মনিরুল ইসলাম: প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কার প্রয়োজন, যাতে সংবাদপত্রগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৫ বছর গণমাধ্যমকে ভয়ানকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে, জঙ্গি নাটক তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয় থেকে একটি ফোন কলের মাধ্যমেই সংবাদমাধ্যমকে প্রভাবিত করা হতো। এমনকি আইসিটি আইনের অপব্যবহার করে সাংবাদিকদের প্রতি ভয়াবহ অন্যায় করা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’-এর ব্যানারে ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের কপিরাইট ইনফোর্সমেন্ট খুবই জরুরি। এ বিষয়ে সব সাংবাদিকদের জোরালো কথা বলতে হবে। আপনি দুই মাস খেটে একটা নিউজ করলেন, সেটি অন্য কোনও নিউজ পোর্টাল এক সেকেন্ডে কপি করে ফেললো। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটা ছবি তুললেন, সেটি একটা বড় পত্রিকায় আপনার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করে ফেললো। আপনাকে কপিরাইট ইনফোর্সমেন্ট দিতে হবে। কারণ এটি আপনার আয়ের উৎস।
যারা সংবাদ চুরি করে সংবাদমাধ্যম চালান, তাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন শফিকুল আলম। বলেন, এডিটর্স কাউন্সিল অনেক কথা বলে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি অনেক কথা বলে, নোয়াব অনেক কথা বলে; এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত যারা এরকম চুরি করছে, তাদের বন্ধ করে দেওয়া। এই চুরি করার কারণে আপনার-আমার বেতনটা কমে যাচ্ছে। কপিরাইট ইনফোর্সমেন্ট আমাদের দেশে নাই বলে সবাই চুরি করে।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা করতে হলে আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। আপনাকে সাংবাদিকদের বেতন দিতে হবে। জার্নালিস্টদের রক্ত এত সহজ না। জার্নালিস্টদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সত্যিকার অর্থে এই বিষয়টি দেখা উচিত।
প্রেস সচিব বলেন, আমাদের গার্মেন্ট সেক্টরের কর্মীরা যদি তাদের বেতনের জন্য এত বড় ফাইট করতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না। আপনি যে সংবাদমাধ্যমই চালান না কেন, সেখানে আপনাকে ভালো সাংবাদিক রাখতে হবে এবং মিনিমাম মজুরি দিতে হবে।
পরে আলোচনা সভা থেকে ১৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো,
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ; গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারত্ব প্রতিষ্ঠা; সরকারি নিয়ন্ত্রণ রোধে স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন; মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ; সাংবাদিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাকরির নিরাপত্তা; বেতন কাঠামোর সংস্কার; সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংস্কার; সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন; বাজেটে গণমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রাখা; গণমাধ্যম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ; আঞ্চলিক ও বিকল্প গণমাধ্যমের উন্নয়ন; তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
আপনার মতামত লিখুন :