শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:১৬ রাত
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতে যদি গদি সাংবাদিক হয়, বাংলাদেশে তেলবাজি সাংবাদিক: মতিউর রহমান চৌধুরী (ভিডিও)

দেশে সরকার বদলালে ইতিহাসও বদলে যায় উল্লেখ করে মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কার হওয়া উচিত ইতিহাসের। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসটাই ঠিক নেই। আমরা এখনো জানি না আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে মতিউর রহমান বলেন, রাজনৈতিক সরকার বাস্তবায়ন না করলে গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়টা অর্থহীন হয়ে যাবে। আপনি (কামাল আহমেদ) বাস্তবায়ন করে যেতে পারবেন না। আমরা কী সাংবাদিকতা করবো? এই অবস্থায় আমি তো সাংবাদিকতা দেখি না। 

স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা গড়তে প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিরা। পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেছেন তারা। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ-গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় ও দিকনির্দেশনা নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিজিএসের চেয়ারপারসন মুনিরা খানের সভাপতিত্বে সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

সংস্কার শুনলেই ভয় লাগে মন্তব্য করে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক বলেন, ১৯৭৫ সালে সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র ৪টি পত্রিকা রাখা হয়েছিল। এর বাকগ্রাউন্ড স্টোরিটা সবাই জানে। তিনজন সিনিয়র সাংবাদিক ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। যারা পত্রিকা বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশের সংস্কার কমিশনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনারের সামনে বসে আমি এই কথাটা বলছি এই কারণে, আমি ভীত। এই ধরনের ঘটনা আবার ঘটে কিনা। কারণ আমি নিজেই বেকার হয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমি ৩ বার চাকরি হারিয়েছি। জেলে গিয়েছি ৪ বার। কোনো সরকারের আমলেই আমি ভালো ছিলাম না। খালেদার জিয়ার আমলেও জেলে গিয়েছি, বঙ্গবন্ধুর আমলেও চাকরি হারিয়েছি। হাসিনার আমলে ৮ মাস দেশের বাইরে ছিলাম। বিপ্লবের (৫ই আগস্ট) তিন দিন আগে আমাকে প্লেনে তুলে দেয়া হয়েছে। এরশাদের আমলে আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আমার গাড়িটা মির্জাপুরে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দিয়ে, তার ওপর নৃত্য করা হয়েছিল। কারণ আমি লিখেছিলাম দুর্নীতিপরায়ণদের উল্লাসের নৃত্য। এজন্য এরশাদ সাহেব জীবিত থাকা অবস্থায় আমি কলাম লিখে ওনার কাছে মাফ চেয়েছি, লিখেছি স্যার ক্ষমা করবেন। ওটা দুর্নীতি ওইভাবে ছিল না। কারণ দুর্নীতি হয়েছে নস্যি। এর পরের দুর্নীতির ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন। সেই কারণে আমি খুব চিন্তিত যে, কামাল আহমেদ আমাদের বন্ধু, তিনি কী সাজেশন দেন, আবার আমরা অন্ধকার যুগে ফিরে যাই কিনা।

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, যাইহোক আমি আশাবাদী এই কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির সামনে বলেছেন, আপনারা লিখুন। কিন্তু আমরা কি লিখতে পারছি? ওনার প্রশাসন কি এসে বলছে আপনি লিখেন না? সেলফ সেন্সরশিপে আমরা একদম কাবু হয়ে পড়েছি। এখান থেকে বের হতে পারছি না। বের হতে না পারলে আজকের দিনে এই যাত্রাটা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। এখানে আমরা সবাই যার যার মতো বলবো। সত্য বলবো না, মিথ্যা কথাই বলে যাবো। আড়ালে-আবডালে আমরা যেভাবে বলি সেভাবেই বলবো। বরং সিজিএসকে আমি রিকুয়েস্ট করবো- আপনারা পল্টনে, সোহরাওয়ার্দীতে অথবা প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠান করেন। সাধারণ মানুষ সাংবাদিক সম্পর্কে কী বলে ওটা শুনেন।

তিনি বলেন, ভারতে যদি গদি সাংবাদিক হয়, বাংলাদেশে তাহলে তেলবাজি সাংবাদিক। এই ডেফিনেশন হওয়া উচিত। আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। লিখলেই সব বন্ধ হয়ে যাবে এটা ঠিক না। আমি তো দেখেছি। ঝামেলা হয় ঠিক, জেলে যেতে হয়েছে ঠিক। কিন্তু আপনি দেখেন বঙ্গবন্ধুর জমানায় কথায় কথায় চাকরি যেতো। আমিও একজন ভিক্টিম। ১৭ই মার্চ জাসদ স্বরাষ্টমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করেছিল। এই জেনারেশনের অনেকেই জানেন না। সেই রিপোর্ট লিখে আমি বাংলার বাণী থেকে চাকরি হারিয়েছিলাম। আমার কোনো দোষ ছিল না। রিপোর্ট লিখেছিলাম আমি। নিউজ এডিটরের চাকরি যায়নি, চিফ রিপোর্টারেরও চাকরি যায়নি, মাঝখান দিয়ে আমার চাকরিটা চলে যায়। কেউ চাকরিও দিতে চায়নি। 

মতিউর রহমান বলেন, আমি ক্যাসেট কেলেঙ্কারির রিপোর্টটা করেছিলাম। আমাকে একজন সিনিয়র সাংবাদিক বললেন, এবার ধরা খাবেন। কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে। নিঃশর্তভাবে বলতে হবে, ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমি হেসেছিলাম, কারণ আমার হাতে ক্যাসেট ছিল। আদালতে প্রমাণ করেছি এবং এটা সত্য ঘটনা। তারপরও আমার একমাসের জেল হয়ে আছে। বাইশ বছর যাবত উচ্চ আদালতে মামলাটা ঝুলে আছে। এই হলো বাংলাদেশ। বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরী ১১ বছর কোথায় ছিলেন, সেই রিপোর্ট করার কারণে আমাকে প্রেস ক্লাবে একজন বললেন, ভাই এটা বোধহয় ঠিক হলো না। একটা বড় পত্রিকা তিন দিন পর ওই রিপোর্ট নিয়ে পুলিশের বরাত দিয়ে বললো রিপোর্টটা সত্য না। পরবর্তীতে প্রমাণিত হলো, ওই রিপোর্টটা সত্য ছিল। উনি প্রফেসর মাহমুদুর রহমান, যিনি হারিস চৌধুরী নামে মারা গেছেন। হারিস চৌধুরীর লাশ এটা প্রমাণিত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়