শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:৫৪ রাত
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারাগারে চিন্ময়ের পূজা! ভুয়া ছবিতে গুজব প্রচার

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস চট্টগ্রামের কারাগারে পূজা করছে দাবিতে সম্পাদিত ছবি প্রচার

রিউমার স্ক্যানার প্রতিবেদন: বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ছবি দাবি করে তিনি কারাগারে পূজা করছেন এমন গুজব প্রচার করা হচ্ছে ইন্টারনেটে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়েছে এ সচিত্র গুজব। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের চট্টগ্রামের কারাগারে পূজা করার নয় বরং তার পূর্বের একটি ছবিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করার মাধ্যমে ভুয়া ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। 

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৯ নভেম্বর তারিখের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের একটি ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে। ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ছবিটির উপর কারাগারের ধাতব শিক প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।  

বাংলাদেশে মেয়েদের বাজারে যাওয়া নিষেধ, ফতোয়া জারির ভুল তথ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে
সম্প্রতি, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গায় মেয়েদের বাজারে যাওয়া নিষেধ জানিয়ে ফতোয়া জারি হয়েছে শীর্ষক দাবি করেছেন বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি গত ০৫ ডিসেম্বর তার ফেসবুক পেজ এবং এক্স অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে এই দাবি করেন। ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনও গত ৩ ডিসেম্বর ফেসবুকে একই ভিডিওর মাধ্যমে এই দাবি তুলেছেন। ভারতের একাধিক গণমাধ্যমেও একই ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। আজতক বাংলা (ইউটিউব), রিপাবলিক বাংলা (ইউটিউব), টিভি৯ বাংলা (ইউটিউব), জি২৪ ঘন্টা (ইউটিউব), ক্যালকাটা নিউজ (ইউটিউব), আর প্লাস (ইউটিউব), নিউজ এক্সে এ গুজব প্রচার করা হচ্ছে।

রিপাবলিক বাংলা’য় কলকাতার একজন গবেষক মৌমিতা চক্রবর্তীও একই দাবিতে করা মন্তব্য বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছেন। দাবিটি এক্সেও ব্যাপকভাবে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গায় মেয়েদের বাজারে যাওয়ায় নিষেধ জানিয়ে ফতোয়া জারির দাবিটি সঠিক নয় বরং, গওহরডাঙ্গা মাদরাসার ৮৯তম মাহফিলে অস্থায়ী দোকানপাটে মহিলা প্রবেশ প্রসঙ্গে মাইকিংয়ের একটি ভিডিওর খন্ডিত অংশ দিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, এই মাহফিলে প্রতি বছরই এমন রীতি পালন হয়ে আসছে। 

রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছে। তারা ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত দাবিকে অসত্য বলে জানিয়েছেন।

সুতরাং, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মাহফিলে অস্থায়ী দোকানপাটে মহিলা প্রবেশ প্রসঙ্গে মাইকিংয়ের একটি ভিডিওর খন্ডিত অংশ দিয়ে বাংলাদেশে মেয়েদের বাজারে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে ফতোয়া জারি শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

ভারতের ঘটনাকে বাংলাদেশে ইসকনের খামারে হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার
বাংলাদেশে ইসকনের গরুর খামারে আক্রমণের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসকনের গরুর খামারে চার যুবক কর্তৃক গরুর ওপর হামলার দৃশ্যটি বাংলাদেশের নয় বরং, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের পাঞ্জাবের একটি গরুর খামারে হামলার পুরোনো দৃশ্য।

অনুসন্ধানে ভিনয় কাপুর  নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৪ নভেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে। ভারতের জলন্ধর জমশেদ ডেইরিতে কিছু লোক দ্বারা গরুটিকে বাজেভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ভিডিওটি পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো হয়েছে এবং পুলিশ প্রশানকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যাতে এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পোস্টে তিনি নিজেকে শ্রী গোবিন্দ গরু প্রতিরক্ষা দলের সভাপতি ও সর্বভারতীয় শিবসেনা রাষ্ট্রবাদির পাঞ্জাবের সভাপতি দাবি করেন। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গরুর ওপর যুবকদের হামলার দৃশ্যটি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের জলন্ধর শহরে জমশেদ ডেইরির। বাংলাদেশে কোনো ইসকনের খামারের নয়। এছাড়া, ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ট্রিবিউনের ওয়েবসাইট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দাবিতে সুদানের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভারতে মুসলিম নির্যাতনের কোনো ঘটনার নয় বরং, সুদানের ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওকে উক্ত দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। আলোচিত দাবিটি যাচাইয়ে সুদান ভিত্তিক গণমাধ্যম সুদান ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর সুদানের আল-জাজিরা রাজ্যের আল- কামেলিন এলাকার একটি শহরে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) আক্রমণ করলে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং অন্তত ২০০ জন আহত হয়। এ সময় আরএসএফ এর একজন সদস্য একজন বৃদ্ধকে দাঁড়ি ধরে টান দেন।

সুদান ভিত্তিক গণমাধ্যম ডাবাঙ্গাসুদান এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

সুতরাং, ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দাবিতে সুদানের ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

হিন্দু চিকিৎসকের ফার্মেসি ভাঙচুরের রাজনৈতিক ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি বাংলাদেশের এক হিন্দু চিকিৎসকের ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার। এই ঘটনার ভিডিওর ক্যাপশনে বাংলাদেশের হিন্দুদের বাঁচানো সংক্রান্ত হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দু চিকিৎসকের ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাটের এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো সাম্প্রদায়িক কারণে সংঘটিত হামলার নয় বরং, গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক হামলার ভিডিও এটি।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে গত ০৭ আগস্ট সনাতন টিভি নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওতে উল্লিখিত তথ্য থেকে জানা যায়, সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক হামলার ঘটনার দৃশ্য এটি। উক্ত ভিডিওটিতে থাকা ব্যক্তির নাম ডাক্তার পরেশ চন্দ্র দাশ। ঘটনার স্থান সিলেট জেলা বিশ্বনাথ উপজেলা ০৪ নং রামপাশা ইউনিয়ন বৈরাগী বাজার।

পরবর্তী অনুসন্ধানে ‘জাগো হিন্দু পরিষদ চট্টগ্রাম’ ও ‘সনাতনী মিডিয়া ফটিকছড়ি’ সহ একাধিক ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্টে গত ০৭ আগস্ট আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে প্রকাশিত একাধিক পোস্ট (১, ২) খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়াও, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে গত ১৪ অক্টোবর একই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, গত ০৫ আগস্ট বিএনপির সন্ত্রাসীরা স্লোগান দিতে দিতে সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পার্থ দাস পাপ্পুর পরেশ চন্দ্র দাসের প্রতিষ্ঠিত ফার্মেসি জয়শ্রী মেডিকেল হল পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট করে ধ্বংস করে দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা নগদ অর্থ ও ফার্নিচারসহ আর্থিক প্রায় ২০ থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।

অর্থাৎ, পরেশ চন্দ্র দাসের ছেলে পার্থ দাস পাপ্পু ছাত্রলীগের উক্ত উপজেলার সাবেক সভাপতি বিধায় ধর্মীয় কারণে নয় বরং রাজনৈতিক কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়।

সুতরাং, গত আগস্টে রাজনৈতিক কারণে এক হিন্দু চিকিৎসকের ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাটের ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের সাম্প্রদায়িক হামলা দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়