বন্ধুরা মিলে বেড়াতে যাবেন। পরিকল্পনার সময় সবার মতো আপনিও নিজের মতামত জানালেন। কিন্তু পরে মনে হতে থাকল, আপনার কথাটি অন্যরা খুব একটা আমলে নেননি। পরিবারের কোনো সিদ্ধান্তের বেলায়ও বারবার মত জানানোর চেষ্টা করেও আপনার মনে হতে থাকে, কেউ-ই তা গুরুত্ব দিয়ে শুনছে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র অথবা ব্যক্তিগত জীবনে এমন মুহূর্তের সম্মুখীন হই আমরা অনেকেই। ফলে মনে দানা বাঁধে হতাশা ও হীনম্মন্যতা। কেন এমন হয়? আদতে আপনার কিছু আচরণের কারণেই অন্যের কাছে আপনি কম বিশ্বাসযোগ্য হয়ে পড়েন। এসব আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকলে নিজেকে অন্যের সামনে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। পাশাপাশি আপনার যোগাযোগদক্ষতাও বাড়বে। জেনে নিন সেসবই।
১. বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নয়: কেউ কেউ বেশির ভাগ সময় বিভ্রান্তিতে থাকেন। এই বিভ্রান্তির কারণে বারবার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এতে আশপাশের মানুষ তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাই উচিত হবে ভেবেচিন্তে যেকোনো সিদ্ধান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে নেওয়া এবং স্পষ্টভাবে তা প্রকাশ করা।
২. সঠিক দক্ষতা অথবা জ্ঞানের অভাব: কোনো বিষয়ে জ্ঞান অথবা দক্ষতার অভাব থাকতেই পারে। এমন বিষয়ে মতামত দেওয়ার আগে খুব ভালোভাবে জেনে নিন, নিজে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে তবেই অন্যদের সামনে আলোচনা করুন। এতে আলোচনার সময় অন্যরা বুঝতে পারবেন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনি সবিস্তার জানেন।
৩. নিষ্ক্রিয় থাকা: এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কোনো বিষয়েই মতামত দিতে চান না। কোনো বিষয়ে মতামত চাইলেও তাঁরা বলেন, বাকিরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতেই তাঁরা রাজি। কেউ যখন দেখে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত অথবা চিন্তাভাবনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারছেন না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কাছে আপনার গুরুত্ব কমে যায়। ফলে অন্যরা আপনাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তাই সব সময় নিষ্ক্রিয় না থেকে নিজের মতামত প্রকাশ করতে চেষ্টা করুন।
৪. শরীরী ভাষা: আমরা যখন কারও সঙ্গে কথা বলি, তখন আমাদের ব্যবহৃত বাক্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় শরীরী ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজ। কথা বলার সময় আমরা আত্মবিশ্বাসী না হলে আমাদের অঙ্গভঙ্গি, দেহভঙ্গি, হাবভাব, মাথার নড়াচড়া, চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা ইত্যাদি দেখে খুব সহজেই তা বোঝা যায়। এসব ছোট ছোট বিষয় যেমন আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারে, তেমনি ভেঙেও দিতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ব্যাখ্যা করা: অনেক সময় আমরা যখন মনে করি কেউ আমাদের বুঝতে পারছে না। তখন আমরা অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দিতে শুরু করি। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত ব্যাখ্যার ফলে আপনাকে আপনার ধারণা সম্পর্কে বিভ্রান্ত মনে হতে পারে। তাই সংক্ষিপ্তভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনার মতামত প্রকাশ করুন।
৬. অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া: কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া আপনার দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারে। কোনো বিষয়ে আপনি ভুল করে থাকলে উপযুক্ত সময়ে ক্ষমা চেয়ে নিন। ক্রমাগত ‘সরি’ বলার ফলে অন্যরা আপনার প্রতি সন্দিহান হতে পারে, শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলতে পারে।
৭. আত্মবিশ্বাসের অভাব : অন্যরা আপনাকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার আত্মবিশ্বাসের ওপর। আপনি নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় থাকলে অন্যরাও আপনার ওপর ভরসা করতে পারবেন না। আত্মবিশ্বাসীদের প্রতি মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হন। আপনার কাজ, কথা বলার ধরন এবং শরীরী ভাষাতে ধরা দেবে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী। সূত্র: দ্য ইকোনোমিক টাইমস