পার্সটুডে- আল্লাহ দেয়া বরকতময় প্রকৃতির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য বা যত্নশীল হতে কুরআনে তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রকৃতির সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত সে ব্যাপারে মানুষের জন্য নিকনির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে।
পবিত্র কুরআনে, আল্লাহ মানুষকে "আল্লাহর প্রতিনিধি" হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন (আল-বাকারা: ৩০), তাই মানুষের এই মর্যাদা প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং এর প্রতি সম্মান দেখানো দায়িত্ব হয়ে পড়ে। ইসলাম ধর্মে পরিবেশের প্রতি গভীর ও শ্রদ্ধাশীল হতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভূমি, পানি, বায়ু, প্রাণী এবং উদ্ভিদজগত। পার্সটুডে প্রবন্ধে এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
পবিত্র কুরআন প্রকৃতিকে "আল্লাহর আয়াত"-এর ভাণ্ডার বলে মনে করে যেগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা ঈমানের পরিচায়ক।
"নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃজনে, রাত দিনের একটানা আবর্তনে, সেই সব নৌযানে যা মানুষের উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগরে বয়ে চলে, সেই পানিতে যা আল্লাহ আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন এবং তার মাধ্যমে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করেছেন ও তাতে সর্বপ্রকার জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং বায়ুর দিক পরিবর্তনে এবং সেই মেঘমালাতে যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে আজ্ঞাবহ হয়ে সেবায় নিয়োজিত আছে, বহু নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য যারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।" (আল-বাক্বারাহ: ১৬৪)।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায়, ফখর আল-রাযী "আল-তাফসির আল-কবীর" (খণ্ড ৩, পৃ. ১২৩) তে জোর দিয়ে বলেছেন যে প্রকৃতি ধ্বংস করার অর্থ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে উপেক্ষা করা।
একইভাবে কুরআন প্রাণীদেরও "মানুষের মতো জাতি" হিসেবেও পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছে, "ভূপৃষ্ঠে যত জীব বিচরণ করে, যত পাখি তাদের ডানার সাহায্যে উড়ে, তারা সকলে তোমাদেরই মত সৃষ্টির বিভিন্ন প্রকার। (আল-আন'আম: ৩৮)। আল্লামা তাবাতাবাই, "আল-মিজান" (খণ্ড ৭, পৃ. ৮৭) এর তার ব্যাখ্যায়, এই আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে বলেছেন যে মানুষের মতো প্রাণীদেরও একই অধিকার রয়েছে।
এছাড়াও, মহানবী (সা.) এবং আহলে বাইতের ইমামদের (আ.) বর্ণনায় প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ঈমানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:
- প্রাণী: নবী (সা.) থেকে বর্ণিত একটি সহীহ হাদিসে বলা হয়েছে: "যে ব্যক্তি বিনা কারণে চড়ুই পাখি হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সেই চড়ুই পাখি তাকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে এবং বলবে: হে আমার প্রতিপালক! অমুক আমাকে বিনা কারণে মেরেছে, কোনও কাজে নয়"।(কানযুল-আম্মাল: ৩৯৯৭১)
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন: “তোমাদের উপর পশুর অধিকার হল যে, তুমি তাকে তার ক্ষমতার চেয়ে বেশি বহন করতে বাধ্য করবে না” (আল-কাফী, খণ্ড ৫, পৃ. ৫৬)।
- গাছ: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে কেউ অযথা গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনে নিক্ষেপ করবেন।" (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ২, পৃ. ৩৮৭)।
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, যখন কিয়ামত আসবে এবং তোমাদের কারো হাতে একটি চারা থাকবে, তখন সে যেন তা রোপণ করে।(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৩, পৃ. ১৯১)।
- পানি: ইসলামী আইনশাস্ত্রে, এমনকি অজুর সময়ও পানির অপচয় করা নিষিদ্ধ। ইমাম আলী (আ.) পানির অপচয়ের নিন্দা করে মালিক আশতারের কাছে চিঠি লেখেন। (নাহজ আল-বালাগেহ, চিঠি ৫৩)।
মহান ইসলামী চিন্তাবিদরাও তাদের গবেষণায় প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উপর জোর দিয়েছেন:
- শেখ মুফিদ "আল-মাকনা'আহ" (পৃষ্ঠা ২৩৪) তে বিনা কারণে পশু হত্যা নিষিদ্ধ বলে মনে করেন।
- ইবনে তাইমিয়া "মাজমু' আল-ফাতাওয়ি" (খণ্ড ২, পৃ. ৪৫৭) -এ বলেছেন: "গাছ ধ্বংস এবং পানি দূষণ জনসাধারণের অধিকারের উপর জুলুম।"
সাহেব জাওয়াহের তার - "জাওয়াহের আল-কালাম" (খণ্ড ২১, পৃ. ৬৩) -পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে পশুদের অধিকারকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
কুরআনের আয়াত, হাদিস এবং মুসলিম চিন্তাবিদদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলাম পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির প্রতি কর্তব্য পালনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবেশ "আল্লাহ আমানত" এবং এটি ধ্বংস করা আল্লাহর আমানতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। অতএব, আল্লাহ প্রকৃতির প্রতি শুধু শ্রদ্ধাই নয় বরং ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা বলে মনে করেন।