শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:৪৯ দুপুর
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:০৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শাবান মাসের আমল ও গুরুত্ব

হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে পবিত্র রমজান মাসের আগের মাস শাবান। রমজান মাসের প্রস্তুতিকাল হিসেবে শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী (সা.) এই মাসে অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন। তাতে বরকত লাভের দোয়া করতেন।

নিম্নে শাবান মাসে মহানবী (সা.)-এর আমলগুলো তুলে ধরা হলো—

শাবান মাসে ইবাদতের গুরুত্ব

আল্লাহর ইবাদত ও ক্ষমা লাভের জন্য শাবান গুরুত্বপূর্ণ মাস। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল ও নির্দেশনা দ্বারা তা প্রমাণিত। যেমন—

১. মধ্য শাবানের রাতে ক্ষমার ঘোষণা : শাবান মাসে আছে আল্লাহর ক্ষমা লাভের বিশেষ সুযোগ। কেননা হাদিসে এসেছে, অর্ধশাবানের রাতে আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করেন।

আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন (দয়ার প্রকাশ করেন) এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সবাইকে ক্ষমা করেন। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৯০)

২. নবীজি (সা.)-এর তাগিদ : মহানবী (সা.) শাবান মাসে রোজা রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি তিনি এর প্রতিবিধানের নির্দেশ দিয়েছেন। ইমরান ইবনুল হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শাবানের শেষ দিকে রোজা রেখেছ? সে বলল, না।

তিনি বললেন, যখন তুমি রোজা রাখোনি, তখন (রমজানের শেষে) এক দিন বা দুই দিন রোজা রাখবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৮)

ফকিহ আলেমরা বলেন, এই হাদিস দ্বারা শাবান মাসের রোজার গুরুত্ব বোঝানো উদ্দেশ্য।

নবীজি (সা.)-এর আমল

শাবান মাসে মহানবী (সা.)-এর আমলগুলো হচ্ছে—

১. উম্মতকে সতর্ক করা : মহানবী (সা.) শাবান মাসে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। যেন তারা এ মাসের ব্যাপারে উদাসীন না থাকে এবং সময়গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগায়। আর নিজেকে মহিমান্বিত রোজার জন্য প্রস্তুত করে।

উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি, বছরের অন্য কোনো মাসে সে পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি না। তিনি বললেন, শাবান মাস রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যে মাসের (গুরুত্ব সম্পর্কে) মানুষ খবর রাখে না, অথচ এ মাসে আমলনামাগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে আমার আমলনামা আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তোলন করা হবে আমার রোজা পালনরত অবস্থায়।

(সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)

২. বরকতের দোয়া করা : শাবান মাসের আগের মাস তথা রজব মাস থেকে আল্লাহর বরকত ও রমজান লাভের দোয়া করতেন। আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রজব মাস প্রবেশ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদেরকে রজমান মাসে পৌঁছে দিন। ’

(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৩৬৯)

৩. হিসাব সংরক্ষণ করা : মহানবী (সা.) অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শাবান মাসের হিসাব সংরক্ষণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের হিসাব যতটা গুরুত্বসহ রাখতেন অন্য কোনো মাসের হিসাব ততটা গুরুত্ব দিয়ে রাখতেন না। অতঃপর তিনি রমজানের চাঁদ দেখেই রোজা রাখতেন। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। এরপর রোজা রাখতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

৪. বেশি পরিমাণ রোজা রাখা : মহানবী (সা.) রমজান মাসের পর শাবান মাসেই সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। ’

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না এবং তিনি পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৯)

৫. ইবাদতের প্রিয় মাস : রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে ইবাদত করতে অধিক পছন্দ করতেন, বিশেষ করে এই মাসে রোজা রাখা ছিল তাঁর প্রিয় আমল। আবদুল্লাহ ইবনে আবু কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে মাসগুলোর মধ্যে শাবান মাসের রোজা পালন করা সর্বাধিক পছন্দনীয় ছিল, বরং তিনি শাবান মাসকে (রোজা পালনসহ) রমজানের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫০)

ব্যাখ্যাকারীরা বলেন, রমজানের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন দ্বারা উদ্দেশ্য দোয়া, ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে মিলিয়ে নেওয়া। অর্থাৎ উভয় মাসে অধিক ইবাদত করা।

শাবান মাসের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কারণ

শাবান মাসের প্রতি মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণ যত্নশীল ছিলেন। তাত্ত্বিক আলেমরা এর কয়েকটি কারণ বর্ণনা করেন। তাহলো—

১. আল্লাহর কাছে আমলনামা যাওয়া : শাবান মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। তাই মহানবী (সা.) নিজে আমল করার মাধ্যমে উম্মতকে এই মাসের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমনটি হাদিসে এসেছে, ‘এ মাসে আমলনামাগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে আমার আমলনামা আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তোলন করা হবে আমার রোজা পালনরত অবস্থায়। ’

(সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)

২. উদাসীনতার সময় : শাবানের পূর্ব মাস রজব, যা হারাম মাসের অন্তর্ভুক্ত। আর পরের মাস রমজান, যা রোজা ও ইবাদতের মাস। তাই মধ্যবর্তীয় শাবান মাসের প্রতি মানুষের উদাসীনতা কাজ করে। ইসলামের ঘোষণা হলো, ‘ব্যাপক গণহত্যার সময়ে (যখন ইবাদতের প্রতি মানুষের মনোযোগ থাকে না) ইবাদত করা আমার কাছে হিজরতের সমতুল্য। ’

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২০১)

৩. রমজানের প্রস্তুতি : হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে শাবান মাসের হিসাব রাখতেন আর রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজা শুরু করতেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, শাবান মাসে অধিক ইবাদতের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিজেকে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুত করা।

মহান আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি এবং মহিমান্বিত রমজান লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়