শিরোনাম
◈ পাঁচ সংস্কার কমিটির প্রধান ও সদস্যরা যেসব সুবিধা পাবেন  ◈ এ ধরনের স্টেটমেন্ট দেওয়া ভারতের অনধিকার চর্চা: উপদেষ্টা নাহিদ ◈ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে ◈ আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশ কোনো ষড়যন্ত্রের সামনে পরাস্ত হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ◈ জাসপ্রিত বুমরাহ টেস্ট ক্রিকেটে সেরা বোলার, ওয়ানডেতে রশিদ খান ◈ বিচারপতিকে যে কারনে ডিম মেরে এজলাস থেকে নামালো আইনজীবীরা (ভিডিও) ◈ মুস্তাফিজদের নিয়ে চেন্নাইয় সুপার কিংসের বার্তা ◈ বিশ্বের যেসব দেশে ‘ইসকন’ নিষিদ্ধ ◈ মনগড়া বক্তব্যে রয়টার্সের প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩২ বিকাল
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘হে বৎস’ তুমি এখনই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছ, শিগগির তুমি পরীক্ষায় পড়বে’

সত্য প্রতিষ্ঠায় যুবকদের অবদান দিবালোকের মতো ফুটে উঠেছে আসহাবুল উখদুদের ঐতিহাসিক ঘটনায়। ঘটনাটি হলো, বনি ইসরাঈলের এক ঈমানদার যুবক নিজের জীবন দিয়ে জাতিকে সত্যের পথ প্রদর্শন করে গেছেন। সুহাইব আর-রুমি (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে এ বিষয়ে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো, বহুকাল আগে এক রাজা ছিলেন, যার ছিল এক বৃদ্ধ জাদুকর।

তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য একজন বালককে তার কাছে জাদুবিদ্যা শেখার জন্য নিযুক্ত করা হয়। বালকটির নাম আবদুল্লাহ ইবনুস সামের। তার যাতায়াতের পথে একটি গির্জায় একজন পাদরি ছিলেন। বালকটি দৈনিক তার কাছে বসত।

পাদরির কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে সে মুসলমান (সেই সময়ের ধর্ম পালনকারী) হয়ে যায়। কিন্তু তা গোপন রাখে। একদিন যাতায়াতের পথে বড় একটি হিংস্র জন্তু রাস্তা আটকে রাখে। বালকটি মনে মনে বলল, আজ আমি দেখব, পাদরি শ্রেষ্ঠ না জাদুকর শ্রেষ্ঠ? সে তখন একটি পাথর হাতে নিয়ে বলল—‘হে আল্লাহ! পাদরির কর্ম জাদুকরের কর্ম থেকে আপনার কাছে বেশি পছন্দনীয় হলে এ জন্তুটিকে মেরে ফেলুন।

এই বলে সে পাথরটি নিক্ষেপ করল এবং ওই পাথরের আঘাতে জন্তুটি মারা পড়ল। অতঃপর এ খবর পাদরির কানে পৌঁছে গেল। তিনি বালকটিকে ডেকে বললেন, ‘হে বৎস’ তুমি এখনই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছ। শিগগির তুমি পরীক্ষায় পড়বে। যদি পড়ো, তবে আমার কথা প্রকাশ করে দিয়ো না।
বালকটির কারামত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার দোয়ায় জন্মান্ধ ব্যক্তি চক্ষুষ্মান হতে লাগল, কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি নিরাময় হতে লাগল এবং লোকজন অন্যান্য রোগ হতেও আরোগ্য লাভ করতে লাগল। ঘটনাক্রমে রাজার এক সভাসদ ওই সময় অন্ধ হয়ে যান। তিনি বহু মূল্যের উপঢৌকন নিয়ে বালকটির কাছে গমন করেন। বালকটি তাকে বলে, ‘আমি কাউকে রোগমুক্ত করি না। এটা শুধু আল্লাহ করেন। যদি আপনি আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। তাতে হয়তো তিনি আপনাকে আরোগ্য দান করবেন।’

মন্ত্রী ঈমান আনলে বালক দোয়া করল। অতঃপর তিনি দৃষ্টিশক্তি পেলেন। পরে রাজদরবারে গেলে রাজার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে আমার পালনকর্তা আমাকে সুস্থ করেছেন। রাজা বলেন, আমি ছাড়া তোমার রব আছে কি? মন্ত্রী বলেন, আমার ও আপনার উভয়ের রব আল্লাহ।

তখন রাজার হুকুমে তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে তিনি উক্ত বালকের নাম বলে দেন। বালককে ধরে এনে একই প্রশ্নের অভিন্ন জবাব পেয়ে তার ওপর চালানো হয় কঠোর নির্যাতন। ফলে এক পর্যায়ে সেও পাদরির কথা বলে দেয়। তখন পাদরিকে ধরে আনা হলে তিনিও একই জবাব দেন। রাজা তাদেরকে তাদের ধর্ম ত্যাগ করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। তখন পাদরি ও মন্ত্রীকে জীবন্ত অবস্থায় করাতে চিরে তাদের মাথাসহ দেহকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়।

অতঃপর একইভাবে বালকটিও দ্বিন পরিত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কিছু সৈন্যের সঙ্গে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় তুলে সেখান থেকে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আল্লার অশেষ রহমতে, পাহাড় কেঁপে ওঠে, এতে তার সঙ্গী-সাথিরা পাহাড়ের চূড়া হতে নিচে পড়ে মারা যায় এবং বালকটি প্রাণে রক্ষা পায়। অতঃপর তাকে নৌকায় করে সমুদ্রের মাঝখানে পানিতে ফেলে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু নৌকা উল্টে রাজার লোকজন মারা পড়ে এবং বালকটি বেঁচে যায়। দুবারই বালকটি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিল—‘হে আল্লাহ! আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে এদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন।’

পরে বালকটি রাজাকে বলল, ‘আপনি আমার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে আমাকে হত্যা করতে পারবেন না।’ রাজা বলল, সেটা কী? বালকটি বলল, আপনি সমস্ত লোককে একটি ময়দানে জমা করুন এবং সেই ময়দানে একটি খেজুরগাছের গুঁড়ি পুঁতে তার উপরিভাগে আমাকে বেঁধে রাখুন। অতঃপর আমার তূণীর থেকে একটি তীর ধনুকে সংযোজিত করে নিক্ষেপের সময় বলুন, ‘বালকটির রব আল্লাহর নামে!’

রাজা তা-ই করলেন এবং বালকটি মারা গেল। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনগণ বলে উঠল, আমরা বালকটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। তখন রাজার নির্দেশে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে বিশাল অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে সবাইকে হত্যা করা হলো। নিক্ষেপের আগে প্রত্যেককে সত্য ধর্ম ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তির কথা বলা হয়। কিন্তু কেউ তা মানেনি। শেষ দিকে একজন রমণীকে তার শিশুসন্তানসহ উপস্থিত করা হলো। রমণীটি আগুনে ঝাঁপ দিতে ইতস্ততবোধ করতে থাকলে শিশুটি বলে উঠল—‘হে আমার মা! সবর (করে আগুনে প্রবেশ) করুন। কেননা আপনি সত্য পথে আছেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৪০১ যুহদ ও রিকাক অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১৭)

তিরমিজি শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী, ওই দিন ৭০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়।

শিক্ষণীয় বিষয়

*   সমাজে যুবকদের আত্মত্যাগের প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

*   প্রত্যেক আদম সন্তান স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে।

*   রোগমুক্তির মালিক একমাত্র আল্লাহ।

*   যাবতীয় জাদুবিদ্যা ও শিরক কাজ ত্যাগ করে আল্লাহর কালাম শিক্ষা করতে হবে।

*   সত্য পথের নির্ভীক সৈনিকরা জীবনের তরে কখনো বাতিলের সামনে ঈমান বিকিয়ে দেয় না।

*   একজন সত্যপন্থী তরুণ ও যুবকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পৃথিবীতে হাজারো মানুষ আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছে। উৎস: কালের কণ্ঠ।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়