ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নির্বাচন আয়োজনের পর তিনি কী করবেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার চাকরি আসলে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাকে জোর করে এ কাজে আনা হয়েছে। আমি আমার কাজ করছিলাম এবং তা উপভোগ করছিলাম। এ জন্য আমি প্যারিসে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে টেনে আনা হয়েছে অন্য কিছু করার জন্য। সুতরাং আমি আমার নিয়মিত কাজে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব, যা আমি আমার সারা জীবন ধরে করেছি। আর তরুণরাও এটিকে ভালোবাসে। সুতরাং আমি আমার সেই দলে বা আন্দোলনে ফিরে যাব যেটা আমি সারা বিশ্বে তৈরি করেছি।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।তিনি বলেন, ‘আমি আমার নিয়মিত কাজে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব, যা আমি আমার সারা জীবন ধরে করেছি। ’ গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করছি যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না। তরুণেরা ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষ। তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এই তরুণেরা পুরো বিশ্ব পরিবর্তন করতে পারে। এটা শুধু এক দেশ বা আরেকটি দেশ পরিবর্তনের বিষয় না। বাংলাদেশ যা করেছে এটি একটি উদাহরণ যে তরুণরা কত শক্তিশালী।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের উচিত তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। বিশেষ করে তরুণীদের ওপর। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের উচিত তরুণ-তরুণীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া যাতে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। তাদের সুযোগ এসেছে। তাদের সক্ষমতাও রয়েছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিন তরুণ আমার ক্যাবিনেটে আছেন। তারা দুর্দান্ত কাজ করছে। তারা সক্ষম। এই তরুণেরা গত শতাব্দীর তরুণ নয়। তারা এই শতাব্দীর তরুণ। তারা অন্যান্যদের মতোই সক্ষম।’
বাংলাদেশ সম্পর্কে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের এবারের বিজয়ী বাংলাদেশ, যারা এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, যিনি সাড়ে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ১৫ বছর ধরে শাসন করছিলেন। দেশের স্বাধীনতার হিরোর এক কন্যা হিসেবে তিনি একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দমন শুরু করেন, নির্বাচনে কারচুপি করেন, বিরোধীদের কারাগারে পাঠান এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার শাসনামলে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
তারা আরও বলেছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেখানে রয়েছে একটি অস্থায়ী সরকার, যা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এই সরকার শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে। ২০২৫ সালে এই সরকারকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে হবে এবং কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে দেশটির আদালত নিরপেক্ষভাবে চলছে এবং বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। এর কোনোটিই সহজ হবে না।
প্রসঙ্গত, বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম ঘোষণার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যম বলেছে- সবচেয়ে ধনী, সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকারী কি না, সেই হিসাবে নয়; সেরা দেশ বেছে নেওয়া হয় আগের ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে কি না, সেই বিচারে।
এবারের সেরা দেশ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড রয়েছে এই তালিকায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেই বেছে নেওয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :