শিরোনাম
◈ ২৫ ক্যাডারের নতুন সংগঠন ◈ চলতি মাসের ২১ দিনে এক টাকাও রেমিট্যান্স আসেনি যে ১০ ব্যাংকে ◈ আত্মসমর্পন করে আদালতে শেখ হাসিনার নামে আওয়ামী নেতাদের শ্লোগান (ভিডিও) ◈ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে দেশে ফিরলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ◈ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের পর টিউলিপকে সমর্থন করছেন স্টারমার ◈ সারজিস আলম বললেন এই আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক, চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরাই রাজপথে নামব (ভিডিও) ◈ পুলিশ নাগরিকদের সেবার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ডিএমপি  ◈ কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বা যোগ্য, তা নির্ধারণ করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব: বদিউল আলম মজুমদার ◈ বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা: আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ◈ ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম পরিবর্তন

প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:১৭ রাত
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যারা বিপ্লবের কথা বলছেন, তাদের উচিত সরকারে না থেকে বিপ্লবী দল তৈরি করা :মির্জা ফখরুল

দ্য ডেইলি স্টার : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের রাজনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে দেশ।

গণঅভ্যুত্থান, দেশের বর্তমান রাজনীতি, রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হিসেবে আপনার কাছ থেকে বর্তমান সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে বুঝতে চাই। একটি সফল গণঅভ্যুত্থান হলো এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের কাছে আপনারা একইসঙ্গে 'দ্রুততম' ও 'যৌক্তিক' সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছেন। এই 'দ্রুততম' ও 'যৌক্তিক' সময় বলতে কী বুঝাচ্ছেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: ১৫ বছরের বেশি সময়ের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ফলে বাংলাদেশের ব্যুরোক্রেটিক স্ট্রাকচার, রাজনৈতিক স্ট্রাকচার একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চলার জন্য যেসব বিষয় দরকার, যেসব ইনস্টিটিউট দরকার, তার সবই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশাটা অনেক বেড়েছে। তার মধ্যে প্রধান প্রত্যাশা হচ্ছে, এই সরকার একটি সুন্দর নির্বাচন দেবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের মতামত প্রকাশ করে নিজেদের একটি সংসদ ও সরকার গঠন করবে। আরও একটি প্রত্যাশা আছে—অতীত অভিজ্ঞতার কারণে যত জঞ্জাল আছে, তার সবই দূর করতে হবে।

প্রশ্ন : যেটাকে সংস্কার বলা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ। এসব জঞ্জাল দূর করার জন্য কতগুলো সংস্কার প্রয়োজন। বিষয়টি আমরা আগেই অনুধাবন করেছি। দল হিসেবে আরও দুই বছর আগে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। সেখানে প্রতিটি বিষয়ে সংস্কারের  উল্লেখ করা আছে। এমনকি রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের কথা বলা আছে।

এ কারণেই এই সরকার যখন সংস্কারের বিষয়টি সামনে এনেছে, আমরা কোনো আপত্তি করছি না। তবে, আমরা বলেছি, এই সংস্কার হতে হবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে।

প্রশ্ন : যৌক্তিক সময় বলতে কত সময়?

মির্জা ফখরুল: প্রশ্ন হচ্ছে, যৌক্তিক সময় কী? নূন্যতম কয়েকটি বিষয় আছে। যেমন ধরেন—নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচন উপযোগী করতে হবে; সম্পূর্ণরূপে দলীয়করণ করা আমলাতন্ত্রকে সংস্কার করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে; বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছিল, সেটা যতটা সম্ভব সংস্কার করতে হবে। পুরোটা হয়তো ঠিক করা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ, যারা নিচের দিকে আছে, সেখানে কিছু কিছু থেকে যেতে পারে। এই বিষয়গুলো খুব জরুরি।

প্রশ্ন : যৌক্তিক সময়ের বিষয়ে চমৎকার কথা বলেছেন আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। তাড়াহুড়োর ইঙ্গিত তিনিও দেন নি।তবে বিএনপির অন্য নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচন চান। এসব নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিএনপির সুনির্দিষ্ট অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল: আমরা কোনো নির্দিষ্ট সময়-তারিখ বলতে চাই না। কারণ, দলীয়ভাবে আমরা বাস্তববাদী চিন্তা করছি। কাজেই এর জন্য সময় একটু এদিক-ওদিক হতেও পারে। কিন্তু, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনটা হতে হবে। সেটা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভালো।

আমরাও একসময় সরকারে ছিলাম এবং এখন সংস্কারের প্রস্তাবও দিয়েছি; তাই এটা বুঝি যে এর জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের তারিখ দেওয়া সম্ভব না।

তারপরও তাড়াতাড়ি নির্বাচনের তারিখ দিতে বলছি কারণ, এর মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার আসবে। নির্বাচিত সরকার ও অন্তর্বর্তী সরকারের লিজেটিমেসি এক না। নির্বাচিত সরকারের ক্ষেত্রে জনগণের ম্যান্ডেট থাকে, অফিসিয়ালি থাকে। বিপরীতে আমাদের যখন বিদেশিদের সঙ্গে, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে, শিল্পপতিদের সঙ্গে কথা হয়, তারাও মনে করেন যে দ্রুত নির্বাচন হলে বিনিয়োগের বিষয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। বিনিয়োগকারীরা একটি অস্থায়ী সরকারের সময়ে বিনিয়োগ করতে সাহস পায় না।

প্রশ্ন : আপনি নির্বাচিত সরকার এবং জনগণের ম্যান্ডেটের কথা বলছেন। অতীতের দিকে যদি তাকাই, নির্বাচিত সরকারগুলোর কথা বলি—অন্তত ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত সরকারগুলোর কথা—সেখানে কী সংস্কারের ক্ষেত্রে খুব ইতিবাচক কিছু দেখতে পাই?

মির্জা ফখরুল: ইতিবাচক অবশ্যই বলব। সংস্কারের ক্ষেত্রেও কিছু ইতিবাচক বিষয় হয়েছে। একদলীয় ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় ব্যবস্থা এসেছে; বহুদলীয় ব্যবস্থায় সংসদীয় সরকার গঠন হয়েছে। হ্যাঁ, এটা চর্চা করতে পারেননি। কারণ, গত সরকার গণতন্ত্রের চর্চা করতে দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে একটা বড় ক্ষতি করেছে। এটাই আজকের সংকটের মূল জায়গা। আমি খুব ভালো করেই জানি যে নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়। কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান ফটক। সেখান দিয়ে প্রবেশ করেই আপনি গণতন্ত্রের পথে যাবেন। যদি জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া সরকার না থাকে তাহলে সংস্কার মানুষের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য হয় না। একটি নির্বাচিত সরকারের যে শক্তি ও সাহস থাকে, সেটা কখনোই একটি অন্তর্বর্তী সরকারের থাকবে না।

প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের জনগণের ম্যান্ডেট আছে নাকি নেই, সেই জায়গায় যদি প্রশ্ন এভাবে আসে যে, একটি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, যেখানে নামে না থাকলেও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল; সেই অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারের প্রতি অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট, অর্থাৎ জনগণের ম্যান্ডেট তো আছে।

মির্জা ফখরুল: অভ্যুত্থানের যে লক্ষ্যগুলো ছিল, তার মধ্যে সংস্কার নিশ্চই আছে। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে ওয়ান-ইলেভেনের মতো বা অন্যান্য সময়ের মতো দু বছর, চার বছর বা ছয় বছর এই সরকার চলবে। কখনোই একটি অনির্বাচিত সরকারের যৌক্তিক সময়ের বাইরে যাওয়া উচিত না। এতে নানা ধরনের সমস্যার তৈরি হয়। বিদেশিদের সঙ্গে এক ধরনের সমস্যা তৈরি হয় সেটাও বলেছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ যারা ফ্যাসিবাদের সমর্থক, গণতন্ত্রেরবিরোধী শক্তি, তারা এই সময়ের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেখেন, তারা সংস্কার করতে গিয়ে সেটা সম্পন্ন করতে পারলো না। বাধ্য হয়ে নির্বাচন দিয়ে তাদের বেরিয়ে যেতে হলো।

প্রশ্ন : ওয়ান-ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন বা দুর্ভাবনা আপনারা কেন বারবার মাথায় আনছেন?

মির্জা ফখরুল: কারণ, ওয়ান-ইলেভেন আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।

প্রশ্ন : কিন্তু, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার গঠনের ধরন আর এই সরকার গঠনের ধরন তো এক না।

মির্জা ফখরুল: কিছুটা মিল আছে। এটাও নির্বাচিত সরকার না। এখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, জনগণের প্রতিনিধিত্ব কারা করে। শুধুমাত্র বিএনপি করে না, শুধুমাত্র ছাত্রদের একটি গ্রুপ করে না; অথবা এই আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিলো শুধুমাত্র তারাও করে না। জনগণের প্রতিনিধিত্ব তারাই করে, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসে। এটা শুধু কথার কথা না, বাস্তবতা। যেসব দেশে গণতন্ত্র ভালো ভাবে চলছে, সেসব দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ, তারা গণতন্ত্রের চর্চা করে। আমরা এখানে গণতন্ত্রের চর্চাই করতে পারিনি। আর যখনই একটি অনির্বাচিত সরকার আসে, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের অ্যাম্বিশন তৈরি হয় আরও কিছু সময় থেকে তারপর চলে যাওয়ার। যার জন্যই আমরা বারবার ওয়ান-ইলেভেনের কথা বলি।

প্রশ্ন : প্রাসঙ্গিকভাবেই আরেকটি প্রশ্ন আসে। এই আন্দোলনেরও আগে স্কুল শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র মেরামতের আন্দোলন করেছিল। সেখানেও আপনারা সমর্থন দিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন। এবারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকার যখন সংবিধান সংস্কার করতে চাইছে, সংবিধান পুনর্লিখন করতে চাইছে, সেটা নিয়ে নিশ্চই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সংবিধান সংস্কারের এই জায়গায় সরকারের সঙ্গে আপনাদের মতের মিল হচ্ছে না। সেটা কেন? আপনারা কেন সংবিধান সংস্কার করতে চাইছেন না?

মির্জা ফখরুল: আমরা সংস্কার চাইছি না সেটা বলিনি। আমরা বলেছি, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে। আপনি যদি নিয়ম না মানেন, তাহলে অনিয়ম চলতেই থাকবে। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার এই সংবিধান মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছে। এর জন্য আপিল বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়েছে। অর্থাৎ, সংবিধান কিন্তু বলবত। এই সংবিধান যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে প্রশ্ন আসবে কারা এটা করার জন্য যোগ্য। সবসময় একটি কথাই আসে, জনগণই হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক। স্পষ্ট বলা আছে, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করা হবে। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সংসদই সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক এবং সংসদীয় কমিটি এগুলো করবে। এখানে অন্য কোনোভাবে দেশ পরিচালনার সুযোগ নেই। আপনি সেটা চর্চা করেন না, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু, এটাই চর্চা করা উচিত। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এটা চমৎকার ভাবে কাজ করছে।

এখন আমাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই শুরু হয়েছে লিগেসি, যেটা হচ্ছে গণতন্ত্র ধ্বংস করা। পরবর্তীতে বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেখ মুজিবের হাতেই গণতন্ত্র ভেঙে দিয়ে বাকশাল হয়েছে। এর পরবর্তীকালেও গণতন্ত্রকে ঠিকভাবে চলতে দেওয়া হয়নি। সেই সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি।

প্রশ্ন : গণতন্ত্রের সংস্কৃতির কথা বলছেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি সারা জীবন রাজনীতি করলেন, দেখলেন। দেশে হাজারো মানুষকে হত্যা করে, একটি গণহত্যা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের বিষয়ে বলব না। বিএনপির কথা বলি। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল, ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া দল। এই দলের ভেতরে কি গণতন্ত্রের চর্চা আছে? বা যেমনটি প্রত্যাশা করা হয় তেমন গণতন্ত্র আছে?

মির্জা ফখরুল: পুরোপুরি আছে, সেটা আমি বলব না। কিন্তু, আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করছি। আমাদের কাউন্সিল হচ্ছে। আমাদের স্থায়ী কমিটির মিটিং প্রতিমাসে চারবার হয়। অর্থাৎ, এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত ভাইস চেয়ারপারসন নিচ্ছেন না। তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গণতান্ত্রিকভাবেই দলটিকে পরিচালনা করার জন্য সব উদ্যোগ নিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সব জায়গায় কাউন্সিল আমরা করতে পারিনি। সেটাও হবে।

আগেও বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের উদ্যোগটাই সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে থাকলে গণতন্ত্রের চর্চা গড়ে উঠছিল। দেখেন, গত তিনটি নির্বাচনে জবাবদিহি কতটা ছিল। গত ১৫ বছরে সংসদে কোনো বিতর্ক হতো না। তার আগে হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি নির্ভর করবে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ওপরে। সেই জায়গাটা আমাদের সবাইকে মিলেই ঠিক করতে হবে।

প্রশ্ন : ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের নির্বাচনকে নির্বাচনই হয়ত বলা যায় না। সেখানে না গিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। কারণ, বারবার এই প্রসঙ্গ সামনে আসে—আমরাও বলি, রাজনীতিবিদ হিসেবে আপনারাও বলেন। এই প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়ান-ইলেভেন তৈরি হওয়াটাও কি রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা নয়?

মির্জা ফখরুল: এর দায় অস্বীকার করব না। কিন্তু, তার প্রেক্ষাপটটা চিন্তা করতে হবে, কেন ওই সময়ে ঘটনাটা ঘটলো? ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিশ্বের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন এসেছে। সেটা হচ্ছে—এই যুদ্ধ ও সন্ত্রাস নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের একটা নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেটা করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেও একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন, পশ্চিমা কূটনৈতিকরা ওয়ান-ইলেভেনের আগে খুব অ্যাকটিভ হয়ে গিয়েছিল। তারা একটা ক্লাবও তৈরি করেছিল। পশ্চিমা যারা ছিলেন তারা সেখানে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন মিশনে কাজ করে। ফলে, অনেক কিছুই তাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, ক্ষমতা দখল না করে তারা যদি নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য কাজ করত, তাহলে ভিন্ন কিছু হতো। ফখরুদ্দিন সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি একজন আমলা। রাজনীতি সম্পর্কে তিনি কি জানেন? যারা রাজনীতি জানেন না, তাদের মাধ্যমে দেশ চালালে গণতন্ত্র পাবেন না।

প্রশ্ন : বর্তমান সরকারকে কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল: একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকার এসেছে। আমরা সমর্থন দিচ্ছি। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, কথা বলছেন। ভুল-ত্রুটি করছেন, সেইসঙ্গে সেটা শুধরানোর চেষ্টাও করছেন। তারা সংস্কারের জন্য কাজ করছেন। সেই সময়টুকু আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা সংস্কার করে নির্বাচনে যাবো। তারা এটাও বলছেন, সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়ার অর্থ পাঁচ-ছয় বছর ক্ষমতায় থাকা নয়। তারাও একটা সময়ের কথা বলছেন, হয়তো আপনাদের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট করে মিলছে না।

মির্জা ফখরুল: সময় নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের তিনবার দেখা হয়েছে। তাকে আমরা বলেছি, আপনাদের যথেষ্ট সময় দিতে রাজি আছে, কিন্তু সেটা যৌক্তিক সময় হতে হবে।

প্রশ্ন : বর্তমান সরকার নির্বাচন দেবে না এমন কোনো শঙ্কা আপনাদের মধ্যে আছে? বা এমন কোনো শঙ্কা তৈরির কোনো কারণ আছে?

মির্জা ফখরুল: আমি আপাতত দেখছি না। অফিসিয়ালি ছাড়াও আনঅফিসিয়ালি ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়নি যে তারা নির্বাচন দেবে না বা নির্বাচন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিলম্ব করবে।

প্রশ্ন : অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা কিছু কথা তুলতে চাই। আপনাদের কাছে কি কোনোভাবে মনে হয় যে বিএনপিকেও মাইনাস করার চেষ্টা করা হবে?

মির্জা ফখরুল: এমন কথা আছে, আমরাও দু-একবার বলেছি। এই শঙ্কাগুলো এসেছে কোথা থেকে? যখন দেখি মূল বিষয়গুলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুল-ত্রুটি হচ্ছে, তখন শঙ্কাগুলো আসছে। যেমন: সংস্কারের জন্য কমিটি গঠনের আগে আমাদের সঙ্গে একটু আলোচনা করা হলে খুশি হতাম। এসব কারণে কিছুটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমরা বলেছিলাম, নির্বাচন পরিচালনার যে আইন আছে সেটা স্থগিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সর্বজন বিদিত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। সেটা না করে তারা সার্চ কমিটি করলেন এবং নাম চেয়েছেন। সার্চ কমিটির অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো না। আমরা নাম দিয়েছি, কিন্তু দেখা গেছে যে তারা সব সরকারি লোকজনকে দিয়েছে।

প্রশ্ন : আপনারা তারপরও নাম দিয়েছেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা দিয়েছি। সরকারকে আমরা সবসময় সহযোগিতা করছি। কিন্তু, একইসঙ্গে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তাদেরকে সবসময় সতর্ক করছি। তাদের বলছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিতে। যাতে একই ধরনের সমস্যা তৈরি না হয়। ড. ইউনূসের সরকারের কাছ থেকে আমরা সেটাই আশা করব। তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ—শুধু দেশে নয়, গোটা বিশ্বে। প্রথম দিনই তাকে বলেছিলাম, আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশ; সেই প্রত্যাশা যদি কমতে থাকে, বা ফল যদি না পাওয়া যায়, তাহলে আপনি আপনার প্রতি অবিচার করবেন। কাজেই সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করা। সবাইকে সম্পৃক্ত যখনই করবেন না, তখনই দেখবেন শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ। অল্প সময়ের আলোচনায় সব বলা যায় না। তাই আমরা মনে করি, ঘন ঘন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা উচিত।

আমরা দেখছি, আলী রীয়াজ সাহেব রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিচ্ছেন। আমরা এখনো পাইনি, হয়তো পাব। তারা চাচ্ছেন, আমাদের প্রত্যাশাগুলো তাদেরকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য। এটা ভালো। লিখিতভাবে জানাবো আমরা। কিন্তু, একই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

প্রশ্ন : আপনারা জানাতেও চান, জানতেও চান।

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ। আমরা লিখিতও দিবো। তারপর যে পরিবর্তনগুলো আসবে, সেটা কি আমাদের সঙ্গে আলাপ না করে করবে? যদি দেখা যায় যে বড় কোনো সমস্যা হয়েছে! এর একটা ফান্ডামেন্টাল ব্যাপার আছে।

অনেকে বলেছেন, সংবিধান কী? গণঅভ্যুত্থানই সংবিধান। কিন্তু, কারা এটা করবে? সংবিধানটা আনতে হলে তার একটা ম্যান্ডেট থাকতে হবে, এখতিয়ার থাকতে হবে।

একটা প্রশ্নের উত্তর দেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কোটি কোটি মানুষ করেছে। কার কাছ থেকে আপনি এটা নিবেন? সরকারে এসেছেন তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি। তারাই কি শুধু প্রতিনিধি? এর বাইরেও আরও প্রতিনিধি আছে আমরা দেখছি। তারা অনেক রকম কথা বলছেন। তারা দাবি করছেন, ছাত্র সমন্বয়কারীরা দল করতে চাচ্ছেন। সেটা ভালো কথা। সেটাও তো আমাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। সমন্বয়কদের যারা সরকারে আছেন তাদের বিষয়টিও আমাদের কাছে অস্পষ্ট থাকছে।

প্রশ্ন : আপনারা যখন আলোচনা করতে গিয়েছেন, তখন কি এ বিষয়ে কথা বলেছেন?

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, বলে এসেছি।

প্রশ্ন : সরকারের পক্ষ থেকে কী বলা হচ্ছে, সেটা কি শুনে এসেছেন?

মির্জা ফখরুল: না, এটা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

প্রশ্ন : সরকারের ভেতরে সমন্বয়কদের যে প্রতিনিধিরা আছেন আর বাইরে যারা আছেন, তাদের মধ্যে কাদের কথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বক্তব্য সেটা বুঝতে চাইছেন আপনারা?

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ।

প্রশ্ন : একই রকমভাবে সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয় যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও মহাসচিব কথা বলছেন, একইসঙ্গে দলের আরও অনেকে কথা বলছেন। কাদের বক্তব্য বিএনপির বক্তব্য হিসেবে ধরা হবে।

মির্জা ফখরুল: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও মহাসচিব—আমরা দলকে প্রতিনিধিত্ব করি। আমরাই দলের বক্তব্য তুলে ধরব। অন্যরা অনেক কথা বলতেই পারেন। ছাত্রদের মধ্যে যারা সমন্বয়ক—তাদের মধ্যে যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন, আমরা ধরে নিবো তাদের কথাগুলো তাদের দলীয় কথা। সেইসঙ্গে এটাও ধরে নিবো যে সরকারের মধ্যে যারা আছেন, তারাও তাদের প্রতিনিধিত্ব করে।

একটি কথা খুব জোরালো ও পরিষ্কারভাবে বলতে চাই—তাদের (সমন্বয়ক) সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই, দূরত্ব নেই। আমরা তাদের সহায়তা করতে চাই, সরকারকেও সহায়তা করতে চাই। কিন্তু জনগণের ইচ্ছার বাইরে যাবে এমন কিছু আমাদের মেনে নেওয়া কঠিন হবে।

প্রশ্ন : জনগণের ইচ্ছা তাহলে কোনটা?

মির্জা ফখরুল: ওইটাই সমস্যা। জনগণের ইচ্ছা কোনটা সেটা কীভাবে বুঝবেন? এ জন্যই আমরা নির্বাচনের কথা বলছি। যদি নির্বাচন না করে কোনো পরিবর্তন করতে চান, তাহলে আপনাকে গণপরিষদ করতে হবে।

প্রশ্ন : আপনারা নির্বাচনের কথা বলছেন, সরকারও সেটাই বলছে। আপনারা যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের কথা বলছেন, সরকার বলছে সংস্কারের পর নির্বাচন। কিন্তু সরকারও যে অনেক লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকতে চাইছে, তাদের প্রকাশ্য বক্তৃতায় তেমন কিছু পাচ্ছি না। তাহলে, বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকারের কথায় তেমন কোনো পার্থক্য তো দেখছি না।

মির্জা ফখরুল: না, পার্থক্য নেই। কিন্তু, কতগুলো মৌলিক বিষয় তাদের আরও স্পষ্ট করা দরকার। যেমন: কেউ কেউ বলছেন, সংবিধান পরিবর্তন নয়, আমরা নতুন করে লিখব। এমনকি সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, সংবিধান পুনর্লিখন হবে। দিন শেষে সংবিধান পুনর্লিখন, নতুন করে তৈরি নাকি সংশোধন হবে, এটা এখনো পরিষ্কার না।

প্রশ্ন : এটা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল: সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আমরাও একটি কমিটি করেছি, সেটাও সরকারকে দেবো। সরকার চালানোর জন্য বর্তমান সংবিধানের যেটুকু সংশোধন প্রয়োজন সেটুকুতে আমরা সহযোগিতা করছি। কিন্তু মৌলিক পরিবর্তন আনতে চাইলে তার দায়িত্ব জনগণের কাছে। জনগণের প্রতিনিধিরা এটা করবে।

প্রশ্ন : অভ্যুত্থান তো জনগণ করেছে।

মির্জা ফখরুল: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে জনগণ করেছে, তারা কারা? তাদের মধ্যে কাদের কাছ থেকে আসবে এই বক্তব্য?

প্রশ্ন : যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তারা।

মির্জা ফখরুল: সেটা আপনি কীভাবে জানবেন? এটা অনেকে অনেক ভাবে বলছে।

প্রশ্ন : আপনারা এই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন, হয়তো নামে ছিলেন না। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, যেটা সারা পৃথিবী দেখেছে। সেটা পরিষ্কার?

মির্জা ফখরুল: আমরা সেটা অস্বীকার করছি না। আমরা এটাকে ওন করি। সেখানে আমরাও ছিলাম। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে বিশ্বের যেকোনো দেশে জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে। আর এই সরকার তো বিপ্লবী সরকার না।

প্রশ্ন : সাংবিধানিক সরকারও তো না।

মির্জা ফখরুল: সাংবিধানিক সরকার এই হিসেবে যে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছেন। আমরা এই দেশে বহুবার পরিবর্তন দেখেছি। সেই আলোকে ওটাই একমাত্র পথ শুরু করার। এ জন্যই আমাদের মনে হচ্ছে তাদের সবকিছু আরও পরিষ্কার করা দরকার।

প্রশ্ন : শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের একজন অন্যতম কাণ্ডারি বর্তমান রাষ্ট্রপতি। সেই রাষ্ট্রপতিকে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে কেন আপনারা আশঙ্কা করছেন যে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে? শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও যদি সাংবিধানিক শূন্যতা না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে কেন হবে?

মির্জা ফখরুল: আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের কাস্টডিয়ান নন। এই দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কোর্টের। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদে কে আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা একটি ইনস্টিটিউশন। রাষ্ট্রপতিকে সরাতে হলে কীভাবে হবে? প্রথমত, তাকে চলে যেতে বাধ্য করবেন; সেটা গণতান্ত্রিক হবে কী না সেটা চিন্তা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি চলে গেলে তার জায়গায় কে আসবেন? আমাদের বিধান অনুযায়ী, স্পিকার আসবেন। আমরা মনে করি, যিনি স্পিকারের জায়গায় আছেন, তিনি আরও অনেক বেশি ক্ষতিকর হবেন।

প্রশ্ন : পদ্ধতির কথা বলছেন। কিন্তু অভ্যুত্থান কোনো পদ্ধতি মেনে হয় না।

মির্জা ফখরুল: তাহলে সেটা প্রথমেই করা উচিত ছিল। আর এখন সেটা করলে দেশে নৈরাজ্য হবে।

প্রশ্ন : আপনারা সঙ্গে থাকলে নৈরাজ্য কেন হবে?

মির্জা ফখরুল: আমরা কি একা? আরও দল আছে। প্রশ্ন আসবে, প্রধান কে হবেন? সরকার চালাবে কে? সরকারের সব অর্গান কাজ করাবে কে? সেনাবাহিনীর প্রধান হবেন কে? এটা একটা রাষ্ট্র, কোনো ক্লাব না। এই রাষ্ট্র চলবে সংবিধানের ভিত্তিতে, যে সংবিধানের মালিক জনগণ। আবারও বলছি, এখানে আমাদের সঙ্গে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই, বিভাজন নেই। আমরা মনে করি, সংবিধানে নুন্যতম পরিবর্তন এনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থাটুকু করতে হবে। কিন্তু, তাতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমরা বলেছি গণপরিষদ করতে হবে। সেটাও নির্বাচন করেই করতে হবে। নির্বাচন আবশ্যিক।

প্রশ্ন : '৭৩ এর যেটা হয়েছিল, তেমন গণপরিষদ?

মির্জা ফখরুল: এই অবস্থায় সংবিধানে যদি মৌলিক পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে গণপরিষদ ছাড়া সম্ভব না।

প্রশ্ন : আপনি বলেছেন, এটা বিপ্লবী সরকার নয়, সংবিধান কিছুটা মেনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন—যেমন  ফরহাদ মজহার বলেছেন, এই সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে ভুল করেছে, তাদের উচিত ছিল বিপ্লবী সরকার গঠন করা। ভুল সবাই করেছে, এখনো সুযোগ আছে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিয়ে বিপ্লবী সরকার গঠনের মাধ্যমে ভুল সংশোধনের।

মির্জা ফখরুল: আমি পুরোপুরিভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আই বিলিভ ইন লিবারেল ডেমোক্রেসি। শুধু আমি নই, আমার দল এটা বিশ্বাস করে। আমরা বিপ্লবী দল নই। যারা বিপ্লব করতে চান, তাদের সবার আগে প্রয়োজন একটি বিপ্লবী দল করা। সেটা কোথায়? আমরা ফরহাদ মজহার সাহেবের সঙ্গে কোনো বিপ্লবী দল দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বিশাল চিন্তাবিদ এবং তার মতো বিপ্লবী চিন্তাবিদ বাংলাদেশে খুব কম আছে, এটাও ঠিক। কিন্তু, আমি কোনো বিপ্লবী দল দেখতে পাচ্ছি না। শুধু সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের মতো দল তৈরি হতে পারে। এ জন্য আমরা সাপোর্টার বেজড পলিটিক্যাল পার্টি, নট ক্যাডার বেজড। ফরহাদ মজহার ইনসাফ পার্টি একটা করেছিলেন। তাদের আর দেখতে পাচ্ছি না সামনে। এখন ভর করা হচ্ছে এই ছাত্র-জনতার ওপরে। তারা এখনো দল তৈরি করেনি। তাহলে সেই বিপ্লবী দলটা কোথায়, রাষ্ট্রটা চালাবে কে? যেসব দেশে বিপ্লব সফল হয়েছে, সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন হয়েছে কারণ তাদের একটি বিপ্লবী দল ছিল। রাশিয়া, চীন, কম্বোডিয়া, কিউবা—সবখানেই একই চিত্র পাবেন। এমনকি ইরানেও ইসলামি বিপ্লব হয়েছে, সেখানেও একটি দল ছিল। কাজেই আমার কথা হচ্ছে, যারা বিপ্লবের কথা বলছেন, তাদের উচিত সরকারে না থেকে একটা বিপ্লবী দল তৈরি করা।

প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় যে তাদের একটি দল করা উচিত?

মির্জা ফখরুল: সেটা আমি বলব না, আমি বলতে পারি না। আমি বারবারই বলেছি, তাদের সরকারে না থেকে বিপ্লবী দল করতে পারে। কারণ, সরকারে থাকলে আমাদের দেশের কালচারে সবাই মনে করবে এটা একটা কিংস পার্টি।

প্রশ্ন : তারা যদি দল তৈরি করে তাহলে সরকারে থাকতে পারবে না?

মির্জা ফখরুল: দল করলে তাদের সরকারে থাকা উচিত না। তাহলে তো সরকার বায়াসড হয়ে গেল। আপনি বলছেন, সরকার নিরপেক্ষ থাকবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। আবার আপনার যদি দল থাকে এবং আপনিও সরকারে থাকেন, তাহলে বিষয়টি পরস্পরবিরোধী হয়ে যায় না? এখন বিপ্লবের কথা বলার দরকার কি, বিপ্লবী সরকার ঘোষণা দিয়ে আপনারা দেশ চালান। কিন্তু, সেটার জন্য আপনার দল কি উপযোগী হয়েছে?

আওয়ামী লীগ ১৯৭৪ সালে যখন বাকশাল করলো, তখনো তাদের সমর্থক বোদ্ধারা বলেছেন যে এটা আগেই করা উচিত ছিল। হয়তো ১৯৭১ সালে তাদের সেই সুযোগ ছিল। ১৯৭৪ সালে এসে আর সেই সুযোগ ছিল না। জনগণ আর সেটা নেয়নি। সেটা মাথায় রাখতে হবে। এজন্যই আমরা জোর দেই জনগণের রায়ে। সেটা আসবে নির্বাচনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন : গণতন্ত্রের কথা, নির্বাচনের কথা রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধী দলে থাকলে যত বলে, ক্ষমতায় গেলে আর তত বলে না, চর্চাও করে না। এটা বলা কি ভুল হবে?

মির্জা ফখরুল: এটা ঠিক না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের কিছু মিডিয়া ক্ষমতাসীন দলকে গণতন্ত্রের বিরোধী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। কোনো ক্ষমতাসীন দল যদি গণহত্যা করে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে, তখন আর সেই দলকে গণতান্ত্রিক বলতে পারবেন না। শেখ হাসিনা তাই করেছেন। তিনি উল্টো বলেছেন, 'আমার অপরাধটা কোথায় বুঝতে পারছি না।' আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন সব ভালো করেছি, তা বলব না। কিন্তু আমরা মৌলিক কতগুলো ফান্ডামেন্টালে পরিবর্তন এনেছিলাম। তার একটি হচ্ছে, সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের দাবি মেনে নিয়ে আমরাই সেটা শুরু করেছি। কিন্তু, যারা গণতন্ত্রের বিরোধী ছিল তারা সেটাকে ধ্বংস করেছে। আপনাকে এটা মানতেই হবে যে বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক কাজগুলো বিএনপি করেছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

আরেকটি বিষয় আমার কাছে বিস্ময়কর লাগে, বাংলাদেশের মিডিয়ার একটি অংশ এই ধরনের সরকারগুলোকে খুব পছন্দ করে, যারা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে আসে না।

প্রশ্ন : এই একই কথা শেখ হাসিনাও বলতেন।

মির্জা ফখরুল: অস্বীকার করছি না। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের এক পাল্লায় মাপবেন না। আমরা ১৫-১৬টা বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জান দিয়েছি, জেল খেটেছি। আমাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার তুলনা করবেন না। অন্যথায় সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক কথা হবে।

এই কথাগুলো বলে আপনারা একটা ন্যারেটিভ তৈরি করেন যে গণতান্ত্রিক দলগুলো সঠিক নয়। এই ন্যারেটিভ তৈরি ক্ষতিকর। আপনাদের উচিত এমন কিছু করা, যেন গণতান্ত্রিক দলগুলো জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য এটা খুব বেশি প্রয়োজন। আমি লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি, আমার দলও তাই করে। আমি নিজে একসময় বাম রাজনীতি করেছি, বিপ্লবী রাজনীতি করেছি, বিপ্লবী দল করেছি। আমি দেখেছি যে এটা আসলে হয় না। দিন শেষে গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। 

প্রশ্ন : বাম রাজনীতি থেকে আপনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন কেন?

মির্জা ফখরুল: আমি যখন সক্রিয় রাজনীতিতে এলাম, তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র—তৎকালীন চেয়ারম্যান—পদে নির্বাচন করি। আমি তখন কলেজ শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করে এসেছি।

প্রশ্ন : পদত্যাগ করেছিলেন কেন? এখন তো অনেকেই একই সঙ্গে সব করছে। 

মির্জা ফখরুল: এখনকার কথা আর তখনকার কথা আলাদা। আর আমার ব্যক্তিগত হিসাবও আলাদা। আমি পদত্যাগ করেছি, কারণ ওটাই নিয়ম, ওটাই আইন। আমি যখন রাজনীতি করবো, তখন আর সরকারের কোনো অংশে চাকরিতে থাকার কথা না। তখনও আমি যে দলে গিয়েছি, সেটা বিরোধী দলে ছিল। বিএনপি তখন বিরোধী দলে। বিএনপিতে যাওয়ার প্রধান কারণ, দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর মানুষ হয়েও দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যতগুলোর সরকার এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো গভর্নেন্স ছিল তার। তৃতীয়ত, একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ। এটা আমার কথা না, সবাই বলবে। চতুর্থত, বাংলাদেশে এখন যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখছেন, এটার ভিত্তি তার সময় রচনা করা। মানবসম্পদ রপ্তানি, তৈরি পোশাক শিল্প স্থাপন, কৃষির এত উন্নয়ন—এগুলো তারই করা। সেইসঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এই কারণে আমি বিএনপিতে যোগ দেই।

প্রশ্ন : এই সরকার অন্তর্বর্তী না হয়ে জাতীয় সরকার হওয়ার একটা আলোচনা ছিল। আপনারা বলছেন, এই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা আরও বেশি করলে ভালো হতো। আপনারা তাহলে জাতীয় সরকারের ব্যাপারে সম্মত হলেন না কেন?

মির্জা ফখরুল: এর দুটি কারণ আছে। আপনি একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কখনোই বাদ দিতে পারবেন না। এটা সব সময় আলোচনার মধ্যে রাখতে হবে। নইলে আমাদের ভুল হবে। আমরা রাতারাতি ইংল্যান্ড, ইউরোপ হয়ে যেতে পারব না। আমাদের বর্তমান অবস্থাকে নিয়েই কাজ করে সামনের দিকে যেতে হবে। এ দেশের নানা মতের নানা রকমের বহু রাজনৈতিক দল আছে। এগুলোকে কীভাবে এক জায়গায় আনা হবে। সবার রাজনৈতিক মতৈক্য কীভাবে আনবেন? এটা খুবই কঠিন। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা এটা যতটা দ্রুত আনতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সেটার সময় লাগেই। আমরা মনে করেছি, এটা যেহেতু একটি অন্তর্বর্তী সরকার, দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই তাদের দায়িত্ব, তাই এর জন্য সময় নেওয়া ঠিক হবে না। সেইসঙ্গে অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ না, বেশ ভালোই।

প্রশ্ন : অভিজ্ঞতা ভালো কী ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়টা বাদ দিয়ে?

মির্জা ফখরুল: না, বাদ দিয়ে না। ওখানেও কিছু ফ্ল ছিল। সবসময়েই কিছু না কিছু ফ্ল ছিল। তারা যে বড় সমস্যা তৈরি করেছেন তা নয়। সেটাও গ্রহণযোগ্য। আমরা মেনে নিয়েছিলাম। সংসদের গিয়েছি না! ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আমরা সংসদে গিয়েছি।

প্রশ্ন : আপনারা যদি বর্তমান সরকারের অংশ থাকতেন তাহলে এখন যে কাজগুলো করতে চাইছেন, সেগুলো করা কী আরও সহজ হতো না?

মির্জা ফখরুল: খুব জটিল হয়ে যেতে পারত। কারণ, কোনো প্রস্তাবে হয়তো অন্য আরেকটি দল বেঁকে বসতে পারতো। তখন আরও সমস্যা হয়ে দাঁড়াত। এখন সরকার যা করছে আমরা মেনে নিচ্ছি তো। দু-একজন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সবাই মেনে নিচ্ছি। 

প্রশ্ন : বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কী সংবাদ আছে আপনার কাছে?

মির্জা ফখরুল: ওনার নামে যেসব মামলা আছে, সেগুলো লিগ্যালি সুপ্রিম কোর্টে গেছে। রায় হয়েছে, সাজা স্থগিত হয়েছে। আর ওনার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। তবে এতটাও ভালো না যে লম্বা কোনো জার্নি করতে পারবেন। এখনো তাকে হুইলচেয়ারে মুভ করতে হয়। বাসার মধ্যেও কোথাও যেতে হলে তাকে সাপোর্ট নিতে হয়। লিভার সিরোসিস একটা বেশি জটিল রোগ। আমরা তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাচ্ছি, কারণ এখানে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সুযোগ নেই। এ ছাড়া, আরও যদি কোনো উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থাকে সেটা এখানে কম। এ বিষয়ে সব ডাক্তাররা একমত হয়েছেন। বাইরে থেকে তিনজন ডাক্তার এসেছিলেন তাকে দেখতে। কিছু চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। তারাও মনে করছেন, বাইরে নিয়ে গেলে সেখানে উন্নত আরও যদি কিছু করার থাকে সেটার করার সুযোগ হবে। সেইসঙ্গে ওনারও একটা মানসিক পরিবর্তন হবে। যদিও তিনি মানসিকভাবে খুবই শক্ত আছেন।

প্রশ্ন : সর্বশেষ যখন আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে, তখন কি রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: এখন তিনি রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। আমার সঙ্গে সর্বশেষ যখন দেখা হয়েছে, তখন কিছু বলেছেন যে কোনটা কীভাবে করলে ভালো হবে। এখন কিছু কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এটা জানতে পেরে কিছু বলেছেন?

মির্জা ফখরুল: ওই রাতেই আমি তার সঙ্গে দেখা করি হাসপাতালে। তিনি একটি চার-পাঁচ লাইনের বিবৃতি দিলেন। পরবর্তীতে ওনার বাসায় কথা হয়েছে। তিনি এই সরকারের প্রতি অত্যন্ত আস্থাশীল। তিনি মনে করেন যে এই সরকার অত্যন্ত সুন্দর একটি নির্বাচন দেবে। আশা করেন যে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে বলেন। কেননা, বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে সবসময়ই কিছু ষড়যন্ত্র হয়। 

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগের আসলে কোনো রাজনীতি নেই। আমি আগেও বলেছি, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সেটা দেখতেই পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ এখন শুধু পরাজিতই না, ধিক্কৃত দলে পরিণত হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের ভেতরেও যারা একটু সেন্সেবল তারাও বলবে যে দলটির মারাত্মক ভুল হয়েছে।

প্রশ্ন : শেখ হাসিনার যেসব টেলিফোন আলাপ প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো কি শুনেছেন?

মির্জা ফখরুল: কয়েকটি শুনেছি। ওসব সাধারণত শুনি না আমি। কারণ, আমি মনে করি যে ওনার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি এখনো সেই আগের ধারাতেই আছেন। এতগুলো মানুষকে তিনি হত্যা করলেন, তার জন্য এতটুকু অনুশোচনা, দুঃখ প্রকাশ তিনি করেননি। উল্টো নানা রকম বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাচ্ছেন। তার কথায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তিনি দেশে একটা বড় অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চান। তিনি হুকুম দিচ্ছেন, ট্রাম্পের পোষ্টার নিয়ে আসতে। কিছুদিন আগেই আমেরিকার গুষ্টি উদ্ধার করেছেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে আজ সেই দেশের প্রেসিডেন্টের ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে আসতে বলেন। ট্রাম্পের পোস্টার নিয়ে যাওয়া লোকদের মারলে সেই ছবি ট্রাম্পের কাছে পাঠিয়ে তিনি সুবিধা নেবেন। একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগের লোকজনদের পরিবর্তন হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: না, যারা দেশে আছেন তাদের কথা বলছি। পালিয়ে যাওয়া লোকদের কথা বলছি না। যারা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চায় এবং আওয়ামী লীগে ছিলেন, তারাও মনে করছেন যে তাদের দলের অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। 

প্রশ্ন : এই আওয়ামী লীগকে যখন নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ আসছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে আপনাদের দ্বিমত কেন?

মির্জা ফখরুল: আক্ষরিক অর্থে আমি একজন লিবারেল ডেমোক্রেট। আওয়ামী লীগ যত খারাপই হোক, বহু পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। তাকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আমি নেবো কীভাবে? এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচনেই সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : দেউলিয়া, ধিক্কৃত এবং হাজারো মানুষকে হত্যাকারী একটি দল; যে দলটি বিদেশে পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা এখনো পরিচালনা করছেন, সেটাকে যদি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব আসে, সেটি কী অপ্রাসঙ্গিক?

মির্জা ফখরুল: আমি অপ্রাসঙ্গিক বলিনি। বলেছি, এই দায়িত্বটা আমার না। জনগণ সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রশ্ন : ধরুন আগামী নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলো। সেই সংসদে কি আপনারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেবেন?

মির্জা ফখরুল: সেটা তখনকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। আর এ নিয়ে ওই সময়ে গিয়ে দলের সিদ্ধান্ত কী হবে, সেটা আমি এখন বলতে পারব না। আমরা উদ্যোগ নিবো কী না, সেটাও বলতে পারব না। কারণ, এটা দলের সিদ্ধান্ত হবে।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে?

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি পারবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে এ দেশের জনগণ। এটা জনগণের ওপর নির্ভর করছে। জনগণ চাইলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে, না চাইলে নেবে না।

তবে, আওয়ামী লীগ যে দুঃশাসন চালিয়েছে, দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, দুর্নীতি করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তার বিচার হতে হবে। শেখ হাসিনা হুকুম দিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করিয়েছেন, তার বিচার হতে হবে।  

প্রশ্ন : ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার পর আলোচনা এসেছে যে ছাত্রদলকেও নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে বিএনপি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি কি এটাই? নাকি এখানে গণতন্ত্রের বিষয় আছে?

মির্জা ফখরুল: বিষয়টিকে নেগেটিভ ভাবে কেন দেখছেন? পজিটিভ ভাবে দেখি আমরা। ছাত্রলীগ একটা পুরোপুরি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। সেখানে কোনো গণতান্ত্রিকতা ছিল না। পুরোপুরি একটি টেরোরিস্ট পার্টি। তারা সন্ত্রাস করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে দলীয়ভাবে ছাত্রলীগ সেভাবে হত্যা করেছে, তার প্রমাণ ও ছবি আমাদের চেয়ে আপনাদের কাছে বেশি আছে। সেই ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের অবস্থা তো এক না।

প্রশ্ন : ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের তুলনা করছি না। শিক্ষার্থীদের হত্যা করতে ছাত্রলীগ আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, চাপাতি ব্যবহার করেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপি মনে করে যে এই সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। সেটা কেন?

মির্জা ফখরুল: ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি এমন বক্তব্য আমরা কেউ দেইনি। তবে, আমরা বলেছি, কারা নিষিদ্ধ হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ।

প্রশ্ন : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এখনো লন্ডনে অবস্থান করছেন। অনেকে আমাদের কাছেও জানতে চান যে তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন আমরা কিছু জানি কি না।

মির্জা ফখরুল: তিনি শিগগির ফিরবেন। ওনার মামলা নিয়ে কাজ চলছে। মামলাগুলো শেষ হয়ে গেলে তিনি দেশে ফিরে আসবেন।

প্রশ্ন : আপনারা কি মামলাগুলো প্রত্যাহার চান, নাকি বিচারিক প্রক্রিয়ায় শেষ চান।

মির্জা ফখরুল: আমরা প্রত্যাহার চাইনি, বিচারিক প্রক্রিয়ায় শেষ চেয়েছি। আমরা বলেছি, কিন্তু তিনি (তারেক রহমান) চান এসব মামলা আইনগতভাবে শেষ হোক। তার বিরুদ্ধে সবই মিথ্যা মামলা।

প্রশ্ন : আইনগতভাবে মামলা শেষ হওয়ার পর তিনি ফিরবেন, নাকি আগেও ফিরতে পারেন।

মির্জা ফখরুল: আগেও ফিরতে পারেন। তিনি যথোপযুক্ত সময়ে ফিরবেন।

প্রশ্ন : সামগ্রিকভাবে এই সরকারের তিন মাসের কার্যক্রমের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?

মির্জা ফখরুল: এখন পর্যন্ত এই সরকার তাদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে। দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য তারা ব্যবস্থাও নিয়েছে। তবে, কতগুলো জায়গায় তাদের ঘাটতি আছে। যেমন: দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এখনো তারা দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি; ব্যবসায়ীদের ভেতরে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে, যেটা এখনো দূর করতে পারেনি।

প্রশ্ন : আইনশৃঙ্খলা?

মির্জা ফখরুল: অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল; পুলিশ পালিয়ে গেছে, থানা থেকে পালিয়েছে, সদর দপ্তরে নেই। সেই তুলনায় ভালো করেছে। পুলিশ বাহিনীটাই প্রশ্নের মুখে পরে গেছে। পুলিশের প্রতি আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে। সেটা তারা যথেষ্ট ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে, কাজ করছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, কোনোভাবেই আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় নেই। আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে, অনেক ভালো আছে। দু-একটা ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, এত জনসংখ্যার দেশে এমন দু-একটা ঘটনা ঘটবে না, সেটা তো বলা যায় না।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতা তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীও পালিয়েছে। একটা অভিযোগ সামনে এসেছে, আওয়ামী লীগের নেতারা যেসব জায়গায় দখল-চাঁদাবাজি করেছে, এখন সেগুলো বিএনপির নেতারা করছেন। বিএনপি নেতারা দীর্ঘদিন এলাকায় থাকতে পারেননি, তাদের নামে শত শত মামলা ছিল। তারা এখন ফিরে এসে আওয়ামী লীগ যেসব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করতো, চাঁদাবাজি করতো, দখল করতো, সেগুলোর কিছু কিছু নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করছে। আপনাদের কাছে এর তথ্য আছে?

মির্জা ফখরুল: এটা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। কিছু কিছু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে, তার তথ্য আমাদের কাছে আছে। সাংগঠনিকভাবে আমরা সেখানে ব্যবস্থাও নিয়েছি। প্রায় ৭০০ নেতাকর্মীকে আমরা বহিষ্কার করেছি। বিষয়টি আমাদের জানা আছে এবং এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক। কোথাও কিছু ঘটনা সেই তথ্য আমাদের কাছে আসে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের নেতৃত্বে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই।

প্রশ্ন : আঞ্চলিকভাবে একটি প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডা আছে যে, এ দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না, তারা আক্রান্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এটাকে কীভাবে দেখে?

মির্জা ফখরুল: আপনিই বলুন এই কথার সত্যতা কতটুকু? ৫ আগস্ট অবশ্যই এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, এই ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। সালমান এফ রহমানের বাড়ি আক্রমণ হয়েছে, লুট করে নিয়ে গেছে। ঠিক একইভাবে যদি কোনো হিন্দু আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে আক্রমণ হয়ে থাকে, সেটা রাজনৈতিকভাবে হয়েছে। সেইদিন সেটা ঠেকানোর কোনো রাস্তা ছিল না। এখন তো আর এমন হামলা হচ্ছে না।

এটা নিয়ে একটা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এটা চালানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতীয় মিডিয়া থেকে। সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে ভারতীয় মিডিয়া থেকে। গতকাল (৯ নভেম্বর) যে ঘটনা ঘটলো সেটা অনতিবিলম্বে টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে প্রকাশ করলো, সত্য-মিথ্যা সব মিশিয়ে। তারাই এই ক্যাম্পেইনটা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা। তারা দেখাতে চাইছে, এখন জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয় না। ভুল একটা ন্যারেটিভ গোটা বিশ্বকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এখন বিশ্ব সেটা খাচ্ছে না।

প্রশ্ন : ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ যে বার্তা দিয়েছেন, তারপরও কি বলা যায় যে এটা বিশ্ব একেবারেই খাচ্ছে না?

মির্জা ফখরুল: ট্রাম্প একা বিশ্ব নন। তিনি এখনো আমেরিকাও নন, দায়িত্ব নেওয়ার পরে হবেন। এখানেও প্রশ্ন থাকে যে এটা কী ট্রাম্পেরই বক্তব্য, নাকি অন্য কারো। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা এত বেশি দায়িত্বহীন বক্তব্য, যেটা একজন রাষ্ট্রনায়ক বা স্টেটসম্যানের পক্ষে দেওয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।

প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। বাংলাদেশের গণমাধ্যম নিয়ে আপনাদের একটি পর্যবেক্ষণ আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মিডিয়া, বিশেষ করে দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলোকে উল্লেখ করে তাদের ফ্যাসিবাদের দোসর বলা হচ্ছে এবং এদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিতে একটা মত তৈরি হচ্ছে। ছোট হলেও এই মত আছে। একটি বড় রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাই, এখানে আপনাদের অবস্থান কী এবং এখানে কী হওয়া উচিত?

মির্জা ফখরুল: আমরা খুব পরিষ্কার ভাবে বলেছি, গণমাধ্যমের পরিপূর্ণ স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি। জিয়াউর রহমান সাহেবই এটা প্রথম নিয়ে এসেছেন।

এখানে আপনি আপনার মতামত বলবেন, তবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বলবেন। আর কিছু না। যেমন: কিছুদিন আছে একটি পত্রিকা খবর প্রকাশ করে দিলো যে, বেগম জিয়ার বাইরে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুত, কিন্তু তিনি যেতে রাজি হচ্ছে না। একেবারে ভিত্তিহীন এবং উল্টো একটা প্রতিবেদন করলো। এই ধরনের খবর প্রকাশ থেকে গণমাধ্যমের বিরত থাকা উচিত, বিশেষ করে যারা ন্যাশনাল লিডার তাদের সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন যথাযথ ভিত্তিটা থাকে। ভিত্তিহীন কোনো প্রতিবেদন যেন করা না হয়।

এখন গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে এই সরকার যেন দ্রুত নির্বাচন দিতে পারে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা। আরেকটি হচ্ছে, যে দলগুলো আন্দোলনের সঙ্গে সত্যিকার অর্থেই জড়িত, তাদের যেন ম্যালাইন না করা হয়। এগুলো আমাদের প্রত্যাশা। মতের মিল না-ই থাকতে পারে, কিন্তু তাদের ম্যালাইন করা উচিত হবে না।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে আমরা খুবই সোচ্চার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। এটা আমরা চাই। আমরা এটাও চাই, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সবকিছু করা হোক। গণতন্ত্রে এই বিষয়টি খুবই জরুরি। একদিকে যেমন অধিকার আছে, তেমনি অপরদিকে দায়িত্বও আছে। সবাইকেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু এই জ্বালাও-পোড়াও, মিডিয়া বন্ধ করে দাও, এটার আমরা সম্পূর্ণ বিরোধী। এমন দু-একটা ঘটনা ঘটেছে এবং আমরা যতটা সম্ভব সেটার প্রতিবাদ করেছি।

প্রশ্ন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।

মির্জা ফখরুল: আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনারা যেন সবসময় ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন, তার পক্ষে আছি আমরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়