শিরোনাম
◈ রাখাইন রাজ্যের মিলিটারি সদরদপ্তর আরাকান আর্মির দখলে, সতর্ক উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ◈ লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ কোটি টাকা পাচার : হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু ◈ এবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি ◈ উপসচিব পুলে কোটা: প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান ◈ জাহাজ থেকে ১৯ নাবিক বিদেশে পলায়ন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে বার্সেলোনাকে ২-১ গোলে হারালো অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ◈ ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের কাছে এশিয়া কাপের ফাইনালে হেরে গেলো বাংলাদেশ ◈ রাহাত ফতেহ আলী খান ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা  বিপিএল মিউজিক ফেস্টে গান গাইবেন ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় দিনে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ! ◈ একবার চার্জে ৬৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে, সৌদি আরবে প্রথম হাইড্রোজেনচালিত বাস চালু

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০১:২৫ দুপুর
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আপনি বাংলাদেশে অবস্থান করলে এমনটা ভাবতে আপনাকে পাগলাটে হতে হবে : আল-জাজিরাকে প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে। এটা আরও কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।

গতকাল রোববার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুকে জলবায়ু সম্মেলনের ফাকে তিনি এ সাক্ষাৎকার দেন। 

উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, ‘শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল। বাইডেন প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?’

উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশে অবস্থান করলে এমনটা ভাবতে আপনাকে পাগলাটে হতে হবে। শিক্ষার্থীরা রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। যখন মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সবদিক থেকে তাঁর (শেখ হাসিনা) বাসার দিকে যাচ্ছিল, তখন তাঁর পরিবারই তাঁকে পালাতে বলেছে। কারণ, অন্যথায়, মব পুরো বাড়ি দখল করবে।...এই পরিস্থিতিতে দেশ থেকে বের হতে সহায়তার জন্য তিনি সেনাবাহিনীকে ডেকেছিলেন। আর সেনাবাহিনী তাঁকে দেশ থেকে বের হতে, ভারতে চলে যেতে সহায়তা করেছিল। এভাবেই বিষয়টি ঘটেছিল।...এটা ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আর তাতে দেশের সব মানুষ যোগ দিয়েছিল।’

উপস্থাপক বলেন, ‘ঘটনা যখন ঘটল, তা কি আপনাকে অবাক করেছিল? কিংবা আপনি কি ধারণা করতে পেরেছিলেন যে এমন কিছু ঘটবে?’

এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রথমত আমি তখন দেশে ছিলাম না। তাই ঘণ্টায় ঘণ্টায় কী ঘটছিল, তা আমি জানতে পারছিলাম না। গণমাধ্যমে যা আসছিল, আমি শুধু তা-ই জানতে পারছিলাম। আমি চূড়ান্ত ফলাফল জানতে পেয়েছিলাম।...কারণ আমাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমাকে ফোন করে বলা হয়েছিল, আমরা আপনাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। এই পরিস্থিতিতে দেশে তিন দিন সরকার ছিল না। কারণ, আমি দেশে ছিলাম না। দেশে আসার পর আমি শপথ গ্রহণ করি। এভাবে সরকার গঠিত হয়। সুতরাং তখন এই অনিশ্চয়তা, অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছিল। এ সবকিছু ঘটানোর জন্য কেউ কোথাও থেকে পরিকল্পনা করেনি। এ রকম কিছু ঘটেনি।’

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অতীতে কখনো কথা হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির মতো রিপাবলিকান পার্টিতে তাঁর বন্ধু আছে।

২৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে সৃষ্ট সংকট, অন্তর্বর্তী সরকার, চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, আগামী নির্বাচন, সংখ্যালঘু পরিস্থিতি, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কেমন হতে পারে—এমন অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস।

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনার প্রশাসন সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়টি যেভাবে সামলাচ্ছে, তা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আপনি কীভাবে বিষয়টি সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন?

উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ের ওপর বারবার পূর্ণ মনোযোগ রাখছি। এ কারণে আমরা অব্যাহতভাবে মনে করিয়ে দিই যে দেখুন, আপনারা এ দেশের নাগরিক। সংবিধান আপনাকে আপনার অধিকার দিয়েছে, স্বাধীনতা দিয়েছে, নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার দিয়েছে, নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। এগুলো সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।...তাই সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো সংবিধানে যেসব অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাতে নাগরিকেরা ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা।’

প্রধান উপদেষ্টাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে।

উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘সহিংসতা বাড়েনি। আমি বলব, সহিংসতা কমেছে। বিপ্লবের সময় সহিংসতা শুরু হয়েছিল। হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের ওপর সহিংসতা হয়নি। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের লোক ছিল। সুতরাং সহিংসতা হয়েছিল আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।...তারা (গণ-অভ্যুত্থানকারীরা) আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আর এসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল।’

তাহলে আপনি কীভাবে এ বিভক্তির সুরাহা করতে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘না, আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিভক্তি দেখতে পাই না। আমরা বলেছি, আমরা সবাই মিলে একটি পরিবার। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা একে অপরের শত্রু। আমাদের আইন আছে, অধিকার আছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সব অধিকার নিশ্চিত করা।’

সাক্ষাৎকারের এই পর্যায়ে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রসঙ্গ আসে। সাক্ষাৎকারের উপস্থাপক বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় জানেন, মার্কিন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তাঁর মতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তার নিন্দা জানিয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এটা বেশির ভাগই অপপ্রচার (প্রোপাগান্ডা)। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অপপ্রচার। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই অপপ্রচারের বেশির ভাগই ভারতীয় দিক থেকে আসা।...সম্ভবত এই উত্তেজনা জিইয়ে রাখার জন্য এটা করা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। হিন্দুদের সবচেয়ে বড় পূজা হাজার হাজার স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশে কোনো অঘটনা ছাড়াই উদ্‌যাপিত হয়েছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তেজনা থাকা ও তা মোকাবিলা করাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে অতীতে কখনো আমার আলাপ-আলোচনা হয়নি। তাই ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর আপনি যদি রিপাবলিকান পার্টির কথা বলেন, তাহলে বলব, আমার ডেমোক্রেটিক পার্টিতে বন্ধু আছে, রিপাবলিকান পার্টিতে বন্ধু রয়েছে। আমাকে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল দিতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস) ভোট দিয়েছিল। এ বিষয়ে উভয় পার্টির সদস্যরা শতভাগ একমত হয়েছিলেন।

আমাকে এ মেডেল দেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। রিপাবলিকান পার্টি উদ্বিগ্ন বা ডেমোক্রেটিক পার্টি উদ্বিগ্ন বা ট্রাম্প উদ্বিগ্ন—এই হিসেবে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে হঠাৎ করে কোনো নেতিবাচক কিছুর উদ্ভব হবে—এমন শঙ্কা আমি দেখছি না। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এমন নয়, যা প্রেসিডেন্ট কে, তার ওপর নির্ভর করে। দেশটির এই নীতির একটি স্থিতিশীল অংশ আছে।’

ড. ইউনূসের এমন জবাবে তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে আপনি কি মনে করেন না যে তিনি (ট্রাম্প) এই অঞ্চলের ব্যাপারে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারেন?’

উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি তেমনটা মনে করি না। একেবারেই না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়