কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়ে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচেছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবাশিষ ভট্টাচার্য এবং তার পরিবার। মুসলিম পাড়ায় শৈশব কাটানোর সুবাদে শিখে রাখা ‘কালেমা’ পাঠ করেই তিনি এই সংকটময় মুহূর্তে রক্ষা পান বলে জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পর্যটন এলাকা ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ খ্যাত বৈসারনে ঘুরতে গেলে হামলার শিকার হন। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় গুলি। তার সন্তান প্রথম দেখতে পান যে দুইজন পর্যটককে প্রকাশ্যে গুলি করা হচ্ছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে পরিবারটি একটি গাছের পেছনে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের দিকেই এগিয়ে আসে এবং হাঁটু গেড়ে বসতে বলে। এক পর্যটক আদেশ না মানায় তাকে গুলি করে হত্যা করে এক মুখোশধারী হামলাকারী। তখন অনেকেই 'কালেমা' পাঠ করতে থাকেন। দেবাশিষও কালেমা পাঠ শুরু করেন, যা শেষ পর্যন্ত তাদের প্রাণ বাঁচায়।
"আমি জানতাম কালেমা, কারণ আমি মুসলিম পাড়ায় বড় হয়েছি। আমি জানতাম এই আয়াতগুলো, যা আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে," — বলেন অধ্যাপক দেবাশিষ।
সন্ত্রাসীরা যখন জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি রাম নাম নিচ্ছো?" তখন তিনি জোরে কালেমা পাঠ করে যান। তারা বাধা না দেওয়ায়, কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সন্ত্রাসীরা। এরপর দেবাশিষ ও তার পরিবার পাশের বনে পালিয়ে যান এবং দুই ঘণ্টা পর স্থানীয়দের সহায়তায় প্রধান সড়কে পৌঁছান। পরে তারা শ্রীনগরে ফিরে যান।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আসাম রাজ্য সরকার পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে। তারা দিল্লি ও কলকাতা হয়ে শিলচরে পৌঁছাবেন।
এদিকে এই হামলার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আসাম সফর স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বৃহস্পতিবার আসার কথা থাকলেও নিরাপত্তা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় শোক এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল। অধ্যাপক দেবাশিষের সাহসিকতা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত যে প্রাণরক্ষায় সহায়ক হয়েছে, সেটি অনেকে মানবিকতার এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।