রিপন বোড়া বলেছেন, মুসলিমবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে বিজেপি সারা ভারতে তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিজেপি এজেন্ডা এক দেশ, এক ধর্ম বাস্তবায়ন।
এক দেশ এক ধর্ম এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন
ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কর্তৃক পরিচালিত মানবিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে এক কোটিরও বেশি মুসলিম।
এ ঘটনায় আসামের বিরোধীদলীয় নেতা (তৃণমূল কংগেস) রিপন বোড়া বলেছেন, মুসলিমবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে বিজেপি সারা ভারতে তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিজেপি এজেন্ডা এক দেশ, এক ধর্ম বাস্তবায়ন।
রোববার মিডল ইস্ট মনিটরের এক তথ্যচিত্রে এ বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
তথ্যচিত্রে রিপন বোড়া বলেছেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ক্রাকডাউনের নামে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী আদর্শের সাথে সঙ্গতি রেখে, দলটি অবৈধ গণগ্রেফতারের মাধ্যমে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করেছে, নির্বিচারে তাদের বাড়িঘর, মসজিদ ও মাদরাসা ভেঙে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে আটক কেন্দ্রে আটক করেছে। এসব আটক ব্যক্তিদের সাথে দুর্ব্যবহার করা তারা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তথ্যচিত্রে বলা হয়, ধারাবাহিক ঘৃণামূলক বক্তৃতায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বারবার মুসলিমদের বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমরা আসাম রাজ্য দখল করবে।
আসামে বাড়িঘর ভেঙে দেয়ার কারণে ওই এলাকার সবাইকে এখন শিবিরে বসবাস করতে হচ্ছে। শিবিরে বসবাসকারী আসিয়া খাতুন নামে এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। তার সাথে দেখা করতে গেছিলাম, ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি, তারা ছাড়েনি। আর দু’য়েক দিন দেখব, তাকে না ছাড়লে আগে বেডিরে বিষ খাওয়ামু, পরে নিজে খামু।’
এরকম আর্তনাদ শুধু তার নয়, ওই এলাকায় বসবাসরত প্রত্যেকটি মুসলিম নারীর। ফরিদা বেগম নামে আরেক নারী প্রতিবেদককে তার ঘরবাড়ি ভেঙে ফাঁকা করে ফেলা যায়গা দেখিয়ে বলছিলেন, এইখানে আমার বড় ঘর ছিল, এইখানে আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকতাম। এই পাশে আমার গোয়ালঘর ছিল। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমার কয়েকটি গরু-ছাগল ছিল। এখন আর কিছুই নেই। শিবিরে আমরা খুব খারাপ আবস্থায় আছি।
সালেহা নামে আরেক নারী বলেন, ৪০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। তারপরও তারা আমাদের বাড়িঘর ভেঙে তাড়িয়ে দিয়েছে।
ওই নারী প্রতিবেদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনার কিছু করেন, না হলে আমাদের আর বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। আর কিছু না করতে পারলে আমাদের গুলি করে মেরে ফেলে রেখে যান। আর কত ভুগব আমরা।
অল ইন্ডিয়া ইউনাইডেড ডেমোক্রাটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) মুখপাত্র আমিনুল ইসলাম বলেন, সংখ্যালঘুরা ভারতে সবসময় নির্যাতিত।
তিনি বলেন, যদি আপনি মুসলিমদের নির্যাতন করেন তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার পক্ষে থাকবে। আর যদি মুসলিমদের আপনি বাংলাদেশী, ভিনদেশী বা নৃগোষ্টি হিসেবে দেখাতে পারেন তাহলে ৩৪ শতাংশ ভোট আপনার পক্ষে না থাকলেও বাকি অংশের সমর্থন বিজেপি পাবে।
প্রতিবেদক বলেন, ভারতে ইসলামোফোবিক আক্রমণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ভুক্তভোগীদের সাথে কখা বলে বুজেছি ২০২৬ সালের রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়কে নির্যাতন করার জন্য আইনকে কিভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা আমরা দেখেছি।
এদিকে শুধু আসামে নয় ভারতের উত্তরাখণ্ডের নন্দ নগরে এক মুসলিম নাপিতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে শুরু হয় সহিংসতা। এরপর তা খুব দ্রুতই সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু মানুষ হামলার শিকার হন; রেহাই পায়নি তাদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট কিংবা ধর্মীয় স্থান। তখন বেশিরভাগ মুসলিম পরিবারই শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু আহমেদ হাসান নামের এক ব্যবসায়ী এখনো সেখানে শিকড় আঁকড়ে পড়ে আছেন।
নাজিবাবাদ থেকে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হারুন আনসারি নামের এক মুসলিম বাসিন্দা জানান, তার মাথায় একাধিক আঘাত লেগেছিল। তিনি আরো বলেন, ‘আমার শুধু মনে আছে যে মানুষ আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তারপর আর কিছুই মনে নেই।
আনসারিকে মারধরের পর, স্থানীয় মুসলিমরা—যাদের মধ্যে হাসানও আছেন—আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তাতেও রক্ষা হলো না তাদের। শত শত উগ্রবাদী হিন্দু এসে মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। হাসান বলেন, এ সময় আমরা বারবার পুলিশকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। এমনকি আমার পুরনো হিন্দু বন্ধুরাও সেদিন ফোন ধরেনি।
সন্ধ্যার পর উগ্রবাদীরা যখন চলে গেল, মুসলমানরা সবাই আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এলেন। রাত গভীর হতেই হাসান দোকানে যান। গিয়ে দেখেন, তার ‘দ্য হাসান ড্রাই ক্লিনার্স’ নামের দোকানটি পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত। শাটার ভাঙা, ধোয়া কাপড় রাস্তায় ছড়িয়ে, কাউন্টার গুঁড়িয়ে গেছে। সেখানে তালাবদ্ধ ড্রয়ারে তিনি সন্তানদের বিয়ের জন্য চার লাখ টাকা সংরক্ষণ করেছিলেন। কিন্তু পুরো টাকাই চুরি হয়ে যায়।
তার দোকানের নামফলক পড়ে ছিল নন্দাকিনী নদীর ধারে, ছিন্নভিন্ন এক ধ্বংসাবশেষের মতো। এসব ভাঙচুরের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সেই দিনটা কখনো ভুলতে পারব না।
পরদিন আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি
আগের দিন আঘাত পাওয়া হারুন বলেন, ২ সেপ্টেম্বর হিন্দু উগ্র-ডানপন্থী সংগঠনগুলো আরো বড় বিক্ষোভের ডাক দেয়। তারা আশপাশের শহর থেকে লোক এনে নন্দ নগরকে উত্তপ্ত করে তোলে। তাদের ডাকে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। অথচ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছিল মাত্র ৬০ থেকে ৭০ জন। আমরা বারবার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। তবুও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।’
ঘৃণামূলক বক্তব্যের জন্য পরিচিত হিন্দু নেতা দর্শন ভারতীও সেদিন নন্দ নগর আসেন। তার বক্তব্যের পর উগ্র জনতা নতুন করে হামলা চালায় মুসলিমদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ও ধর্মীয় স্থানে। এ সময় তারা একটি পাঞ্জেগানা মসজিদও গুঁড়িয়ে দেয়। এক মুসলিমের গাড়ি তুলে ফেলে দেয় নদীতে। ভারতীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আল জাজিরার প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।
হাসান বলেন, ‘যখন হিন্দুরা পাথর ছুঁড়ছিল, তখন আশেপাশের মুসলিম পরিবারগুলো আমার বাড়ির দোতলায় এসে আশ্রয় নেয়। কারণ, বাড়িটি বহুতল হওয়ায় ও শক্ত লোহার গেট থাকায় তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করেছিল তারা। আমার সেই দিনের কথা মনে করলে এখনো গা শিউরে ওঠে।’
ঘটনার দিনই অভিযুক্ত আরিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেয়। কিন্তু এরপর পুলিশ মুসলিম পরিবারগুলোকে জানিয়ে দেয় যে তারা আর মুসলমানদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবে না। রাতের আঁধারে পুলিশই মুসলিমদের গাড়িতে করে পার্শ্ববর্তী শহরে নামিয়ে দিয়ে আসে।
এটাই ছিল অধিকাংশ মুসলিম পরিবারের জন্য নন্দনগরের শেষ দিন।
‘এটাই আমার ঠিকানা’
কিন্তু আহমেদ হাসান নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। তিনি বলেন, ‘এটাই আমার বাড়ি। আমার জন্ম, শৈশব, জীবন, সবকিছু তো এই শহরের সাথে জড়িত। আমার অতীত, আমার শিকড়, সবই তো এখানেই।’ এ সময় তিনি আরো জানান, তার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব সরকারি নথিপত্রেই ঠিকানা হিসেবে লেখা রয়েছে নন্দনগর।
হাসানের পরিবার এরপর কিছু দিনের জন্য ২৬৬ কিলোমিটার দূরে দেরাদুনে চলে যায়। সেখান থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর হাসান ও মোহাম্মদ আয়ুম নামের আরেক বাসিন্দা হাইকোর্টে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন। আদালত চামোলি জেলার পুলিশ প্রধানকে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়।
এ বিষয়ে হাসান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর মনে হয়েছিল এবার নিরাপদে ফিরতে পারব। কিন্তু কেউই আর ফিরতে রাজি হয়নি। ভয়ে সব পরিবার এখন দূরেই থাকে।’
তার ভাইয়ের সেলুন বন্ধ হয়ে যায় বাড়িওয়ালার হুমকির কারণে। আত্মীয়রাও এগিয়ে আসেননি সহায়তায়।
সাহস দেখালেন হাসানের স্ত্রী
হাসান বলেন, ‘অনেক ভাবনা-চিন্তার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আমাকে ফিরতেই হবে। সবকিছু তো নন্দ নগরেই রয়ে গেছে।’ এসময় তার স্ত্রীই প্রথমে সন্তানদের নিয়ে ফিরে আসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমরা না ফিরি, তাহলে আমাদের জীবনধারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে।’
তবুও হাসানের পরিবার এখনো দ্বিধায় আছে। চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ের স্কুল শেষ করেছে। হাসান দেরাদুনে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু তার স্ত্রী মনে করেন, যদি তারা আবার শহর ছেড়ে যান, তবে বাড়ি ও দোকান স্থানীয়দের দখলে চলে যেতে পারে।
অবশেষে ১৬ অক্টোবর হাসান পৌঁছান নন্দ নগরে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার দোকানের সামনেই সরাসরি প্রতিযোগিতার জন্য একটি ড্রাই-ক্লিনিং দোকান খুলে বসেছে।
হাসান নিজের দোকানটি মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো হিন্দু কর্মী তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়নি। তারা জানিয়েছে, ‘তাদেরকে পুরোপুরিভাবে মুসলিমদের বয়কট করার জন্য বলা হয়েছে। তারা এতটা ভয় ছড়িয়ে দিয়েছে যে কেউ আমাদের দোকান মেরামতেও সাহস করছে না। কর্মীরা আমাকে জানিয়েছে, হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের মুসলমানদের সাহায্য না করার নির্দেশ দিয়েছে।’
হিন্দুত্ববাদ হলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ। এর একটি আধাসামরিক সংগঠন রয়েছে। তার নেতারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টিসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছেন।
অবশেষে হাসান নিজেই দোকান মেরামত করে তা খোলেন। কিন্তু কোনো গ্রাহক আসেনি। তিনি তার আগের নিয়মিত হিন্দু ক্লায়েন্টদের ফোন করেন। কিন্তু তারা আসতে অস্বীকার করে। যারা আসতো, তাদের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর গুন্ডারা হুমকি দিতো এবং হিন্দু ড্রাই-ক্লিনারের কাছে যেতে বলতো। হাসান বলেন, ‘সেদিন আমি বুঝলাম যে ড্রাই-ক্লিনিংয়েরও একটি ধর্ম আছে।’
নতুন নন্দ নগরে হাসানের পরিবারের লড়াই এখানেই শেষ হয়নি। সেখানেও তাদের ধর্ম তাদের আলাদা করে ফেলেছে। তিনি জানান, তার ১৬ বছরের বড় মেয়েকে স্কুলে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে ধর্মের কারণে।’ এক সহপাঠী তাকে বলেছিল, তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। কারণ সে একজন মুসলিম। আমরা যখন অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করি, এরপর নির্যাতন বন্ধ হয়।’
হাসান এবং শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অন্যান্য মুসলিমদের জন্য ন্যায়বিচার এখনো অধরাই রয়ে গেছে। ১ সেপ্টেম্বরের হামলার পরে উত্তরাখণ্ড পুলিশ একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নথিভুক্ত করে। সেটি নন্দ নগর থানার ওসি সঞ্জয় সিং নেগি নিজেই করেন।
নথিতে তিনি লেখেন, ‘আমি দেখি ২৫০-৩০০ জন লোক জোরে জোরে ‘একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে’ গালিগালাজ করছে। আমি তাদের থামাতে গেলে তারা আমাকে সরিয়ে দেয়। তারপর আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের ডেকে অতিরিক্ত পুলিশ চেয়েছিলাম।’ এরপর তিনি লেখেন, হিন্দুরা মুসলিমদের দোকান ভাঙচুর শুরু করে এবং একটি মসজিদও আক্রমণ করে।
তিনি আরো লেখেন, ‘উত্তেজিত জনতা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে কাজ করছিল। তাদের আক্রমণে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নারী ও শিশুরা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে।’ তিনি বলেন, এ সময় হিন্দুরা লাঠি, বেলচা ও লোহার রড নিয়ে এসেছিল। তবুও উত্তরাখণ্ড পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি।’
আল জাজিরা চামোলি জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট সর্বেশ পানওয়ারের সাতে যোগাযোগ করে। কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি।
নন্দ নগর হয়ে উঠেছে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের এক বৃহত্তর পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির নেতৃত্বে মোদির বিজেপি শাসিত এই রাজ্য বহু শহরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ এবং বৈষম্যের দ্রুত বৃদ্ধি দেখেছে। শহরের পর শহরে, উগ্র-ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের দেশত্যাগে বাধ্য করতে প্রচারণা শুরু করেছে। অনেকক্ষেত্রেই তারা সফলও হচ্ছে।
সেখানে মুসলিমদের দোকান লুটপাট বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। বয়কট চলে অর্থনৈতিকভাবে। প্রায়ই মুসলমানরা শারীরিক সহিংসতারও মুখোমুখি হন। সম্প্রতি ধামির সরকার একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করেছে, যা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিজস্ব ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখে।
আদালত কয়েকবার হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু অনেক কর্মী মনে করেন আরো কিছু করা দরকার। দেরাদুনের এক কর্মী খুরশিদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের আদালত এখনো বোঝে না যে মুসলিমরা কতটা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।’ খুরশিদ হাইকোর্টে আবেদন করতে হাসানকে সাহায্য করেছিলেন। মোটকথা, নিপীড়ন চলছে সব দিক থেকে- শারীরিক, মানসিক, আর্থিক।’
তবুও সম্প্রতি হাসান একটুখানি আশার আলো দেখতে পান।
১ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার প্রায় পাঁচ মাস পর ১৯ ফেব্রুয়ারি, মুসলিমবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী একজন হিন্দু ব্যক্তি হাসানের দোকানে আসেন। ওই সময় তার স্ত্রী দোকান চালাচ্ছিলেন। লোকটি একটি কোট এবং ট্রাউজার নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করেন, সেগুলো দ্রুত ড্রাই-ক্লিন করা যাবে কিনা। হাসানের স্ত্রী তখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি তো আমাকে বোন বলেছিলে এবং বলেছিলে মুসলমানরা যেন চলে যায়?’ লোকটি জবাব দেয়, ‘যা হয়েছে ভুলে যাও। তোমার কাজ খুব ভালো। তাই তোমার কাছেই এসেছি।’
ঘটনাটি মনে করে হাসান হেসে বলেন, ‘আমি এই দিনটা দেখতে পারলাম। কারণ আমি গিয়ে ঝগড়া করিনি।’
তবুও ভাঙা বন্ধুত্বের যন্ত্রণা তাকে কষ্ট দেয়। যখন মুসলিম পরিবারগুলো নিজেদের জিনিসপত্র নিতে ফিরে আসত, তখন তাদের সাথে আমরা একসাথে বসে হাসি-ঠাট্টা করতাম। তারা জিজ্ঞাসা করতো, আমরা কেন ফিরে এসেছি। এতে আমার হৃদয় ভেঙে যায়। শারীরিক সহিংসতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু সামাজিক নিঃশব্দ সহিংসতা এখনো চলছে।’
তবু ভবিষ্যৎ নিয়ে এবং নন্দ নগর নিয়ে আশাবাদ হারাতে রাজি নন হাসান।