শিরোনাম
◈ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ছয় সদস্য গ্রেফতার ◈ ‌‘এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম এবং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি মাইলফলক, ◈ কা‌র্ডিফ সি‌টির বিরু‌দ্ধে হামজা চৌধুরীর শেফিল্ডের দুর্দান্ত জয় ◈ পা‌কিস্তান ক্রিকেট লি‌গে  সর্বোচ্চ উইকেটের ইতিহাস গড়লেন হাসান আলি ◈ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ভূলন্ঠিত করা হয়েছে : অধ্যাপক আলী রীয়াজ  ◈ ‘আ.লীগের মিছিলের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা পেলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’ (ভিডিও) ◈ ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি নিয়ে আবারও রাস্তায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ◈ ‘করোনাভাইরাস চীনের ল্যাবে তৈরি’ বলছে হোয়াইট হাউসের নতুন ওয়েবসাইট  ◈ বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর হজে যাবেন ৮৭ হাজার জন, নেওয়া হচ্ছে যেসব ব্যবস্থা ◈ একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণ-অভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৪০ সকাল
আপডেট : ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীন-ইইউর গোপন অস্ত্র ব্যবহার

আল জাজিরা: ট্রাম্প কংগ্রেসকে উপেক্ষা করে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এসব শুল্ক আরোপ করছেন। তবে রিপাবলিকান ডন বেকন, সিনেটর চাক গ্রাসলি এবং ডেমোক্র্যাট মারিয়া ক্যান্টওয়েল কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব আনছেন, যাতে ট্রাম্পকে যেকোনো নতুন শুল্কের বিষয়ে কংগ্রেসকে অবহিত করতে বাধ্য করা যায়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির জেরে যখন যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য অংশীদারদের উপর একের পর এক শুল্ক আরোপ করছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে। ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া নতুন প্রতিশোধমূলক শুল্কের মাধ্যমে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়েছে।

চীন ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের শুল্কের পাল্টা দিতে শুরু করেছে। একদিকে এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে, অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণায় ইইউ থেকে আমদানিকৃত সকল পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে এই হার ১০৪ শতাংশে পৌঁছেছে।

ইইউর পাল্টা শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে মার্কিন অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের পাশাপাশি কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন ও সরাসরি লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। যদিও এই শুল্কগুলো ধাপে ধাপে কার্যকর হবে। তবুও এগুলোর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে বিশাল হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ রফতানি পণ্য সয়াবিন কি তবে ওয়াশিংটনের অ্যাকিলিস হিল হিসেবে প্রমাণিত হতে যাচ্ছে? চীন ও ইইউ এই পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে কি যুক্তরাষ্ট্রকে কৌশলগতভাবে চাপে ফেলতে সক্ষম হবে?

মার্কিন অর্থনীতিতে সয়াবিনের গুরুত্ব

সয়াবিন, আস্ত মটরশুটি হোক কিংবা পশুখাদ্য বা তেলের আকারে, মার্কিন কৃষিখাতের মেরুদণ্ডস্বরূপ। এটি দেশের বৃহত্তম কৃষি আয়কারী পণ্য এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ০.৬ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে ৫ লাখেরও বেশি সয়াবিন উৎপাদক রয়েছেন। জাতীয় তৈলবীজ প্রক্রিয়াকরণ সমিতি ও ইউনাইটেড সয়াবিন বোর্ডের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, এই খাত সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অন্তত ২ লাখ ২৩ হাজার পূর্ণকালীন চাকরি সৃষ্টি করে।

মোট বাজারমূল্যে এই খাতের মূল্য দাঁড়ায় ১২৪ বিলিয়ন ডলার- যা কেনিয়া কিংবা বুলগেরিয়ার সম্পূর্ণ অর্থনীতির চেয়েও বেশি। যদিও দেশে এর চাহিদা বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন শিল্পের মূল সাফল্য রফতানির উপর নির্ভরশীল।

প্রধান রফতানি গন্তব্য কারা?

ওইসি (অভজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি) অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সয়াবিন রফতানি করেছে- যা অন্যান্য কৃষিপণ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এই রফতানির অর্ধেকেরও বেশি যায় প্রায় ৮০টি দেশে।

সবচেয়ে বড় বাজার চীন- যেখানে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন রফতানি হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে ইইউ, বিশেষ করে জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস, যারা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানি করে।

তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চীন ও ইইউ উভয়ই এখন মার্কিন লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত। ওয়াশিংটনের মতে, এই দেশগুলো মার্কিন পণ্যের উপর অন্যায় শুল্ক আরোপ করে চলেছে।

পাল্টা শুল্কে সয়াবিনই কি প্রধান অস্ত্র?

ইইউ এবং চীন দুই পক্ষই এখন মার্কিন সয়াবিনকে লক্ষ্যবস্তু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইইউ ইতোমধ্যে প্রতিশোধমূলক শুল্কের আওতায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। সূত্র বলছে এতে সয়াবিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইইউ পার্লামেন্ট বুধবার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপে সম্মতি দিয়েছে, যা ১৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে কার্যকর হবে।

অন্যদিকে, চীনও মার্কিন কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন, মাংস এবং শস্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। নতুন শুল্ক অনুযায়ী, শুধুমাত্র সয়াবিনের উপর ৪৪ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে আমেরিকান রফতানিকারকদের। বৃহস্পতিবার থেকে আরো ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছে বেইজিং।

চীন কি বিকল্প বাজার খুঁজে পেয়েছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধের পর চীন বিকল্প সরবরাহকারীর খোঁজে ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বর্তমানে ব্রাজিল চীনা সয়াবিন বাজারের অর্ধেকেরও বেশি দখলে রেখেছে।

২০২৪ সালে চীনে ব্রাজিল ৩৬.৬ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন রফতানি করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি ছিল মাত্র ১২.১ বিলিয়ন ডলার।

কৃষকদের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন কৃষকরা ক্রমবর্ধমানভাবে এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। অ্যামেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্কট গার্ল্ট বলেন, ‘চীন আমাদের সয়াবিন রফতানির ৫২ শতাংশ কিনেছে ২০২৪ সালে।’ তিনি বলেন, এমন একটি ক্রেতাকে প্রতিস্থাপন করা সহজ নয়।

সয়াবিন চাষি ডেভিড ওয়ালটন এবিসিকে জানান, ‘যদি এই বাণিজ্য যুদ্ধ শরতের পরেও স্থায়ী হয়, তাহলে আপনি কৃষকদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে দেখবেন।’

রাজনৈতিক অভিঘাত

ট্রাম্প কংগ্রেসকে উপেক্ষা করে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এসব শুল্ক আরোপ করছেন। তবে রিপাবলিকান ডন বেকন, সিনেটর চাক গ্রাসলি এবং ডেমোক্র্যাট মারিয়া ক্যান্টওয়েল কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব আনছেন, যাতে ট্রাম্পকে যেকোনো নতুন শুল্কের বিষয়ে কংগ্রেসকে অবহিত করতে বাধ্য করা যায়। অবশ্য এটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, হাউস ও সিনেটে রিপাবলিকানদের প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত।

রাজনৈতিক অভিঘাত শুধু কংগ্রেসে সীমাবদ্ধ নয়। মার্কিন সয়াবিন রফতানির বড় অংশ আসে লুইসিয়ানা থেকে-যা হাউস স্পিকার মাইক জনসনের নিজ রাজ্য। তবুও তিনি শুল্ক বৃদ্ধির পক্ষে কথা বলেছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘শুরুতে এটি কঠিন হতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি যে শেষ পর্যন্ত এটি মার্কিনিদের জন্য অর্থবহ হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়