মহসিন কবির: যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান পাল্টাপাল্টি হুমকিতে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি হুমকি কারনে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নতুন করে পারমাণবিক সমঝোতায় যদি রাজি না হয় তাহলে ইরানের ওপর সামরিক হামলা হতে পারে। ট্রাম্প পরিষ্কার করে বলেন, যদি তারা (ইরান) চুক্তিতে না আসে, তাহলে বোমা হামলা চালানো হবে।
২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি করে পশ্চিমা ৬টি দেশ। কিন্তু ট্রাম্প প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। তারপর নতুন করে আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। তাতে কোনো ফল আসেনি।
তবে ট্রাম্প এবার বলেছেন, তার প্রশাসন উন্মুক্ত আলোচনা চায়। ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে হবে। ওদিকে ট্রাম্পের এমন হুমকির জবাব দিয়েছেন ইরানে নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করেছেন। স্বীকার করেছেন পরোক্ষ আলোচনা হতে পারে।এক্ষেত্রে ওমান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আছে।
একই সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এনবিসির ক্রিস্টেন ওয়েলকারের সঙ্গে ফোনকলে ট্রাম্প এমন মনোভাব ব্যক্ত করেন।
তবে ট্রাম্পের এমন কড়া বার্তার পরও নিজ অবস্থানে অনড় ইরান। যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে পাল্টা আঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।
সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমসের মতে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করেছে যা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র-সম্পৃক্ত অবস্থানগুলোতে আঘাত করার কার্যকরী ক্ষমতা রাখে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘এই উৎক্ষেপণ-প্রস্তুত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে অবস্থিত, যা বিমান হামলা মোকাবিলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।’
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র বোমা হামলা চালালে তাদের জন্যও শক্তিশালী প্রতিঘাত অপেক্ষা করছে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
তিনি বলেন, যদি তারা কোনো দুষ্টচক্র সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিঘাত পাবে। যদি তারা অতীতের মতো দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তবে ইরানের জনগণই তাদের মোকাবিলা করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই অনড় অবস্থানের পেছনে ২০১৮ সালের ট্রাম্পের নেয়া সিদ্ধান্তের প্রভাব রয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। এরপরই ওয়াশিংটন ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ সেখানে সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য পশ্চিমাদের দোষারোপ করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২২-২৩ সালে হিজাব নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক তরুণী মাসা আমিনির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ এবং ২০১৯ সালে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘটনা।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁরা খামেনির আদেশ অনুসারে পরোক্ষভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
গতকাল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই টুইট করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের বোমা হামলার প্রকাশ্য হুমকি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার মূলনীতির এক মর্মান্তিক অবমাননা। সূত্র: রয়টার্স