শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৮ মার্চ, ২০২৫, ১২:৫২ দুপুর
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নেতানিয়াহু থেকে জোলানি, সিরিয়াকে ধ্বংস করতে  ষড়যন্ত্রকারী এই চক্র কী চাইছে?

এল আর বাদল : আরব বিশ্বের একজন বিশিষ্ট বিশ্লেষক বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) একটি দৈনিকে প্রকাশিত তার সম্পাদকীয়তে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং দেশটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।

আন্তঃআঞ্চলিক দৈনিক রাই আল-ইয়াওমের প্রধান সম্পাদক এবং আরব বিশ্বের একজন বিশিষ্ট বিশ্লেষক আব্দুল বারী আতাওয়ান দৈনিকটি এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, অবশেষে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসন এবং দখলদারিত্ব সম্পর্কে সিরিয়ার নতুন সরকার চার মাস ধরে নীরব থাকার পর, আহমেদ আশ-শার (আবু মুহাম্মদ ঢ়আল-জোলানি) সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি আগ্রাসনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। 

বার্তাসংস্থা তাসনিমের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আব্দুল বারী আতাওয়ান বলেন, সিরিয়ার সরকার দারা প্রদেশে দখলদার ইসরাইলি সেনাদের বোমা হামলা এবং সেখানে তাদের অগ্রাভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। একইঢ় সাথে তারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে তেল আবিবের আগ্রাসন এবং সিরিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধযজজ্ঞের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তঃআঞ্চলিক সংবাদপত্র রাই আল-ইয়াওমের সম্পাদক প্রশ্ন তোলেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের জন্য জোলানির আহ্বানে সাড়া দেবে? তিনি জোর দিয়ে বলেন, বেশ কিছু কারণে, আমরা মনে করি না যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের আগ্রাসন বন্ধে আবু মুহাম্মদ আল-জোলানির আহ্বানে সাড়া দেবে।

আতাওয়ান আরও বলেন, প্রথমত, যারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে, দেশটির ভূমি দখল করছে এবং সেখানকার নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে তারা হল ইসরাইল, পূর্ববর্তী সিরিয়ার সরকার নয়। এই কারণেই মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার বিরুদ্ধে এই ইসরাইলি আগ্রাসনকে স্বাগত জানায় এবং এ ব্যাপারে তারা কোনো কথাই বলবে না।

দ্বিতীয়ত, সিরিয়ায় পরিবর্তন আনার পেছনে যে মূল লক্ষ্য রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খুঁজছিল, তা পূর্ববর্তী সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার পতনের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে এবং সে কারণে নতুন সিরিয়াকে ইসরাইলের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অবরোধ অব্যাহত রাখা, দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার অবনতি ঘটানো, অব্যাহত অপরাধ, গণহত্যা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা এবং সিরিয়ার জোলানি সরকারকে সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দিতে ব্যর্থতা প্রভৃতি থেকে প্রমাণিত হয় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিরিয়ার জনগণকে সাহায্য করার কোনও ইচ্ছা নেই।

তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়াকে ছোট ছোট ধর্মীয় ও জাতিগত রাষ্ট্রে খ--বিখ- করার চক্রান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত যা ইসরাইল সরকার চেয়েছিল এবং বর্তমানে তা বাস্তবায়ন করছে।

আতাওয়ান তার প্রবন্ধে আরও বলেন, আমরা প্রায়শই ইসরাইলের হিব্রু ভাষার মিডিয়া আজকাল যে ইচ্ছাকৃত কিছু বিষয়  ফাঁস করে দিচ্ছে করছে তা বিশ্বাস করি না। যেমন, তারা বলে ইসরাইলিরা নতুন সিরিয়ায় তুর্কি আধিপত্য বা প্রভাব নিয়ে চিন্তিত; কিন্তু এর গুরুত্বের বিষয়টি আমরা ভাবি না। যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্ক কখনও ইসরাইলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেনি, তাই নতুন সিরিয়ার সরকার প্রথম দিন থেকেই ঘোষণা করে যে তারা ইসরাইলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে চায় না এবং এর মুখোমুখি হতে চায় না। অন্যদিকে, এখনও ইসরাইলের সাথে তুরস্কের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।

রাই আল-ইয়াওম পত্রিকার সম্পাদক আরো বলেছেন, ইসরাইলের দাবি ও শর্ত অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠনের জন্য বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা হলো অবৈধভাবে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন-গুরিয়নের পরামর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিচ্ছবি, যিনি বলেছিলেন, “ইসরাইলের বিশালত্ব ও শক্তিমত্ত্বা তার পারমাণবিক বোমা বা সামরিক অস্ত্রাগারে নয় বরং ইরাক, সিরিয়া এবং মিশর এই তিনটি দেশের আরব সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়