শিরোনাম
◈ ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নিখোঁজের খবরটি গুজব ◈ সুন্দরবনের আগুন রাতের মধ্যেই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বন বিভাগ ◈ এবার এরদোগানের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল তুরস্ক ◈ মাহমুদুর রহমানের আওয়ামী লীগের বিষয়ে ৩ প্রস্তাব ◈ কলকাতা নাইটরাইডার্সের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে আইপিএল শুরু বেঙ্গালুরুর ◈ একজন আজ ফোন করে বলেছেন, ঢাকায় ফিরলে গ্রেপ্তার করা হতে পারে: রংপুরে জি এম কাদের ◈ সুলভমূল্যে মাংস, ডিম, দুধ বিক্রির পরিধি বাড়ালো সরকার ◈ ‘মডেল মসজিদে হামলা-ভাঙচুর’: পিরোজপুরে বৈষম্যবিরোধী নেতাসহ গ্রেপ্তার ২ ◈ রাজধানীতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার, গ্রেফতার ৩৯৩, মামলা ১১৬ ◈ বিশেষ অভিযানে ছিনতাইকারী, মাদক কারবারিসহ গ্রেফতার ৭১

প্রকাশিত : ২২ মার্চ, ২০২৫, ০১:১২ দুপুর
আপডেট : ২৩ মার্চ, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাশিয়ায় ইসলাম প্রসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কারাগারে মুসলিম নির্যাতন

আল জাজিরার প্রতিবেদন: নরিমান জেলিয়ালকে রুশ কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে সাইবেরিয়ার এক তীব্র শীতল কারাগারে পাঠায়। সে সময় বন্দীদের খাবার বলতে ছিল শুধু রুটি আর পাতলা স্যুপ। চশমা পরা, দাড়িওয়ালা এই ক্রিমিয়ান তাতার নেতা ধর্মপ্রাণ মুসলিম। কিন্তু তাঁকে যে খাবার দেওয়া হতো, তার বেশির ভাগই ছিল শূকরের মাংস দিয়ে তৈরি—যা ইসলামে হারাম।

জেলিয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি একটি প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং বিস্ফোরক পাচার করেছিলেন। তবে ইউক্রেন এই মামলাকে রাশিয়ার সাজানো নাটক বলেই দাবি করেছে। জেলিয়াল খাবার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি কেবল রুটিই খেতাম, সেটাও ভালো মানের ছিল না, আর সঙ্গে থাকত চা।’ তিনি এখন ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। জেলিয়াল শুরু থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

পরে সাইবেরিয়ার শীতলতম এলাকা থেকে জোলিয়ালকে প্রায় জনশূন্য মাইনুসিনস্ক শহরের কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে অবশ্য তাঁর খাবারের মান কিঞ্চিৎ উন্নত হয়। সকালের খাবারে থাকত বিস্বাদ স্যুপ; রাতে মাছ। আর দুপুরের খাবারের তিনটি পদের একটি ছিল শূকরের মাংস দিয়ে তৈরি।

তবে খাবার সংকট মুসলিম বন্দীদের জন্য বড় সমস্যা হলেও, রাশিয়ার কারাগারগুলোতে তাদের আরও ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সোভিয়েত আমল থেকেই রাশিয়ার কারাগারগুলোর পরিচয় এক নিষ্ঠুর, অমানবিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি হিসেবে। এখানে চলে অদৃশ্য, অলিখিত আইন।

‘মুকুটধারী চোর’ বা ‘কৃষ্ণ গোত্রের অপরাধী’—নামে একদল দুর্ধর্ষ অপরাধী কারাগারে একধরনের গ্যাং-সংস্কৃতি কায়েম করেছে। কারাগারের ভেতরেই তারা জুয়ার আসর বসায়, মাদক চোরাচালান করে, নির্মম হিংস্রতার শাসন চালায়। এসব কারাগারকে বলা হয় ‘কালো কারাগার’। আর এসব কাজে অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করে চলে কারারক্ষীরা।

আরেক ধরনের কারাগার আছে, যেখানে মূল নিয়ন্ত্রণ থাকে কারারক্ষীদের হাতে। সেগুলোকে বলা হয় ‘লাল কারাগার’। এসব কারাগারে বন্দীদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন—নির্জন কারাবাস, অপুষ্টি, এমনকি ধর্ষণের শিকারও হতে হয় অনেককে।

কিন্তু গত দুই দশকে রাশিয়ার কারাগারের আরেকটি ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার মুসলিম বন্দীকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ ও ‘উগ্রপন্থার’ অভিযোগে কারাবন্দী করা হয়েছে। রাশিয়ার ১৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে ১৫ শতাংশই মুসলিম। কিন্তু কারাগারে এই অনুপাত অনেক বেশি। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে রুশ মুফতি আলবির ক্রগানোভ জানান, রাশিয়ার ২ লাখ ৬ হাজার বন্দীর মধ্যে মুসলিম বন্দীর সংখ্যা ৩১ হাজার।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার কারাবন্দীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে কত মুসলিম বন্দী যুদ্ধের নামে কারাগার থেকে সরানো হয়েছে, তা জানা যায়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, রাশিয়ার কারাগারে কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁকে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমনকি তাঁর সাজাও বাড়ানো হতে পারে।

সাবেক কারা বিশ্লেষক আন্না কারেতনিকোভা বলেন, ‘কোনো বন্দী যদি অর্থোডক্স খ্রিষ্টান হয়ে গির্জায় গিয়ে ব্যাপ্টিজম নেয়, তবে তাঁকে সম্মান জানানো হয়। কিন্তু কেউ ইসলাম গ্রহণ করলেই তাঁকে উগ্রপন্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়, কারা প্রশাসনকে তিরস্কার করা হয়, আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাঁর ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেয়।’

মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী মুসলিম শ্রমিকেরাও এই নির্যাতনের শিকার হন। ভাষা, আইন এবং জীবনধারার অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে পুলিশ ও কৌঁসুলিরা তাদের ফাঁসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ আছে। মস্কোর নির্মাণশ্রমিক আব্দুল আজিজ বলেন, ২০২২ সালে পুলিশ তাঁর ছোট ভাই আব্দুল মুমিনের কাছে ‘স্পাইস’ নামের কৃত্রিম মাদক রেখে দেয়। এরপর বৈদ্যুতিক শক এবং প্লাস্টিক বোতল দিয়ে মারধর করে জবানবন্দি আদায় করে যে, সে পার্কের বেঞ্চের নিচে মাদক রেখেছিল। পরে এক বিচারক তাকে সাড়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ভাগ্য ভালো, ওখানে অনেক সবুজ (মুসলিম) বন্দী আছে। ওরা নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, তাই অন্য বন্দীরা ওদের সঙ্গে ঝামেলা করে না...সমস্যা হলো, কারারক্ষীরা। তবে তাদেরও ঘুষ দিয়ে সামলানো যায়।’

রাশিয়ার কিছু কারাগার মুসলিম বন্দীদের জন্য একেবারেই প্রতিকূল। অনেক কারাগারে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে বিছানা ছেড়ে ওঠা নিষিদ্ধ। ফলে ফজরের নামাজ পড়লে শাস্তির মুখে পড়তে হয়। রমজানে রোজা রাখাও কঠিন হয়ে ওঠে।

তবে কিছু কারাগারে পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো বলে জানান রুশ একটি কারাগারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী আজাত গাউনুতদিনভ। তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো জানে, যদি মুসলিম বন্দীদের মানসিকতা বোঝে, তাহলে অনেক সমস্যা কমে যায়।’ তিনি ইসলাম গ্রহণের পর মুসলিম বন্দীদের অধিকার রক্ষায় কাজ শুরু করেছেন।

মাইনুসিনস্কের কারাগারে জেলিয়াল এবং অন্যান্য মুসলিম বন্দীদের নামাজ পড়ার অনুমতি ছিল। তাঁরা বিছানায় বসেই রোজার ইফতার করতে পারতেন। কারাগারের গ্রন্থাগার থেকে কোরআন এবং ইসলামবিষয়ক বই পাওয়া যেত। কিন্তু অন্যান্য কারাগারে মুসলিম বন্দীদের এতটুকু স্বাধীনতাও নেই। কোরআন পড়া তো দূরের কথা, আরবি ভাষা শেখাও নিষিদ্ধ।

২০০০ সালের শুরুর দিকে দ্বিতীয় চেচনিয়া যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ার কারাগারে মুসলিম বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু বিশ্লেষক কারেতনিকোভা বলেন, এত দিনেও রুশ প্রশাসন এই সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান বের করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘কেবল শাস্তি আর পুরস্কারের নীতি চলছে। কোনো বোঝাপড়া নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই।’ অনুবাদ: আজকের প্রত্রিকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়