সমস্ত কুম্ভমেলার মধ্যে ভারতের প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত এবারের কুম্ভমেলায় তরুণদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি ছিল। উত্তর প্রদেশ সরকারের অনুমান অনুসারে, ৬৬ কোটিরও বেশি পবিত্র স্নানকারীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৩০ বছরের কম ছিল। গোবিন্দ বল্লভ পন্থ সোশ্যাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের আরেকটি গবেষণায়ও অংশগ্রহণের ধরণ পরিবর্তনের দিকে নজর দেয়া হয়েছে, যেখানে মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ১৮-৩৫ বছর বয়সীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৯৭ শতাংশ ভারতীয় বিশ্বাসী মানসিকতার। প্রায় ৯৮ শতাংশ হিন্দু দাবি করেছেন, তারা ধার্মিক। একটি যুব চ্যানেলের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, জেড প্রজন্মের ৭০ শতাংশ (বর্তমানে বিশ এবং কিশোর বয়সী প্রজন্ম) প্রার্থনা করার পরে আরও আত্মবিশ্বাসী বোধ করেন।
শিরডি সাই বাবা পাদুকা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান নবিপিন দাদা কোলহের মতে, গত ১০থেকে ১২ বছরে তরুণ ভক্তদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে যে, ভারতের তরুণ প্রজন্ম ক্রমশ আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক তরুণ ভারতীয়ের কাছে বিশ্বাস সমাধানের পথ দেখাচ্ছে এবং সান্ত্বনা দিচ্ছে। তারা ধর্ম, বর্ণ এবং নগর-গ্রামীণ বিভাজনকে অতিক্রম করে খোলা মনে আধ্যাত্মিকতাকে গ্রহণ করছে।
কবি ও শিক্ষাবিদ রশ্মি বাজাজ বলেছেন, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ পরবর্তী সময়ে বাস করছি। এটি মেটামডার্নিজমের যুগ, আধুনিকতাবাদ এবং ধর্মবিরোধী উত্তর-আধুনিকতার পরের যুগ। এখন, মানসিকতায় এক অসাধারণ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে যা স্পষ্ট এবং অনেক মানুষ ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতার দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে।
বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে তা দূর করার জন্য যোগব্যায়াম ও ধ্যান সরকারি হাতিয়ার হয়ে ওঠা থেকে শুরু করে শিক্ষানীতি এবং মূলধারার শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজে বিকল্প চিন্তাধারার অন্তর্ভুক্তি পর্যন্ত সবকিছুই কাজ করছে। বর্তমান ব্যবস্থা এবং নীতিমালা এবং তারা নিজের সংস্কৃতি এবং শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা বলছে, বাজাজ বলেছেন, বিশ্বাস এখন আর কোনও নোংরা শব্দ নয়, রাজনৈতিক মহলে নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও নয়।
ইন্ডিয়ান ইনফ্লুয়েন্সার গভর্নর কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সাহিল চোপড়া মনে করেন, আধ্যাত্মিক ও স্ব-সহায়ক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের হঠাৎ উত্থান তরুণদের এই দ্রুতগতির বিশ্বে অর্থ খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। এই প্রভাবশালীদের জনপ্রিয়তা আসে ছোট ছোট রিলের মাধ্যমে জটিল আধ্যাত্মিক ধারণাগুলো উপস্থাপন করার ক্ষমতা থেকে, যা মানুষকে দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করছে।
অনাহত সিং নামের এক তরুণ জানিয়েছেন, এক প্রভাবশালী ধর্মগুরুর ভিডিও দেখার পর আধ্যাত্মিকতার প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। এই ধর্মগুরু একজন সন্ন্যাসী এবং ইউটিউব সেলিব্রিটি, যিনি অতীন্দ্রিয় এবং রূপান্তরকে সহজেই ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রেরণামূলক আলোচনা করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধার্মিক হওয়া কেবল ভাইরাল প্রবণতা নয়। এটি আধুনিকতারও কোনও বিরোধী নয়। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, সমাধান এবং সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি, নতুন নৈতিক দ্বিধা, চাকরির নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগ এবং ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা থেকে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি থেকেও তরুণ প্রজন্ম আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। উৎস: মানবজমিন।