শিরোনাম
◈ প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক নববর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ ◈ দুদকের অভিযোগের জবাবে যা বললেন টিউলিপ ◈ অনন্ত জলিলের দাবি মিথ্যা: প্রেস সচিব শফিকুল আলম ◈ পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে পালানোর সময় প্রাইভেট কারসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার ◈ সীমানা প্রাচীর ভেঙে র‍্যাবের মাঠে বাস, ডোপ টেস্টে চালক ◈ ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা, বিমানবন্দরে আটক ১৫ বাংলাদেশি ◈ সরকারের হস্তক্ষেপে সৌদি আরবগামী ফ্লাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের এয়ার টিকিটের মূল্য ৭৫% কমলো ◈ ব্রিটেনে সদ্য আসা হাজারো বাংলাদেশি অভিবাসন নিয়ে চিন্তায় ◈ ভুয়া নথিতে ভারতীয় পাসপোর্ট: কলকাতায় ৬৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশের আবেদন ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ জন নিহত

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০২৫, ০৩:১৯ দুপুর
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘মা, আমি ক্লান্ত, আমি মরতে চাই’: গাজার আট বছরের  শিশু সামা তুবাইল

৭ অক্টোবরের আগে লম্বা চুলে সামা তুবাইল। ছবি: তুবাইল পরিবার

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ হাতে চুল আঁচড়ানোর ভঙ্গি করে, তারপরই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে আট বছরের সামা তুবাইল। 

'আমি খুবই দুঃখিত, কারণ আমার ব্রাশ দিয়ে আঁচড়ানোর মতো একটা চুলও নেই,' কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে সে। 'আমি আমার সামনে আয়না ধরি, কারণ আমি চুল আঁচড়াতে চাই। আমি সত্যিই আবার চুল আঁচড়াতে চাই।'

কিন্তু সামার জন্য এটি শুধুই স্মৃতির অংশ। ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর আগে, যখন তার লম্বা চুল ছিল, যখন সে গাজার জাবালিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলত। কিন্তু সেই জীবন এখন শুধু স্মৃতি। এরপর থেকে তার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে। 

ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে ১৯ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরছাড়া হতে বাধ্য হয়, যার মধ্যে সামা ও তার পরিবারও ছিল। পরিবারের সঙ্গে ঘরছাড়া হয়ে প্রথমে তারা দক্ষিণ গাজার রাফাহে আশ্রয় নেয়, তারপর যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে কেন্দ্রীয় গাজার খান ইউনিসের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলে তাদের।

৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে একটি হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫০ জনের বেশি মানুষকে বন্দি করা হয় বলে জানায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। কয়েক মাসের সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর আবারও সহিংসতা শুরু হলে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু, জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজার প্রায় ১২ লাখ শিশুই বর্তমানে মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় ভুগছে, বিশেষ করে যারা একাধিকবার ভয়াবহ সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, 'একটি প্রজন্ম ভয়াবহ মানসিক আঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'শিশুরা নিহত হয়েছে, অনাহারে থেকেছে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কষ্ট পেয়েছে। এমনকি অনেকে জন্মের আগেই মারা গেছে—মায়ের সঙ্গে প্রসবকালীন মৃত্যু হয়েছে।'

এর মধ্যেই মঙ্গলবার ইসরায়েল নতুন করে বিমান হামলা শুরু করলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয় বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এক চিকিৎসক সিএনএনকে বলেন, 'আমি এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি।' তার মতে, হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগীই শিশু।

এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত পরিবার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সিএনএনের সাক্ষাৎকার যুদ্ধবিরতি ভাঙার আগেই নেওয়া হয়েছিল।

'মা, আমার চুল কেন গজাচ্ছে না?': গত বছর চিকিৎসকেরা সামার চুল পড়ার কারণ হিসেবে 'নার্ভাস শক'-কে দায়ী করেন। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের আগস্টে রাফাহতে তার প্রতিবেশীর বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর এ সমস্যা দেখা দেয়। অ্যালোপেসিয়ার (চুল পড়ে যাওয়ার একটি অবস্থা) বড় কারণ হিসেবে ৭ অক্টোবরের পর থেকে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। 

গাজাভিত্তিক কমিউনিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্সের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের হামলার কারণে শিশুদের ওপর সৃষ্ট ভয়াবহ মানসিক চাপের চিত্র উঠে এসেছে।

ঝুঁকির মধ্যে থাকা শিশুদের পাঁচশো'র বেশি অভিভাবকের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে, ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করে তারা যেকোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারে, আর প্রায় অর্ধেক, ৪৯ শতাংশ শিশু ইসরায়েলের হামলার কারণে 'মৃত্যুর ইচ্ছা' প্রকাশ করেছে।

সামার জন্য মানসিক যন্ত্রণা আরও গভীর হয় যখন চুল হারানোর কারণে অন্য শিশুরা তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করতে শুরু করে। লজ্জায় সে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। বাইরে গেলে সবসময় একটি গোলাপি কাপড় পেঁচিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হয় তাকে। 

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিএনএন যখন সামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা ওম-মোহাম্মদকে প্রশ্ন করে, 'মা, আমি ক্লান্ত, আমি মরে যেতে চাই। আমার চুল কেন গজাচ্ছে না?' এরপর জানতে চায়, সে কি চিরকাল এমন টাক থাকবে?

'আমি মরে যেতে চাই এবং জান্নাতে গিয়ে চুল ফিরে পেতে চাই, ইনশাআল্লাহ', বলে সামা। 

যুদ্ধবিরতির সুযোগে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরের নিজ নিজ বাড়ির পথে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু সামার বাড়ি ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই খান ইউনিসেই থেকে যেতে হয় তাদের, কারণ বাড়ি ফিরে যাওয়ার ভাড়া জোগাড় করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিএনএন তাদের আবার দেখতে গেলে সামা জানায়, 'আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে আমার কত স্মৃতি ছিল—আমার ছবি, সার্টিফিকেট, পোশাক, কত কিছু! কিন্তু আমি এখনো সেটা দেখতে পারিনি।'

'যাতায়াতের খরচ অনেক বেশি। আর গেলেও সেখানে পানি নেই, আমরা কোথায় থাকব তাও জানি না,' যোগ করে সামা।

গাজার মানসিক স্বাস্থ্য সংকট: গাজায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সবসময়ই কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে গাজা কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রামের (জিসিএমএইচপি) পরিচালক ড. ইয়াসির আবু জামাই জানান, ইসরায়েলের ১৫ মাসের হামলার সময় তার কর্মীরাও গভীর মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন, যা অন্যদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন করে তুলেছে।

'আমার বেশিরভাগ কর্মীই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় কাজ করছেন, মাত্র ১০ জনেরও কম কর্মী এখনও নিজেদের বাড়িতে আছেন,' জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির আগে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন আবু জামাই, যিনি গাজার সবচেয়ে বড় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, কর্মীরা এখনো শরণার্থী শিবিরে থেকে পরিবারগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করছেন এবং তাদের কিছুটা আশার আলো দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জিসিএমএইচপি শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে 'ড্রয়িং থেরাপি' বা আঁকিবুকির মাধ্যমে অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ দেয়, যা তাদের অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশে সহায়তা করে। আবু জামাই এক শিশুর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, 'আমার বন্ধু স্বর্গে চলে গেছে, তবে একজনের মাথা পাওয়া যায়নি,' শিশুটি এ কথা বলার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে। 'তার মাথা ছাড়া সে কীভাবে স্বর্গে গেল?'

যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার সময় জিসিএমএইচপি ছয় মাসব্যাপী একটি মানসিক স্বাস্থ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিল, যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। তবে আবু জামাই জানান, কর্মীরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও সামনে যে কঠিন পথ অপেক্ষা করছে, তার ভার তারা অনুভব করছেন।

একটি ড্রোন এল এবং তাদের হত্যা করল : সাত বছর বয়সী আনাস আবু আইশ এবং তার আট বছর বয়সী বোন দোয়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার একটি শরণার্থী শিবিরে তাদের দাদী ওম-আলাবেদের সঙ্গে বসবাস করছে। ইসরায়েলি হামলায় বাবা-মাকে হারিয়েছে এই দুই শিশু।

'আমি তখন আমার বল নিয়ে খেলছিলাম। নিচে নেমে দেখি বাবা-মা রাস্তায় পড়ে আছে, একটি ড্রোন এলো এবং তাদের ওপর বিস্ফোরণ ঘটালো,' ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে সিএনএনকে বলে আনাস।

ওম-আলাবেদ জানান, বাবা-মাকে হারানোর পর থেকে শিশু দুটি গভীর মানসিক আঘাতের মধ্যে আছে। আনাস প্রায়ই আক্রমণাত্মক আচরণ করে, বিশেষ করে যখন সে দেখে অন্য শিশুদের তাদের মায়েরা জড়িয়ে ধরছে।

'আমি সবাইকে বারবার অনুরোধ করি, যেন তারা বুঝতে চেষ্টা করে। সে শুধু তার বাবা-মাকেই হারায়নি, বরং নিরাপত্তা, স্নেহ, ভালোবাসা—সবকিছুই হারিয়েছে,' বলেন ওম-আলাবেদ।

সিএনএন যখন দোয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন সে নিজের নখ চেপে ধরে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছিল। কয়েক সেকেন্ড পর সে কেঁদে উঠে। 

শিশুদের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য, দাদীর সম্মতিতে, ইসরায়েলি মনোবিজ্ঞানী এবং ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক এডনা ফোয়া ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। তিনি জানান, আনাস ও দোয়া এখনও অনুভূতি প্রকাশ করছে, যা তাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

'আমি এমন শিশুদের দেখেছি, যারা শুধু ফাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে, কিছু বলে না, এমনকি কাঁদেও না। আমি তাদের নিয়েই বেশি চিন্তিত হই,' বলেন ফোয়া।

তাদের আসল বাড়ি দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে হলেও আনাস ও দোয়া যুদ্ধবিরতির পরও আল-মাওয়াসিতেই রয়ে গেছে, কারণ তাদের এলাকা 'রেড জোন' হিসেবে চিহ্নিত—যে অঞ্চলগুলো নতুন করে হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।

যুদ্ধবিরতির পর ওম-আলাবেদ তাদের বাড়িতে ফিরে যান, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে থাকা নিরাপদ নয় বলে মনে করেন তিনি।

'আমরা সহ্য করতে পারিনি,' বলেন তিনি। 'আমরা এখানে অপেক্ষা করছি, স্বপ্ন দেখছি, যেন আমাদের রেড জোন একদিন সবুজ হয়ে যায়। তাহলে আমরা ফিরে গিয়ে ধ্বংসস্তূপের ওপর আমাদের তাঁবু খাটাতে পারবো।'

তিনি আরও বলেন, 'সব ভবন ধ্বংস হয়ে একে অপরের ওপরে পড়ে আছে। এখান থেকে ওখানে যেতে হলে ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়, যেন পাহাড় বেয়ে উঠছি।'

'আমার মুখে বালু ছিল, আমি চিৎকার করছিলাম' : একই শরণার্থী শিবিরে ছয় বছর বয়সী মানাল জৌদা নিভৃত স্বরে বর্ণনা করে সেই রাতের কথা, যেদিন তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, বাবা-মা নিহত হয়েছিল এবং সে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিল। বেঁচে থাকার জন্য নিরুপায় অপেক্ষার মুহূর্তগুলো এখনও স্পষ্ট মনে আছে তার। 

'আমার মুখে বালু ছিল, আমি চিৎকার করছিলাম। তারা কোদাল দিয়ে খুঁড়ছিল, আমাদের এক প্রতিবেশী বলছিল—"এটা মানাল, এটা মানাল।" আমি জেগে ছিলাম, ধ্বংসস্তূপের নিচেও আমার চোখ খোলা ছিল, মুখ খোলা ছিল, আর তাতে বালু ঢুকছিল,' বলে মানাল।

ইসরায়েলি মনোবিজ্ঞানী এডনা ফোয়া বলেন, মানালের মতো শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তাদের মস্তিষ্ক ভবিষ্যতে এই যন্ত্রণা বহন করতে না হয়।

তিনি বলেন, 'এ ধরনের শিশুকে আমি পর্যবেক্ষণে রাখবো, যদি এমন কোনো উপায় থাকে যার মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে জমা হওয়া ব্যথা কমানো যায়'। 

যুদ্ধবিরতি হলেও শিশুদের সুস্থতার জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন, বলেন এডনা ফোয়া। তবে সঠিক চিকিৎসা পেলে ফিলিস্তিনি শিশুরা অন্তত আংশিকভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

'তারা আর কখনোই যুদ্ধের আগের মতো হতে পারবে না, কিন্তু তারা এমনভাবে পুনরুদ্ধার করতে পারবে, যাতে অন্তত স্বাভাবিকভাবে জীবন চালিয়ে যেতে পারে,' বলেন ফোয়া।

'তারা বেশিরভাগ সময় স্বস্তিতে থাকতে পারবে, অস্থিরতা কমবে, তারা আর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকবে না এবং তাদের জীবন চালিয়ে যেতে পারবে।'

কিন্তু সামার মতো শিশুদের জন্য সেই স্থিতিশীলতা এখনও অধরা, যেখানে তাদের প্রতিটি দিন কাটে এক অনিশ্চয়তায়। 

'আমার বন্ধুদের চুল আছে, কিন্তু আমার নেই': টানা বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় গাজায় বাস্তুচ্যুতদের শিবিরগুলো আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্বল তাঁবুগুলো ভেঙে গেছে, সামা ও তার পরিবারের মাথার ওপরের সামান্য আশ্রয়টুকুও আর নেই।


যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সামার চুল আর গজায়নি। বরং প্রতিবার নতুন করে গজানোর পরও কিছুদিনের মধ্যেই তা পড়ে যায়। এই অনিশ্চয়তায় এখন সে আশাহত।

'প্রতিবার যখন আমার চুল উঠতে শুরু করে, আমি খুশি হই, কিন্তু কয়েকদিন পরই তা আবার পড়ে যায়,' বলল সামা, হতাশ কণ্ঠে।

তার মা ওম-মোহাম্মদ বলেন, চুল পড়ে যাওয়ার কারণে সামা নিজের মধ্যে আরও গুটিয়ে যাচ্ছে। এমনকি নিজের বোনদের সামনেও সে সংকোচ বোধ করে। তার বিশ্বাস, যতক্ষণ না তার চুল আগের মতো ফিরে আসবে, ততক্ষণ তার জীবন স্বাভাবিক হবে না।

ওম-মোহাম্মদ বলেন, 'আগে সামা আমাকে বলত, "আমি উত্তরে ফিরতে চাই, আমার পোশাক, আমার স্মৃতিগুলো ফিরে পেতে চাই"'। 

'কিন্তু এখন তার কথা বদলে গেছে। এখন সে শুধু বলে, "আমরা কোথায় যাব? আমাদের তো আর কোনো ঘর নেই। আমার সব বন্ধুদের চুল আছে, কিন্তু আমার নেই।"' অনুবাদ: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়