শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০১:৫৬ দুপুর
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৭:০৫ বিকাল

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারেও ১০ লক্ষাধিক মানুষের খাদ্য সহায়তা বন্ধ হচ্ছে

রয়টার্স: জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মিয়ানমারের ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ তীব্র তহবিল ঘাটতির কারণে খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। মিয়ানমারে বর্তমানে বিতরণ করা বেশিরভাগ খাদ্য রেশন এপ্রিল মাসে বন্ধ করে দেওয়া হবে, যদিও সামরিক সরকার এবং তার শাসনের বিরোধী শক্তিশালী মিলিশিয়াদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের ফলে দেশটি একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে যে মিয়ানমারে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে তাদের ৬০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে এবং তার অংশীদারদের কাছে অতিরিক্ত তহবিলের যোগাগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। 

ডব্লিউএফপির এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশী সাহায্য বন্ধ এবং মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ভেঙে ফেলার পদক্ষেপের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়, যা বিশ্বজুড়ে মানবিক প্রচেষ্টার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক, মিয়ানমারের তহবিল হ্রাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তনের ফলে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন: “এটি সবই মিশ্রিত,” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ডব্লিউএফপির এক বড় তহবিলদাতা। আমরা মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছি তাদের কাছে এ ক্ষতি ব্যাখ্যা করার জন্য। 

জাতিসংঘের কর্মী এবং থাই কর্মকর্তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৯০ দিনের বিদেশী সহায়তা কর্মসূচির উপর স্থগিতাদেশের ফলে মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য পরিষেবাগুলিতে অন্যান্য কাটছাঁট করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের শিবিরগুলিতে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করে দেওয়া যেখানে ১ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করে।

এশিয়া ভিত্তিক সাহায্য খাতের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “মিয়ানমারে খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে মূল অবদানকারী” এবং গত বছর এধরনের সহায়তায় ঘাটতি দেখা যায় যেখানে মানবিক চাহিদার মাত্র ৪০% তহবিল সরবরাহ করা হয়েছিল। যিনি বিষয়টি নিয়ে মুক্তভাবে আলোচনা করার জন্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, খাদ্য সহায়তায় নতুন কর্তনের ফলে একটি “বিধ্বংসী পরিস্থিতি” তৈরি হয়েছে, যার ফলে এনজিওগুলি অনেক কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং শিশুদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, জীবন রক্ষাকারী কাজ চালিয়ে যেতে হবে, এটা বন্ধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় কারণ যদি আমরা এটি বন্ধ করি তাহলে মানুষ বাঁচবে না। কিন্তু আমরা যে তহবিলের ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছি, তা আমাদেরকে মিয়ানমারের অনেক মানুষের জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচি বন্ধ করতে বাধ্য করেছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে আসার দাবিতে ব্যাপক অহিংস বিক্ষোভ দমন করার পর মিয়ানমারে দেশব্যাপী সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। ডব্লিউএফপি বলেছে যে ১.৫২ কোটি মানুষ, যা মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, তাদের ন্যূনতম দৈনিক খাদ্য চাহিদা মেটাতে অক্ষম এবং প্রায় ২.৩ কোটি মানুষ জরুরি পর্যায়ের ক্ষুধার মুখোমুখি। 

ডব্লিউএফপি’র হিসেবে দেশটিতে কেবলমাত্র সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ হাজার মানুষকে সহায়তা করা সম্ভব হচ্ছে, যার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত।

মিয়ানমারে ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি এবং কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল ডানফোর্ড বলেন, খাদ্য সহায়তায় আসন্ন কাটছাঁট মিয়ানমার জুড়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলবে, যাদের অনেকেই বেঁচে থাকার জন্য সম্পূর্ণরূপে ডব্লিউএফপির সহায়তার উপর নির্ভরশীল। ডব্লিউএফপি মিয়ানমারের জনগণকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিতে অটল, তবে অভাবী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানো অব্যাহত রাখার জন্য আরও তাৎক্ষণিক তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে যে কাটছাঁটের ফলে প্রায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এক লাখ মানুষও প্রভাবিত হবে, যার মধ্যে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ও রয়েছে, যারা ডব্লিউএফপির সহায়তা ছাড়া খাবারের কোনও সুযোগ পাবে না। 

মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে নির্যাতিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্টে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণের জবাবে সেনাবাহিনী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযান শুরু করার পর থেকে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশের জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখনও মিয়ানমারে রয়েছে, যারা নোংরা বাস্তুচ্যুত শিবিরে আটকা পড়েছে। আরও অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আরাকান আর্মি নামে একটি গোষ্ঠী মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলে সহিংসতা আবারও বৃদ্ধি পায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়