বিবিসি: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী শনিবার থেকে ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করেছে।
ইয়েমেন হাউছিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে হাউছিদের স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই মধ্যে ওয়াশিংটন জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হাউছি সদস্য রয়েছে। যদিও এই হাউছিরা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি।
হাউছি গোষ্ঠী জানিয়েছে, রোববার রাতে বন্দর নগরী হুদাইদাতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
রোববার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ‘ইয়েমেনে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী শনিবার থেকে ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করেছে।
লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার কারণেই এই বিমান হামলা বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হাউছি নেতা আব্দুল মালিক আল হাউছি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে যাবে, ততদিন পর্যন্ত তার সশস্ত্র বাহিনী লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে যাবে।
মৃত্যুর সংখ্যা আপডেট করে হাউছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল আসবাহি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান, পাঁচ শিশু এবং দুই নারীসহ ৫৩ জন নিহত হয়েছে।
এছাড়া আহত হয়েছে ৯৮ জন।
দুই সন্তানের বাবা আহমেদ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে সানায় বসবাস করছি, যুদ্ধের গোলাগুলির শব্দ শুনছি। কিন্তু আল্লাহর দোহাই, এর আগে কখনো আমার এমন কিছুর অভিজ্ঞতা হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ এবিসি নিউজকে বলেছেন, শনিবারের হামলা ছিল ‘একাধিক হাউছি নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করে এবং তাদের সরিয়ে দেয়ার জন্য।’
ফক্স নিউজকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে হামলা করেছি এবং এর মাধ্যমে ইরানকে বোঝাতে চাই যথেষ্ট হয়েছে।’
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ হাউছিদের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ফক্স টেলিভিশনের এক বিজনেস সাক্ষাৎকারে হেগসেথ বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান নৌপথের স্বাধীনতা এবং প্রতিবন্ধকতা থেকে পুনরুদ্ধারের অভিযান।’
ইসরাইল গাজা থেকে অবরোধ তুলে না নেয়া পর্যন্ত হাউছিরা লোহিত সাগরে জাহাজগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করে যাবে বলে জানিয়েছে। একইসাথে হামলারও জবাব দেবে তারা।
ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী ইসরাইলকে নিজেদের শত্রু মনে করে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার না হলেও ইয়েমেনের সানা এবং উত্তর-পশ্চিমের অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এই গোষ্ঠী।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ওপর নাক গলাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্তৃত্ব নেই।’
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ইসরাইলি গণহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করুন। ইয়েমেনি জনগণকে হত্যা বন্ধ করুন।’
এদিকে, রোববার হাউছিদের সামরিক মুখপাত্র কোনো প্রমাণ দেয়া ছাড়াই বলেছেন, মার্কিন হামলার জবাবে তারা লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান এবং তাদের যুদ্ধ জাহাজকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে হামলা করেছে।
কিন্তু বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন রোববার মার্কিন যুদ্ধবিমান ১১টি হাউছি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যেগুলোর একটাও ট্রুম্যানের কাছে ভিড়তে পারেনি।
শনিবার বিমান হামলার ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অপ্রতিরোধ্য প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করব।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইরানের অর্থায়নে এই হাউছি ডাকাতরা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সৈন্য এবং মিত্রদের লক্ষ্য করেছে।’
হাউছিদের সরাসরি সম্বোধন করে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে লিখেছেন, যদি তারা না থামে, ‘তোমাদের ওপর নরক বৃষ্টি’ হবে যা তোমরা আগে কখনো দেখোনি।
কিন্তু হাউছিরা তাদের প্রতিজ্ঞায় অটল যে এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন কমাতে পারবে না।
তাদের দাবি, তারা গাজায় ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থণে কাজ করছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হাউছিরা লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে কয়েক ডজন বানিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করে ক্ষেপনাস্ত্র, ড্রোন এবং ছোট ছোট নৌকা দিয়ে হামলা করেছে।
তারা দু’টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, তৃতীয় আরেকটি আটক করেছে এবং চার নাবিককে হত্যা করেছে।