শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০২৫, ১১:৩৫ দুপুর
আপডেট : ১৫ মার্চ, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ইরানকে আঘাত করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে, আমেরিকা বিশ্বকে ধোঁকা দিচ্ছে: ইমাম খামেনেয়ী

এল আর বাদল : বিশ্বের বলদর্পী শক্তিগুলো ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পথ থেকে এখনও সরে আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, তারা বলছে তাদের স্বার্থ সবার আগে অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের পক্ষ থেকেই তাদের স্বার্থটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। বর্তমানে সবাই তাদের এই স্বার্থপরতা প্রত্যক্ষ করছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর সঙ্গে সারা দেশের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী সাক্ষাত করেছেন। এসব ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং দেশ গঠন বিষয়ক ছাত্র সংগঠনের কর্মীরাও ছিলেন। সূত্র: পার্টসটুডে

গত বছরের বিভিন্ন ঘটনার কথা স্মরণ করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, গত বছরের এই দিনগুলোতে শহীদ রায়িসি, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, হানিয়া, সাফিউদ্দিন, সিনওয়ার, দেইফ এবং বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব আমাদের মাঝে ছিলেন, কিন্তু এখন তারা নেই। এই কারণে শত্রুরা মনে করে যে, আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। 
আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে জোর দিয়ে বলছি যে, যদিও এসব গুরুত্বপূর্ণ ভাইদের অনুপস্থিতি আমাদের জন্য ক্ষতিকর, তবে আমরা গত বছরের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে শক্তিশালী হয়েছি এবং অন্যান্য কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়িনি।

প্রতিরোধ ফ্রন্টের অব্যাহত দৃঢ়তার কারণ ব্যাখ্যা করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন: যদি একটি জাতি এবং একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আদর্শ এবং প্রচেষ্টা-এই দুটি উপাদান বিদ্যমান থাকে, তবে তাদের সামগ্রিক যাত্রা প্রভাবিত হবে না।

সর্বোচ্চ নেতা ফিলিস্তিন ও লেবানন ইস্যুতে বলেন, শত্রুরা যা আশা করেছিল তা হয়নি। ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতিরোধ দমে যায়নি বরং আরও শক্তিশালী এবং অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছে। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে ফিলিস্তিন এবং লেবাননের প্রতিরোধ সংগ্রামকে সমর্থন দিয়ে যাব।

সর্বোচ্চ নেতা ইরানি তরুণদের দুটি ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এ বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম অভিজ্ঞতা আত্ম-ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করেছিল, কিন্তু দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা যা এখনও বিদ্যমান। সেটি হলো ছাত্র-ছাত্রীদের বর্তমান তৎপরতা, পাশ্চাত্যের বাস্তবতাকে চেনা, স্বকীয়তা অর্জন এবং পশ্চিমা সভ্যতার সমস্যা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা। এগুলোকে ছাত্র-ছাত্রীরা মূল নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। (প্রথম অভিজ্ঞতা ইসলামী বিপ্লব-পূর্ব সময়ের সাথে সম্পর্কিত।)

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা ইস্যুতেও কথা বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আলোচনা ও সমঝোতার জন্য প্রস্তুতির দাবি এবং ইরানকে চিঠি পাঠানোর কথা উল্লেখ করে তিনি এটিকে বিশ্ব জনমতকে ধোঁকা দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেন। 

সর্বোচ্চ নেতা এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, “এই চিঠিটি এখনও আমার কাছে পৌঁছায়নি। এই যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন: আমরা ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি, আমার মতে এটা জনমতের সঙ্গে প্রতারণা। তার কথার অর্থ হলো: আমরা আলোচনায় বিশ্বাসী; আমরা আলোচনা চাই, শান্তি চাই, বিবাদ চাই না। কিন্তু ইরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়। কেন ইরান আলোচনা করতে চায় না? আমরা কয়েক বছর ধরে আলোচনা করেছি; কিন্তু এই ব্যক্তিই  পরিপূর্ণ আলোচনাকে, স্বাক্ষরিত আলোচনাকে টেবিল থেকে ছুড়ে ফেলেছেন, ছিঁড়ে ফেলেছেন। এই লোকের সঙ্গে কীভাবে আলোচনা সম্ভব? আলোচনায় এই নিশ্চয়তা থাকতে হয় যে, অন্য পক্ষ যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সেটা তারা রক্ষা করবে। আমরা যখন জানি যে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে না, তখন কিসের আলোচনা?

পত্রিকায় প্রকাশিত একটি লেখার কথা উল্লেখ করেছেন সর্বোচ্চ নেতা যেখানে বলা হয়েছে যে যুদ্ধের অবস্থায় রয়েছে এমন দুই ব্যক্তির মধ্যে আস্থার অভাবের কারণে আলোচনা বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়। সর্বোচ্চ নেতা এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ কর বলেন, এই বক্তব্যটি সঠিক নয়; কারণ এই দুই আলোচকও যদি আলোচনার ফলাফলের প্রতি অন্য পক্ষের অবিচলতা এবং প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা না রাখেন, তাহলে তারা আলোচনায় বসবেন না। কারণ এই পরিস্থিতিতে আলোচনা অর্থহীন।

তিনি আরও বলেন: শুরু থেকেই আলোচনায় আমাদের লক্ষ্য ছিল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়া, যা দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে সৌভাগ্যবশত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন, কিছু মার্কিনীও বিশ্বাস করেন যে নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত করলে এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং নিষেধাজ্ঞার শিকার দেশ নিষেধাজ্ঞা এড়াতে উপায় খোঁজে বের করে। আমরাও বিভিন্ন উপায় খুঁজে পেয়েছি।

আমরা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেব না মার্কিনীদের এ ধরণের দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন: আমরা যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চাইতাম, তাহলে আমেরিকা আমাদের থামাতে পারত না। আমাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র নেই এবং আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছি না, কারণ আমরা নিজেরাই এই ধরণের অস্ত্র চাই না, এর আগে এর কারণ উল্লেখ করেছি।

তিনি মার্কিন সামরিক আক্রমণের হুমকিকে অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করে বলে বলেন, আঘাত হানার ও যুদ্ধ শুরু করার হুমকি একতরফা কোনো বিষয় নয়। ইরান পাল্টা আক্রমণ করতে সক্ষম এবং অবশ্যই তা করবে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন: যদি আমেরিকা এবং তার দোসরেরা ভুল পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তারা নিজেরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা নিশ্চিত যে, আমরা যুদ্ধ চাই না, কারণ যুদ্ধ ভালো জিনিস নয়। তবে কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আমরা দৃঢ়ভাবে এর জবাব দেবো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়