শিরোনাম
◈ শাহবাগ ও জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মাহফুজ আলমের ব্যাখ্যা ◈ দুই ভাগ হচ্ছে এনবিআর, ঈদের আগেই অধ্যাদেশ : চেয়ারম্যান ◈ আরও ৩ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ ◈ গভীর রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ লড়াই ◈ এবারের রমজান ২৯ নাকি ৩০ দিনের, জানা গেল ঈদের সম্ভাব্য  ◈ লাখো  রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব ◈ ধর্ষণের বিচার দ্রুত করতে আইন সংশোধন হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ ভাইরাল ৮ উপদেষ্টার অনুমোদনপত্রকে ভুয়া বললেন প্রেসসচিব ◈ চিকিৎসা অবহেলায় ম্যারাডোনার মৃত্যু, চার বছর পর ৭ চিকিৎসকের বিচার শুরু

প্রকাশিত : ১২ মার্চ, ২০২৫, ১২:৫৮ দুপুর
আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২৫, ১১:১৩ রাত

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাকের নেপথ্যে বালুচ লিবারেশন আর্মি! এরা কারা? কেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে?

আর রিয়াজ: মঙ্গলবার পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার দায় স্বীকার করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই হামলায় শতাধিক যাত্রী জিম্মি হয়ে পড়েন, যখন ট্রেনটি বালুচিস্তানের একটি সুড়ঙ্গে হাইজ্যাক করা হয়। 

বিএলএ দাবি করেছে, তারা এই হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারকে তাদের রাজনৈতিক দাবির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরেই বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। 

বিএলএ, যেটি ২০১১ সাল থেকে সক্রিয়, বেলুচিস্তান প্রদেশের সবচেয়ে বড় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই এই গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বেলুচ জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শোষণ এবং বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে বিতর্কের কারণে তারা বার বার পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়েছে। 

বিএলএর লক্ষ্য কী?

বিএলএ’র দাবি, ১৯৪৮ সালে সাবেক রাজা কালাতের খানকে জোর করে পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রীকরণের চুক্তিতে স্বাক্ষর করানো হয়, যার পর থেকে তারা বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা এবং প্রদেশের সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। 

জাফর এক্সপ্রেসে যাত্রী জিম্মি

জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল, যখন এটি হামলা ও জিম্মির শিকার হয়। গোষ্ঠীটি ২১৪ জন যাত্রীকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক করে এবং পাকিস্তানকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেলুচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে আল্টিমেটাম দেয়। নিরাপত্তা বাহিনী পরে ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে এবং ১৬ জন বেলুচ বিদ্রোহীকে হত্যা করে।  হতাহতের সংখ্যা এখনো সুনির্দিষ্ট নয়।

বালোচ জাতীয়তাবাদের উত্থান

পাকিস্তানের সব থেকে বড় প্রদেশ বালোচিস্তান। এখানেই জন্ম বালোচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ)। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই আলাদা হওয়ার দাবি জানিয়েছে বালোচিস্তান। ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার দাবিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিএলএ। তারপর থেকে পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লড়াই চালাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। পালটা গুমখুন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে বিদ্রোহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হওয়ার পর থেকেই আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বালোচিস্তান। অভিযোগ, খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশটিকে কার্যত লুট করছে পাক প্রশাসন। প্রতিদানে বালোচ জনতা পাচ্ছে শুধুই নির্যাতন ও দারিদ্র।

সংগঠনের কাঠামো ও নেতৃত্ব

১। বিএলএ-এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো সম্পর্কে অনেক কিছুই গোপন রয়েছে। তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি একটি সেল-ভিত্তিক ব্যবস্থায় কাজ করে। যেখানে বিভিন্ন কমান্ডার বালোচিস্তানের বিভিন্ন অংশে অভিযান পরিচালনা করে।

২। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিএলএ বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। শাখা মেলেছে ইউনাইটেড বালোচ আর্মি (ইউবিএ), বালোচ রিপাবলিকান আর্মি (বিআরএ)। মাঝে মধ্যে এই শাখা সংগঠনগুলো বালোচ রাজি আজোই সাঙ্গার (বিআরএএস) -এর মতো বৃহত্তর জোটের অধীনে কাজ করে।

৩। বিএলএ-এর নেতৃত্বে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আসলাম বালোচের মতো কমান্ডাররাও রয়েছেন। যিনি ২০১৮ সালে আফগানিস্তানে এক আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন বলে জানা যায়।

৪। অভিযোগ, বিএলএ-এর মাথারা গোপনে থেকেই বিভিন্ন ষড়যন্ত্র রচনা করে। তারা মূলত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অন্যান্য পড়শি দেশে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে।

হামলার ইতিহাস

প্রায় দুদশক ধরে পাকভূমকে রক্তাক্ত করছে বালোচ বিদ্রোহীরা। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)- এর সঙ্গে যুক্ত প্রকল্পগুলোই মূলত নিশানায় থাকে বিএলএ-এর। একাধিকবার বিদ্রোহীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বহ চিনা আধিকারিক। যাঁরা এই প্রকল্পগুলোতে কাজ করার পাকিস্তানে এসেছিলেন। এছাড়া খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশের দক্ষিণ প্রদেশগুলোকেও উত্তপ্ত করে রেখেছে বালোচ বিদ্রোহীরা।

বিভিন্ন হামলার দায় স্বীকার

২০১৮ সালে করাচির চিনা দূতাবাসে হামলা হয়। যার দায় নেয় বিএলএ। এরপর গদরে চিনের আধিকারিকদের টার্গেট করে একটি বিলাসবহুল হোটেলে হামলা চালায় বালোচ বিদ্রোহীরা। এছাড়া বিভিন্ন রেল স্টেশন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে নাশকতা করে বিদ্রোহীরা। সাম্প্রতিক সময়ে গত বছরের নভেম্বরে বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার রেল স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। প্রাণ হারান বহু মানুষ। সেই হামলারও দায় স্বীকার করে বিএলএ।

জঙ্গি সংগঠনের তকমা

পাকিস্তান, ব্রিটেন এবং আমেরিকা বিএলএকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়েছে। ২০১৯ সালে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক নাগরিক এবং নিরাপত্তা কর্মীদের উপর হামলার কথা উল্লেখ করে এই গোষ্ঠীটিকে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের (এফটিও) তালিকাভুক্ত করে। পাকিস্তান বারবার অভিযোগ জানিয়েছে যে, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিএলএ-কে মদত দিচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং আঞ্চলিক প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে বালোচ বিদ্রোহীরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, মানুষদের অপহরণ করে পণবন্দি বানাচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। সিপিইসি প্রকল্পগুলোকে যেভাবে তারা টার্গেট করছে তা খুবই উদ্বেগজনক। বালুচিস্তানে তীব্র সামরিক অভিযান সত্ত্বেও, বিদ্রোহ অব্যাহত রয়েছে। ফলে বল প্রয়োগ করে রাজনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমধান করতে হবে। না হলে এই বিদ্রোহের আগুন আরও ভয়ংকর আকার নেবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫-তে স্বাক্ষর হওয়া মউয়ের ভিত্তিতে চিন-পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নির্মাণকার্য শুরু হয়। চিনের প্রস্তাবিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নীতির উপর ভিত্তি করে, তাদের অর্থ সাহায্যেই এই করিডর তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তানের গদর পোর্ট থেকে চিনের শিনজিং প্রদেশ পর্যন্ত মোট ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি তৈরি করা হয়েছে। এই করিডর নিয়ে প্রথম থেকেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন বালোচিস্তান-সহ গিলগিট-বালতিস্তান ও পিওকে-র নাগরিকরা। অভিযোগ, পেশিশক্তির জোরে তাঁদের বাসভূমি কেড়ে নিয়ে এই করিডর তৈরি করেছে পাকিস্তান। যাতে পূর্ণ মদত দিয়েছে চিন। সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন কলকাতা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়