ভারতের মণিপুরে চলমান জাতিগত সংঘাত। কুকি ও মেতেই গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতে নরকে পরিণত হয়েছে মণিপুর। এতে ব্যাপক মানুষকে সেখান থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশ। তাদের মধ্যে বিরোধ এতই বেড়েছে যে, দুই আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে কেউই তাদের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গিয়ে নিজেদের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। সবসময় এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভুলবশত এক গোষ্ঠীর মানুষ অন্য গোষ্ঠীর সীমানায় প্রবেশ করা নিয়ে ২২ মাসে মণিপুরে কয়েকটি সংঘাত হয়েছে। এদিকে কিছুদিন ধরে দেশ ভাগের আভাস দিয়ে আসছে মণিপুর। যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় বাফার জোনের দাবি তোলা হয়। সম্প্রতি মণিপুর জুড়ে ফ্রি মুভমেন্টের ডাক দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা ৮ই মার্চ থেকে শুরু হয়।
এটিকে দেশভাগের আভাসের পরিকল্পনা পাল্টে দেয়ার চেষ্টা হিসেবে গণ্য করা হয়। অমিত শাহের ডাকার ফ্রি মুভমেন্টে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহ করা হয়। ওই সব বাস কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় পাহাড় ও উপত্যকার মধ্য দিয়ে চলে যায়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়নি। ফ্রি মুভমেন্টের প্রথম দিনেই এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এতেই পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা বোঝা যায়। ওই হত্যার মাধ্যমে চার মাসে প্রথমবারের মতো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এতে নড়ে চড়ে বসে মণিপুরের জনগণ। তারা বুঝতে পারে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে হবে। উল্লেখ্য, এনইচ-২ ও এনএইচ-৩৭ নামের হাইওয়ে দুটিকে মণিপুরের লাইফলাইন বলা হয়ে থাকে। ওই হাইওয়ে দুটি দিয়ে পাহাড় ও উপত্যকায় কর্মী ও পণ্য সরবরাহ করা হয়।
এরই মধ্যে আলাদা প্রশাসনের দাবি তোলে কুকি গোষ্ঠী। তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে ওই দুটি হাইওয়ে দিয়ে পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে কুকিরা। এতে করে সৃষ্টি হয় খাদ্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতি। ব্যাঘাত ঘটে ব্যবসায়। অনুরূপভাবে মেইতেই গ্রুপও পাহাড়ে যাওয়ার পথে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর ওপর হামলা চালায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মণিপুুরে দুই গ্রুপের সমস্যা সমাধানের উদ্দেশে ৮ই মার্চের কর্মসূচির পরিকল্পনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ই¤ফল থেকে চুরাচান্দপুরে একটি বাস সফলভাবে যাত্রা করে। তবে ব্যাপক সংখ্যক আন্দোলনকারীর বাধার সম্মুখীন হয় কাংপোকপি জেলার মধ্য দিয়ে যাওয়া আরেকটি বাস। ফলে এটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে মণিপুরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে এখনো অনেক দেরি।
এদিকে ইম্ফলের পশ্চিমের জেলার মারাক অঞ্চল থেকে নিষিদ্ধ কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টির দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া নিষিদ্ধ গোষ্ঠী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কাছ থেকে দুই বালিকাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদেরকে কাকচিং জেলার কাকচিং বাজার থেকে উদ্ধার করা হয়। একই দিনে পুলিশ কাকচিং বাজার থেকে পিএলএ’র দুই ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো মোইরামথেম রোমেন সিং (২৩) ও নংমাইথেম মহেন্দ্রো সিং (৫৪)। ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ গোষ্ঠী কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টির দুই জঙ্গী গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে চারটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। অনুবাদ: মানবজমিন।