শিরোনাম
◈ আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার ভেতরে  শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  ◈ গাজীপুরে ৮১ জন গ্রেফতার অপারেশন ডেবিট হান্টের ৩য় দিনে ◈ ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি (ভিডিও) ◈ বাধার মুখে ধর্ষণ মামলার আসামি ধরতে গিয়ে ফিরে এল র‍্যাব ◈ জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ◈ চলতি মাসের মধ্যেই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ, কমিটিতে দেড় শতাধিক ছাত্রনেতা ◈ শহীদ মিনারে ৬ দফা দাবিতে বিডিআর সদস্যদের অবস্থান কর্মসূচি (ভিডিও) ◈ দুর্নীতি সূচকে দুই ধাপ অবনতি বাংলাদেশের (ভিডিও) ◈ রাস্তায়-মাঠে-ময়দানে-রাজপথে কোনো অপরাধীকে দেখতে চাই না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ থানার সামনে টিকটক ভিডিও বানানো সেই আ.লীগ নেত্রী আটক (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৭:৫২ বিকাল
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেশি বেশি বিদেশি রোগী টানতে ব্যাপক সংস্কারের পথে ভারত

ভারতীয় হাসপাতালগুলো আরও বেশি বেশি বিদেশি রোগীদের টানতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভিসায় ছাড়, বাজেটে বিদেশি বিনিয়োগ আনার পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রস্তাবসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটি। এমন এক সময়ে, ভারতের তরফ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে, দুই দেশের সম্পর্ক বেশ তিক্ত হয়ে উঠেছে। যার প্রভাব পড়েছে ভারতের মেডিকেল টুরিজম তথা চিকিৎসা পর্যটনেও।

ভারতীয় চেইন হাসপাতালগুলোর আয় বাড়াতে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে আন্তর্জাতিক রোগীর উৎস বৈচিত্র্যময় করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিজেপি সরকার। মূলত বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ থেকে রোগী কম যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাপোলো ও মণিপালের মতো চেইন হাসপাতালগুলো। তাদের আশা ছিল, রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাই তারা এখন অন্যান্য অঞ্চলের রোগীদের আকৃষ্ট করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

মণিপাল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রধান বিকাশ টায়ার দ্য মিন্টকে বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে, মণিপাল হাসপাতালের আন্তর্জাতিক রোগীদের অন্যতম বড় উৎস বাংলাদেশ। আমাদের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১২০ জন রোগী আসত। এসব রোগীর ২৫-৩০ শতাংশই বাংলাদেশি।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ থেকে রোগী যাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ২০২৪ সালের আগস্টে কেয়ারএজ রেটিংসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের আন্তর্জাতিক রোগীদের ৫০-৬০ শতাংশই বাংলাদেশি। তবে আগের বছরের তুলনায় গত বছর এ সংখ্যা ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে বলে অনুমান করা হয়।

ভারতের স্বাস্থ্য খাতের বাজার বিশ্লেষক ও কর্মকর্তারা মিন্টকে জানান, রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, তবে এখনো আগের মাত্রায় পৌঁছায়নি। অ্যাম্বিট ক্যাপিটালের প্রধান ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা বিশ্লেষক প্রশান্ত নায়ার বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো তাৎপর্যপূর্ণ পুনরুদ্ধার ঘটেনি...কিছু রোগী আসছে, তবে এটি আগের তুলনায় অনেক কম।’

মেডিকেল টুরিজমে সংকট কাটাতে ভারতের ২০২৫ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার প্রতি সরকারের মনোযোগের কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এটি শুধু বাংলাদেশ থেকেই নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও রোগী আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে।

অ্যাপোলো হাসপাতালের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংগীতা রেড্ডি বলেন, ‘এটি (সরকারের পরিকল্পনা) সামগ্রিক কাঠামোর দিকে নজর দিচ্ছে। ভারত তুরস্ক বা থাইল্যান্ডের মতো অ্যারাইভাল অন ভিসা বা ই-ভিসা...উন্নত আকাশপথ সংযোগ, ভালো বিপণন ও আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে। কারণ, ভারতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রচুর হাসপাতাল রয়েছে।’

ভারতের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে মেডিকেল টুরিজমের অবদান তুলনামূলকভাবে কম। হাসপাতালগুলো এখন স্বাস্থ্য পর্যটন খাত থেকে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বিদ্যমান বাজারগুলোর পাশাপাশি নতুন অঞ্চল থেকেও রোগী আনতে কাজ করছে। এই বিষয়ে ভালো অবদান রাখতে পারে ভারত সরকারের মেডিকেল টুরিজম সংক্রান্ত নতুন নীতি।

এই বিষয়ে অ্যাস্টার ডিএম হেলথ কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ড. আজাদ মোপেন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের জন্য—স্থানীয় ও বিদেশি—এখন অনেক সুযোগ রয়েছে। ভারত সরকারের চিকিৎসা পর্যটনের জন্য ভিসা নীতিতে নমনীয়তা আনার সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা বিনিয়োগের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।’

ভারতের ম্যাক্স হেলথকেয়ার বাংলাদেশ থেকে রোগী কমে যাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্যান্য বাজারেও নজর দিচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভয় সোই। তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশে বেশ কয়েকটি অফিস স্থাপন করেছি, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্য আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করা যায় এবং সেই দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা যায়।’

দিল্লি-এনসিআর ভিত্তিক চেইন হাসপাতালটি আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের প্রধান বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে নতুন কিছু দেশও তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। সোই বলেন, ‘যুক্তরাজ্য থেকেও রোগী আসতে শুরু করেছে, কারণ সেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার সময় রয়েছে...আমরা জাতি হিসেবে তুলনামূলকভাবে কম খরচে ও দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা দিতে সক্ষম বলে এ ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা রয়েছে।’

ভারত মেডিকেল টুরিজম বাড়ানোর দিকে নতুন করে নজর দিলেও হাসপাতালগুলোকে এখনো কিছু অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর রোগীদের জন্য থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বেশি আকর্ষণীয়।

থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল টুরিজমের সুবিধা দিচ্ছে, যার ফলে রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। রোগীর থাকার ব্যবস্থা, পরিবারের থাকার জায়গা, যাতায়াত, খাদ্য ও ভাষা সংক্রান্ত সুবিধা ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রশান্ত নায়ার বলেন, ‘এসব দিক থেকে কিছু দেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। কারণ, তারা দীর্ঘদিন ধরে এটি করছে। ভারতে সামগ্রিক অবকাঠামো তৈরি হতে সময় লাগবে।’

তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা উচ্চ সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রেও নজর আছে তাদের।

ভারত ২০২৫ সালের অর্থ বাজেটে মেডিকেল টুরিজম শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়। বিশেষ করে, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য শক্তিশালী ভিসামুক্ত নীতি চালু করার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মূলত যারা আগে সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিত তাদের টানতে চায় ভারত।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ভারত সরকার যেসব পরিকল্পনার কথা বলছে সেগুলো যদি বাস্তবায়িত হয় তবে দেশটির স্বাস্থ্য খাত এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো স্থায়ী প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে। উপসাগরীয় একটি দেশের একটি স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারত বিশ্বে অন্যতম সস্তা চিকিৎসা পরামর্শ এবং হাসপাতাল সুবিধা দিতে পারে। এই সম্ভাবনা বিকাশের জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদার হতে চায়।’

দীর্ঘদিন বাধা থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরা উচ্চমানের ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবার জন্য আগের চেয়ে আরও সহজে ভারতে যেতে পারবেন। ২০২৫ বাজেটে ভিসামুক্ত নীতির ফলে আর কোনো দাপ্তরিক বাধা, দীর্ঘ অপেক্ষার সময় বা বিশাল ভিসা ফি থাকবে না। এর ফলে ভারতের বিশ্বমানের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশিদের প্রবেশও সহজতর হবে। এই নীতি সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে হাজার হাজার মেডিকেল ট্যুরিস্টকে আবার ভারতে ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: দ্য মিন্ট, গালফ নিউজ ও ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ওয়ার্ল্ড ও আজকের পত্রিকা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়