চীনা কোম্পানি ডিপসিকের এআই চালিত চ্যাটবট জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ফ্রি অ্যাপ হিসেবে শীর্ষে উঠে আসে অ্যাপটি।
ডিপসিকের এই অ্যাপের আকস্মিক জনপ্রিয়তা এবং মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর তুলনায় এর উল্লেখযোগ্য কম ব্যয় শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক আন্দ্রেসেন এটিকে "এআই খাতে অন্যতম অসাধারণ এবং চমকপ্রদ সাফল্য" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ডিপসিক দাবি করেছে, তাদের সর্বশেষ এআই মডেল মার্কিন শীর্ষ মডেল যেমন চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ, তবে ব্যয়ের দিক থেকে অনেক সাশ্রয়ী। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই মডেল তৈরি করতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর বিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
ডিপসিক কী?
ডিপসিক একটি চীনা এআই কোম্পানি, যা দক্ষিণ-পূর্ব চীনের হাংজু শহরে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের জনপ্রিয় এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপটি ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়।
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং আংশিকভাবে তার নিজস্ব হেজ ফান্ড থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে কোম্পানিটি চালু করেন।
৪০ বছর বয়সী লিয়াং ওয়েনফেং এনভিডিয়ার এ১০০ চিপ নিষিদ্ধ হওয়ার আগে সংগ্রহ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ৫০ হাজার চিপ সংগ্রহ করে এগুলো তুলনামূলক সস্তা চিপের সঙ্গে জুড়ে ডিপসিক তৈরি করেন।
কারা এটি ব্যবহার করছে?
ডিপসিকের এআই অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর এবং কোম্পানির ওয়েবসাইটে ডাউনলোডের জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। এটি অ্যাপ স্টোরে দ্রুত শীর্ষ রেটিং অর্জন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানীয় ফ্রি অ্যাপ হিসেবে স্থান পেয়েছে।
তবে কিছু ব্যবহারকারী সাইন-আপ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ডিপসিক অ্যাপ কী করে?
ডিপসিকের শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং জীবনকে আরও কার্যকর করতে সক্ষম। এটি চ্যাটজিপিটির মতো কাজ করে, তবে ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন, এটি লেখায় আরও "ব্যক্তিত্ব" যোগ করে।
তবে, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যায় ডিপসিক। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাপটি জানায়, "আমি দুঃখিত, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। আমি একটি সহায়ক এবং নিরাপদ এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট।"
মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব
ডিপসিকের তুলনামূলক সাশ্রয়ী মডেল মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২৭ জানুয়ারি এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামে।
নাসডাক সূচক ৩.১ শতাংশ হ্রাস পায়, যেখানে এনভিডিয়ার শেয়ার ১৭ শতাংশ পড়ে যায়। এর ফলে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য থেকে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার হারিয়ে যায়, যা মার্কিন ইতিহাসে কোনো কোম্পানির একদিনে সর্বোচ্চ ক্ষতি।
এনভিডিয়ার উচ্চমানের চিপের প্রয়োজন কমিয়ে দিয়ে ডিপসিক প্রমাণ করেছে যে বড় বাজেট বা শীর্ষমানের চিপ ছাড়াও এআই খাতে সাফল্য সম্ভব।
বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিকের সাফল্য এআই প্রযুক্তি এবং বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :