✖

ফারুকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের পূর্ব হাত্রাপাড়া গ্রামের সিরাজ উদ্দীন মাস্টারের ছেলে আনোয়ার সিরাজী দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাঁচা শাকসবজি খেয়ে বেঁচে আছেন।

সুস্থ্য সবল থাকতে শাকসবজি খাওয়ার বিকল্প নেই। বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক ও পুষ্ঠিবিদরাও। প্রতিনিয়ত আমরা শাকসবজি রান্না করে খাই। তবে এখানেই ব্যতিক্রম আনোয়ার সিরাজী রান্না করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা খেতেই বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন। 

আনোয়ার সিরাজী পেশায় একজন কৃষক। পরিবারে এক মেয়ে প্রতিবন্ধী এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার।

জানা যায়, গত ১০ বছর ধরে কাঁচা  শাকসবজি খেতে পছন্দ করেন আনোয়ার সিরাজী। তার খাদ্য তালিকায় রয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পালংশাক, চিচিঙ্গা, কপি, করলা, পালংশাক, পুঁইশাক, সিম, সরিষার ফুল, গাজর, টমেটো, মুলা, কাঁচামরিচ, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।

১০ বছর আগে মরণব্যাধি এক রোগে আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দেন ডাক্তার ও পরিবারের সদস্যরা। তবে প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খেলে হয় তো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারেন- ডাক্তারের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে প্রথমে রান্না করে খাওয়া শুরু করলেও একপর্যায়ে কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর থেকে সব শাকসবজি কাঁচা খেয়ে যাচ্ছেন। এতে সুস্থভাবে বেঁচে আছেন তিনি। 

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির পেছনে ফসলি জমিতে চলে আসেন আনোয়ার সিরাজী। সেখান থেকে সবজি তুলে সকালের নাস্তা করেন। এরপর নেমে পড়েন জীবিকার তাগিদে। তবে অন্য সবাইকে এভাবে খাওয়া থেকে দূরে থাকতে বলেন তিনি।

এলাকার বাসিন্দা আলী রেজা সুমন বলেন, মানুষ তো কত কিছুই খায়। কিন্তু সেগুলো রান্না করে। আনোয়ার সিরাজীর ক্ষেত্রে ভিন্ন। এমন লোক আমি কখনো কোথাও দেখিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শরীরের ক্ষতি হয় কি না। তিনি বললেন, তার কোনো ক্ষতি হয় না।

প্রতিবেশী আনোয়ার পিটি বলেন, আমরা দেখেছি আনোয়ার সিরাজী করলা, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ সব ধরনের শাকসবজি কাঁচা খেয়ে ফেলে। তবে তার শারীরিক কোনো ক্ষতি হতে দেখিনি আমরা। সে খেয়ে ভালোই আছে।

আনোয়ার সিরাজীর চাচা শাহাবুদ্দিন আহামেদ বলেন, এক সময় আমার ভাতিজা খুব অসুস্থ ছিল। কিন্ত এখন অনেকটাই সুস্থ আছে। কাঁচা শাকসবজি সব খেতে পারে। এগুলো খেয়ে তার উপকার হয়েছে। কিন্ত কখনও ক্ষতি হয় নাই।

আনোয়ার সিরাজী বলেন, আমার অসুস্থতা দেখে ডাক্তার আমাকে বলেছিল আমি ১০-১৫ দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি এখনও বেঁচে আছি। আমাকে দেখে মানুষ ভয় পেত। ১০ বছর ধরে কাঁচা শাকসবজি খেয়ে যাচ্ছি। দেশের এমন কোনো শাকসবজি নেই যা আমি কাঁচা খেতে পারি না। কাঁচা শাকসবজি না খেলে আমার শরীরে সমস্যা হয়। প্রথমে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী বাধা দিয়েছে। পরে তারা দেখল খেলে কোনো সমস্যা হয় না। তার জন্য আর নিষেধ করেনি।

তিনি আরও বলেন, শাকসবজি যত বেশি খাই আমার পেট তত বেশি ভালো থাকে। আমাকে ডাক্তার বলেছিল রান্না করে শাক-সবজি খাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি কাঁচা খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলেছি। প্রথমে দুই বছর শুধু পেঁপে ও বেল খেয়েছি। একটা সময় বেল না পেয়ে বেলের পাতা পেট ভরে খেয়েছি। আমি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রেশার সবসময় ৫০-৬০ থাকে। রক্তের সমস্যা থাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ডাক্তার না করেছে কিন্তু কাঁচা না খেলে ভালো লাগে না। এলাকাবাসী সবাই জানে। এখন যে অবস্থা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাঁচা শাকসবজি খেয়ে যেতে হবে।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক  মেডিকেল অফিসার ডা. মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞা বলেন, এমনভাবে কাঁচা শাকসবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে রান্না করে খাবার খেলে খাদ্য গুণাগুণগুলো পাওয়া যায়। কাঁচা শাক-সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ডিম থাকতে পারে। এ থেকে তিনি পরজীবীতে আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি আরও জানান, শুধু তাই নয়, কাঁচা খাবার খাওয়ার কারণে কিডনি স্টোন হওয়া, লিভার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে এটি একটি মিরাকেল ঘটনা। মেডিকেল সায়েন্সে এটি সহজে ব্যাখ্যা করা কঠিন।
ফারুকুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ