যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত ২২টি অঙ্গরাজ্য ও ২টি শহর। অঙ্গরাজ্য ও শহরগুলোর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি এ আইনি লড়াইয়ে শরিক হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনও।
গত সোমবার রাতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দেবেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীদের ‘অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে।
ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে জোটবদ্ধভাবে মামলা করেছে ২২টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া ও সান ফ্রান্সিসকো শহর কর্তৃপক্ষ। মামলায় যুক্তি দেওয়া হয়, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রেসিডেন্টের এ চেষ্টা মার্কিন সংবিধানের ভয়ানক লঙ্ঘন।
একই সঙ্গে ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান নিয়মকানুনে পরিবর্তন আনার কথা জানান। এর আওতায় নথিবিহীন, অর্থাৎ অবৈধ কোনো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না।
ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে জোটবদ্ধভাবে মামলা করেছে ২২টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া ও সান ফ্রান্সিসকো শহর কর্তৃপক্ষ। মামলায় যুক্তি দেওয়া হয়, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রেসিডেন্টের এ চেষ্টা মার্কিন সংবিধানের ভয়ানক লঙ্ঘন।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, ‘বৃহত্তর পটভূমিতে প্রেসিডেন্টের অভিবাসন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। তা সত্ত্বেও নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ প্রেসিডেন্টের আইনি এখতিয়ারবহির্ভূত।’
এ মামলার আগে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, কয়েকটি অভিবাসী সংগঠন ও অন্তঃসত্ত্বা এক নারী একই রকমের মামলা করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, দায়ের করা এসব মামলাকে ওই সব পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ অংশের বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ প্ল্যাটকিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এ অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে আজকের এ মামলা দায়ের ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে আমরা আমাদের অধিবাসী ও তাঁদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়াব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাম্পের এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আজকের এ মামলা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে আমরা আমাদের অধিবাসী ও তাঁদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়াব।
ম্যাথিউ প্ল্যাটকিন, নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা সংক্রান্ত মামলাগুলোর সব ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন বা নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডে দায়ের হয়েছে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই ফেডারেল সরকারের সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অবৈধ অভিবাসী অথবা সাময়িক ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, এমন কেউ সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশুকে যেন মার্কিন নাগরিকত্বসংক্রান্ত নথি দেওয়া না হয়।
ট্রাম্প এ–সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পরপরই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুকে নাগরিকত্ব না দেওয়ার আদেশ শুধু অসাংবিধানিক নয়, একই সঙ্গে তা মার্কিন মূল্যবোধের বেপরোয়া ও নির্মম প্রত্যাখ্যান।’
ট্রাম্পের আরও কিছু আদেশের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলো ও বিভিন্ন পরামর্শক গোষ্ঠী মামলা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ধনকুবের ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ট্রাম্প প্রশাসনের গঠন করা ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি’ ও সরকারি কর্মীদের চাকরির সুরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল করে রিপাবলিকানদের সই করা এক আদেশের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে আদালতের বিচারকেরা আদেশ দিলে তা বোস্টনভিত্তিক ফার্স্ট ইউএস সার্কিট কোট অব আপিল পর্যালোচনা করে দেখবেন। এ আদালতের পাঁচ ফেডারেল বিচারপতির সবাই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের নিয়োগ পাওয়া, জাতীয় পর্যায়ে যা বিরল ঘটনা।
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব সুবিধা নিয়ে নতুন নিয়ম ট্রাম্প কীভাবে কার্যকর করতে চান, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এ সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংরক্ষিত একটি বিষয়। ট্রাম্প যদি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে চান, তবে তাঁকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে।
উৎস: দ্য গার্ডিয়ান ও প্রথম আলো।
আপনার মতামত লিখুন :