ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ কুখ্যাতি আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর অভিষেক ভাষণেও ভুল তথ্য দিলেন তিনি!
অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছেন, পানামা খাল পরিচালনা করে চীন।
ট্রাম্প পানামা খাল সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, ‘ (পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়া) একটি নির্বোধ উপহার যা কখনই দেওয়া উচিত হয়নি।’
তিনি দাবি করেন, ‘চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এটি (পানামা খাল) চীনের কাছে দিইনি। আমরা এটি পুনরুদ্ধার করতে যাচ্ছি।’ এরপরই সমর্থকেরা তুমুল করতালি দিয়ে তাঁকে সমর্থন জানান। এ সময় জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস দর্শকসারিতে নির্বিকার বসে থাকতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, পানামা খাল দখল করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা তিনি নাকচ করছেন না। একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। সেখানেও তিনি উল্লেখ করেন, পানামা খাল চীনা সৈন্যরা পরিচালনা করছে।
পানামা খাল হলো জাহাজ চলাচলের জন্য পানামা প্রজাতন্ত্রের ইস্থমাসে নির্মিত একটি খাল যা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে। খালটির মালিক ও পরিচালক পানামা প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্বের উপকূল পর্যন্ত খালটির দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাহাজ চলাচলকারী কৃত্রিম খালের একটি, অন্যটি হচ্ছে সুয়েজ খাল। পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোনো জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হতো।
পানামা খালটি নির্মাণ করেন মূলত ফরাসিরা। তবে ১৯০৩ সালের ২২ জানুয়ারি, হে-হেরান চুক্তির আওতায় তৎকালীন কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে এককালীন ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং একটি বার্ষিক ফির বিনিময়ে পানামা খালের চিরস্থায়ী ইজারা নেওয়ার কথা হয়। তবে কলম্বিয়ার সিনেট এটি অনুমোদন করেনি। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট পানামার বিদ্রোহীদের সমর্থন ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সামরিক সহায়তায় পানামা স্বাধীনতা পায়।
১৯০৩ সালে বিপ্লবের পর পানামা প্রজাতন্ত্র ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রিত রাষ্ট্র হয়েই থাকে।
১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র পানামা রেলপথসহ ফরাসি সরঞ্জাম এবং খননকাজগুলো ৪০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র নতুন দেশ পানামাকে ১০ মিলিয়ন ডলার এবং পরের বছর ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেয়।
১৯২১ সালে, কলম্বিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র থমসন–উরুটিয়া চুক্তি করে। যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়াকে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়। পরে ৫ মিলিয়ন ডলার এবং চার–পাঁচ মিলিয়ন ডলার বার্ষিক অর্থপ্রদান এবং কলম্বিয়াকে খাল অঞ্চলে বিশেষ সুবিধা দেয়। বিনিময়ে কলম্বিয়া পানামাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। উৎস: আজকের পত্রিকা।
আপনার মতামত লিখুন :