যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণযুগে পা দিয়েছে। শপথের পর দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন থেকে সামনের দিনগুলোয় আমাদের দেশ আরো সমৃদ্ধ আর সম্মানজনক অবস্থানে উঠে আসবে। আমার একমাত্র লক্ষ্য হবে, আমেরিকা ফার্স্ট।
ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের দিনটিকে তিনি ‘মুক্তির দিন’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হবে, আমাদের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করা হবে, পুনরায় ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা একটি গর্বিত, সমৃদ্ধশালী ও স্বাধীন জাতি তৈরি করার লক্ষ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব।
নিজের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন নাগরিকরা কথা বলেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটার প্রমাণ হিসেবে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি, অসম্ভব বলে কিছু বিশ্বাস করা কখনই উচিৎ নয়। অসম্ভবকে সম্ভব করাটাই আমরা যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভালো পারি।’
যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করা বা ভয় দেখানো যাবে না বলে ভাষণের শেষে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হবো না। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত, সার্বভৌম ও স্বাধীন...ভবিষ্যৎ আমাদের এবং আমাদের স্বর্ণযুগ সবে শুরু হয়েছে।’
আকাশেও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় থাকবে বলে জানান নতুন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, মার্কিন নভোচারীরা মঙ্গলগ্রহে গিয়ে বিজয়ের নতুন ইতিহাস রচনা করবেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো বলেছেন, তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করতে যাচ্ছেন।
তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করবেন।
অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে যে ‘লাখ লাখ অপরাধী’ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে, তারা যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফেরত পাঠানো হবে।
সেই সঙ্গে ট্রাম্পের রিমেইন ইন মেক্সিকো বা ‘মেক্সিকোতেই থাকো’ নীতি তিনি পুনরায় কার্যকর করা হবে। সীমান্ত এলাকায় আরো সেনা ও জনবল পাঠানো হবে বলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। মাদকচক্র বা কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করা হবে এসব নির্বাহী আদেশে।
‘এলিয়েনস এনিমিস অ্যাক্ট অব ১৭৯৮’ পুনর্বহাল করা হবে, যাতে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যগুলো ‘যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিদেশি গ্যাংগুলো’ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
শপথ গ্রহণের পর দেওয়া বক্তব্য পানামা খাল প্রসঙ্গেও ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা এমন একটা বোকা উপহার, যা আমাদের কখনো তৈরি করাই উচিত হয়নি।’
পানামা খাল চীনারা পরিচালনা করছে বলে ভুল অভিযোগ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা এটা চীনকে দিইনি। আমরা আবার এটা ফিরিয়ে নেব।’ এই মাসের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প একই দাবি করেছিলেন। সেই সময় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনার কথাও তিনি উড়িয়ে দেননি।
এ ছাড়াও ট্রাম্প তার অভিষেক ভাষণে বলেছেন, তার প্রশাসনের নীতি অনুযায়ী শুধু দুটি লিঙ্গ স্বীকৃতি পাবে। এর ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়ার বর্তমান প্রথা বাতিল হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে বর্ণ ও লিঙ্গ বিষয় সামাজিকভাবে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার সরকারী নীতি আমি বন্ধ করব। আজ থেকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আনুষ্ঠানিক নীতি হবে, শুধু দুটি লিঙ্গ আছে—পুরুষ ও নারী।’
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টার দিকে শপথ গ্রহণ করেছেন, যার মধ্য দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ট্রাম্পকে শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি সংবিধান ‘সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা’ করার শপথ নিয়েছেন। শপথ নেয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
শপথ গ্রহণকালে ট্রাম্পের কাছে দুটি বাইবেল দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি তার মায়ের দেওয়া এবং অন্যটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ব্যবহৃত বাইবেল বলে জানা যাচ্ছে। এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করতে কামান দাগা হয়েছে, আর বাজানো হয়েছে ‘হেইল টু দ্য চিফ’। পাশাপাশি ট্রাম্পকে তার পরিবার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে উদযাপন করতে দেখা গেছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের পর এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণ করলেন, যিনি একবার নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।
ট্রাম্পের আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জে ডি ভ্যান্স শপথ নেন। তাকে শপথবাক্য পাঠ করান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ব্রেট কাভানা। শপথ নেওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স, যিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেকেন্ড লেডি। সূত্র : বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা
আপনার মতামত লিখুন :