মহসিন কবির: ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার ফলে ভারত প্রজাতন্ত্র ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটে। তবে কাশ্মীম নিয়ে দ্বন্দ্ব স্বাধীনতার পর থেকেই। সেই দ্বন্দ্ব এখনো চলমান রয়েছে।
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের ‘এপিসেন্টার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম জিও টিভির এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বুধবার ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সেনাবাহিনীকে ‘রাজনীতি চর্চা’ থেকে মুক্ত থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের ‘এপিসেন্টার’ উল্লেখ করে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, জম্মু ও কাশ্মিরে অস্থিরতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা উসকে দিচ্ছে পাকিস্তান। তিনি আরও বলেন, গত বছর ওই অঞ্চলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে যেসব জঙ্গি নিহত হয়েছে, তাদের ৬০ শতাংশই পাকিস্তানের নাগরিক।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের এপিসেন্টার উল্লেখ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনী, তা শুধু বাস্তবতা বিবর্জিতই নয়, বরং ভারতের অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। যেখানে রাষ্ট্র জনগণের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে, সেখানে জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের জন্য প্রতিবেশী দেশের ওপর দোষ চাপানো দ্বিচারিতা ও কাপট্যের সেরা উদাহারণ।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতের বর্তমান সেনাপ্রধান যখন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জম্মু ও কাশ্মিরে কর্মরত ছিলেন, সে সময় কাশ্মিরিদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে। সম্প্রতি তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পুরোপুরি রাজনৈতিক এবং ভারতের সেনাবাহিনীতে যে রাজনীতি ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছে- সেনাপ্রধানের বক্তব্য তারই প্রতিফলন।
ভারতীয় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাস দমনের নামে নিরস্ত্র কাশ্মিরিদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে- উল্লেখ করে আইএসপিআরের বিবিৃতিতে বলা হয়, কাশ্মিরিরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও রেজোল্যুশনের মাধ্যমে এ অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কাশ্মিরিদের ন্যায্য আন্দোলনকে ধূলিস্যাৎ করতেই জম্মু-কাশ্মিরে অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
বিবৃতির শেষ পর্যায়ে বলা হয়, একজন জ্যেষ্ঠ ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা পাকিস্তানের হেফাজতে আছেন, যিনি পাকিস্তানের ভেতরে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। এই গুরুতর সত্যটি ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সহজেই উপেক্ষা করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে সোমবার জেনারেল দ্বিবেদী বলেছিলেন, গত বছর ভারতের নিরাপত্তাবাহিনী মোট যত পরিমাণ জঙ্গিকে নিকেশ করেছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশই পাকিস্তানি। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, এই মুহূর্তে জম্মু ও কাশ্মীরে যে সন্ত্রাবাদীরা রয়েছে, তাদের মধ্যেও প্রায় ৮০ শতাংশ পাকিস্তান থেকেই এসেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে পালাবদল ঘটেছে। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন কেয়ারটেকার সরকার ভারতকে কার্যত শত্রু ঘোষণা করে পাকিস্তানের সঙ্গে মাখো মাখো সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে।
সেই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ওই দুই দেশের সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা বৈঠকে বসেন। রাওয়ালপিন্ডিতে তাদের সেই বৈঠক হয়। উদ্দেশ্য, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সমন্বয় ও সামরিক আদান-প্রদান বৃদ্ধি। সেই প্রেক্ষাপটে ভারতের সেনাপ্রধান গত সোমবার পাকিস্তানের জঙ্গিবাদে মদত দেওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্তব্যগুলি করেন।
সূত্র: জিও টিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস
আপনার মতামত লিখুন :