শিরোনাম
◈ ২০ সেকেন্ডে তালা কেটে ৮ মিনিটে ১৫৯ ভরি স্বর্ণ চুরি করেও শেষ রক্ষা হলো না (ভিডিও) ◈ পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ বাঁধাতে চাইছে বাংলাদেশ, অভিযোগ মমতার মন্ত্রীর ◈ ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রসঙ্গে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেশে ফেরত পাঠানো উচিত: প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে দ্য প্রিন্টের সম্পাদকের খোলা চিঠি (ভিডিও) ◈ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার সাক্ষাৎ ◈ হাসিনা ভারতের জন্য অনেক ভালো করেছেন, তাঁকে যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে দেওয়া উচিত: কংগ্রেস নেতা ◈ দেশে বাড়ছে বিদেশি মদের বিক্রি! ◈ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন, যা বললেন চিকিৎসক ◈ বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদদের অভিবাসন নিষিদ্ধ করল মালয়েশিয়া

প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩১ দুপুর
আপডেট : ১২ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে দ্য প্রিন্টের সম্পাদকের খোলা চিঠি (ভিডিও)

দ্য প্রিন্টের প্রধান সম্পাদক এবং চেয়ারম্যান শেখর গুপ্তা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা তথা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে,  

  শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় অধ্যাপক ইউনূস- 
শুরুতেই, আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাবো নাকি আপনাকে সমবেদনা জানাবো তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত। সাধারণত, ক্ষমতায় এমন উজ্জ্বল আরোহণের যোগ্যতা অর্জন করতে গিয়ে মানুষকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে একটি বৃহৎ জনসংখ্যাপূর্ণ উপমহাদেশে, যেখানে এখনো অনেক দরিদ্র মানুষ বিদ্যমান তাদের নেতৃত্ব দেয়ার চ্যালেঞ্জকে হালকাভাবে নেয়া যায় না। 
২০১৬ সালের শুরুর দিকে হুবলি-ধারওয়াড়ে একটি বৃহৎ জনহিতৈষী সম্মেলনে যখন আমি আপনার সঙ্গে কয়েকদিন কাটানোর সৌভাগ্য পেয়েছিলাম, তখন আমি আপনার আন্তরিকতা, আচরণ এবং আপনার প্রতিকূল পরিস্থিতি আয়ত্ত করার ক্ষমতার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। ‘ওয়াক দ্য টক’ পর্বে আপনি জানিয়েছেন কীভাবে শেখ হাসিনা আপনার ব্যাংক কেড়ে নিয়েছিলেন এবং আপনি আপনার ব্যাংক-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে গিয়ে তার জবাব দিয়েছিলেন। যদিও আপনি বলেছেন- এটা  প্রতিশোধ নয়, বরং যেটা ঠিক সেটাই আপনি করেছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি আঘাত পেয়েছেন।

হাসিনা সরকারের এক অবিশ্বাস্যভাবে নাটকীয় পতনে গত আগস্টে আপনার সামনে একটি নতুন সুযোগ আসে। আপনাকে নতুন প্রশাসনের প্রধান করার জন্য বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, যদিও আপনি এখনো নিজেকে কোনো নির্বাহী বা রাজনৈতিক উপাধি দেননি। আপনি ‘প্রধান উপদেষ্টা’- হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন এবং সম্ভবত এই মাসের শেষের দিকে ডাভোসে যাবেন।
আমি কি আমার চিঠির এই অংশে বলতে পারি যে, হাসিনা আপনার কাছ থেকে যেমন আপনার ব্যাংক কেড়ে নিয়েছেন তেমনি আপনি এখন তার সরকার কেড়ে নিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছেন? আমি কোনো বিচার ছাড়াই একথা বলছি। তিনি স্পষ্টতই অ-জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন- বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচনে তার আগের নির্বাচনের চেয়েও আরও বড় জালিয়াতি হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, নেতৃস্থানীয় দল এবং তার নেতাকে (ইমরান খান) প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে রেখে ঠিক যেভাবে পাকিস্তানিরা ভোটে জালিয়াতি করেছিল এটা ঠিক তেমনি।

আমি কি বলতে পারি যে, আপনি যখন আপনার ক্ষত সারানোর চেষ্টা করছেন, তখন এই নাটকীয় মোড়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। যদি না আপনি বেশির ভাগ রাজনীতিবিদদের মতো জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস করে থাকেন। নিশ্চিতভাবেই, এল কে আদভানীর চেয়ে ভালো, যিনি  প্রধানমন্ত্রী পদে অনিবার্য উত্থানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিলেন। ড. মনমোহন সিং পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিতর্কের সময় তাকে কটূক্তি করে বলেছিলেন যে, তার জ্যোতিষী তাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে তিনি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছেন। 

ড. সিং আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেন। তিনি, প্রথম সাক্ষাতে মোশাররফকে বলেছিলেন, ‘আপনি এবং আমি দুজনেই আমাদের দেশের আকস্মিক নেতা। পাবলিক অফিস জনগণের আস্থার মতো। আমরা এটি হঠাৎ করে পেতে পারি না। মোশাররফের কাছে তার বার্তা ছিল যে, ‘আমাদের’ গুরুত্ব সহকারে একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত এবং দীর্ঘস্থায়ী ভারত-পাকিস্তান সমস্যার সমাধান করা উচিত। এই কথোপকথনগুলো তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল।

আমি কি বিনীতভাবে আপনার (ইউনূস) নিজের জন্য একই পরীক্ষা প্রয়োগ করার জন্য অনুরোধ করতে পারি? আপনার নাটকীয় উত্থান-  ডক্টর সিংয়ের মতোই। পাকিস্তানে, প্রতিটি সেনা কর্মকর্তা মনে করেন যে, তিনি কমিশন লাভের দিন থেকে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। আপনি ভারতে আপনার সমবয়সী অর্থনীতিবিদের (মনমোহন সিং) চেয়েও অন্তত সৌভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে আছেন। এখন আপনার কাছে পাবলিক অফিস আছে, যা জনসাধারণের বিশ্বাসের প্রতিফলন।  

আপনি বিভিন্ন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। ভালো ধারণা। আল জাজিরাকে সামপ্রতিক সাক্ষাৎকারে আপনি সংস্কারের জন্য কোনো নির্দিষ্ট তারিখ দিতে চান না বলে জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, সেই কথোপকথনে, আপনি এমনকি উল্লেখ করেছেন যে, এক্ষেত্রে চার বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আপনার হাতে  কি সত্যিই এত সময় আছে? আপনার সুস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। এই ধরনের অস্থায়ী ব্যবস্থায় ক্ষমতায় থাকাটা অবশ্য একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। আপনার বড় প্রতিপক্ষ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যেই অধৈর্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আপনি খুব শিক্ষিত এবং জ্ঞানী মানুষ। আমি এটাও বিশ্বাস করি না যে, আপনি উপমহাদেশের রবার্ট মুগাবে বা মাহাথির মোহাম্মদ হতে চাইবেন।  

আপনি ইসলামপন্থিদের চুপ করে রাখছেন বটে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আরও অধৈর্য হয়ে উঠছে। এ ছাড়াও, তারা এখন যে ধরনের প্রজাতন্ত্র চায় সে সম্পর্কে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বাংলাদেশে একটি নতুন প্রজাতন্ত্রের সূচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনি সবচেয়ে বড় সমস্যা নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানেও ১৯৭২ সাল থেকে পাকিস্তানের মতো বহু পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আপনি এখন একটি সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান লিখতে যাচ্ছেন, গণতন্ত্রী এবং ইসলামপন্থিদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে আপনাকে।  সেইসঙ্গে আপনার নিজস্ব দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিও মাথায় রাখতে হবে। এই ধরনের ঘটনাগুলো সহজে বন্ধ করা যায় না, বিশেষ করে একটি গণপরিষদ, একটি সংসদ বা প্রচলিত রাজনীতিবিদ ছাড়া। আপনি কি সত্যিই মনে করেন যে, শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত চলে আসা সংবিধানের বৈধতা থাকবে? এবং যদি তাই হয়, কতোদিনের জন্য? বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে নেয়া আমাদের অভিজ্ঞতা বোঝায় যে, ‘পরবর্তী ব্যক্তি’ তার নিজস্ব সংবিধান আনবে। 

আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, আপনার প্রশাসন যে কৌশল ব্যবহার করছে তা আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্লে-বুকের সবচেয়ে পুরনো পন্থা: ভারতবিরোধিতা। এটি একটি পরিচিত কিন্তু বিপজ্জনক চক্রান্ত। পাকিস্তান বনাম ভারত খেলার ক্ষেত্রে এটি লোভনীয় পন্থা। এটা কি ভারতকে ট্রোল করার মতো আনন্দের চেয়ে আরও বেশি কিছু দেবে যাকে আপনি হাসিনার বন্ধু হিসেবে দেখেন, আমি নিশ্চিত নই। পাকিস্তান বাংলাদেশ কাছাকাছি এলেও ভারতই একমাত্র প্রতিবেশী যা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এবং বাংলাদেশ আমাদের পূর্বে সবচেয়ে মূল্যবান বন্ধু ছিল। কেন আপনি এই সম্পর্ককে জগাখিচুড়ি করতে চাইছেন?

কয়েক দশক ধরে এসব বিষয়ের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি দেখতে পেয়েছি যে, ভারত  বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি করবে না। হাসিনা যেভাবে ভারতকে সমর্থন করে গেছেন তা ভারতের অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। এটি বাংলাদেশের জন্যও ভালো ফল দেখিয়েছে। কারণ উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ উন্নয়ন দেখিয়েছে। এ কারণেই, ২০১৩ সালে, আমি একইভাবে নরেন্দ্র মোদিকে (তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী) খোলা চিঠিতে লিখেছিলাম, তাকে হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং আমাদের সীমান্ত চুক্তি শেষ করতে ডক্টর সিংয়ের সরকারকে সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছিলাম সেখানে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তা করেন। 

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বড় কোনো সমস্যা নেই। শুধুমাত্র ভাগ করা স্বার্থ এবং পারস্পরিক সুবিধার ক্ষেত্র রয়েছে। যদি ভারতের ওপর  আপনার একমাত্র বিরক্তির কারণ এই হয় যে, হাসিনা এখানে আছেন, আপনি সত্যিই আশা করবেন না যে, ভারত তাকে আপনার হাতে তুলে দেবে। আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো যে, আপনি এটিকে দু’দেশের সম্পর্কের মাঝে আনবেন না। পরিশেষে,  একটি পয়েন্ট  আমি তুলতে চাই। আপনার অবসর পরিকল্পনা কী? উপমহাদেশের অনির্বাচিত শাসকদের প্রস্থান সমস্যা রয়েছে। কেউ অবসরে গল্‌ফ খেলতে (জেনারেলদের জন্য), বই লিখতে বা তাদের ব্যবসা পুনরায় শুরু করতে সক্ষম হয়নি। আপনার পরিকল্পনা কী? আপনি যদি আপনার কাজ শেষ করতে সক্ষম হন তাহলে নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি নতুন বঙ্গবন্ধু হিসেবে বাংলাদেশে সমাদৃত হবেন, কারণ মূল  ইতিহাস এবং স্মৃতি দুটোই বাংলাদেশ থেকে মুছে গেছে। উৎস: মানবজমিন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়