পার্সটুডে- ফিদার জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে, এই সংকটের প্রভাব তার সন্তানদের উপর পড়ছে। তিনি বলেছেন, 'সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল তাদের সুস্থ রাখা। প্রচণ্ড ঠান্ডা ও বৃষ্টি তাদের রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে'।
গাজায় তীব্র শীত আসার সাথে সাথে অসংখ্য পরিবার বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। মিডল ইস্ট মনিটরের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, এই পরিবারগুলোর মধ্যে একটি ফিদা সোবাহ-এর পরিবার যিনি ৩৯ বছর বয়সী মা এবং যার সাত সন্তান রয়েছে। তিনি যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পরে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকেন। ফিদা, মূলত আল-জাহরা এলাকা থেকে এসেছেন, গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর মধ্যে তিনিও অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জ ও নানা প্রতিকূল প্রাকৃতিক সংকট মোকাবেলা করছেন। তিনি যে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকেন সেখানে ভারী বৃষ্টি এবং হিমশীতল আবহাওয়া জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে।
ফিদা বলেন, "আমাদের তাঁবুটি খুবই পাতলা কাপড়ের তৈরি। আমরা যতই পোশাক পরি না কেন কিংবা গায়ে কম্বল রাখি না কেন, ঠাণ্ডা বাতাস ও বৃষ্টি তাঁবুতে প্রবেশ করে এবং আমাদের বিছানা ও কাপড় চোপড় ভিজিয়ে ফলে। রান্না করাও কঠিন এবং খাবার ঠান্ডা হয়ে যায়। শিশুরা পড়াশোনা করার চেষ্টা করে, কিন্তু আলো এবং তাপের অভাব তাও প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদেরকে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাতে এবং নিরাপদ রাখার জন্য প্রতিদিন আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।"
নিজের এতো সমস্যা সত্ত্বেও, ফিদা শুধুমাত্র তার পরিবারের বেঁচে থাকার দিকে মনোনিবেশ করেননি। তিনি অন্যান্য লোকেদের সাহায্য এবং ত্রাণ কাজে সহায়তার জন্যও একজন প্যারামেডিক হিসাবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যারা কিনা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে তার এই পরিশ্রম, অবদান ও জনকল্যাণমূলক কাজ তাকে প্রতিরোধের প্রতীক করে তুলেছে।
ফিলিস্তিন মা ফিদা হলেন ১৫ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একজন, লাখ লাখ বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে একজন যিনি তাঁবুতে বাস করছেন এবং যেখানে প্লাস্টিকের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নেই। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঠাণ্ডা, বৃষ্টি ও বন্যার পানি থেকে সামান্যই সুরক্ষা দেয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শত শত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় অসহায় পরিবারগুলো ভয়ানক অবস্থায় দিন যাবন করতে বাধ্য হচ্ছে।
ফিদা সোবাহ: বিশ্ব আমাদের দুরবস্থা সম্পর্কে জানুক
ফিদার জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে, এই সংকটের প্রভাব তার সন্তানদের উপর পড়ছে।
তিনি বলেছেন, 'সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সন্তানদের সুস্থ রাখা। প্রচণ্ড ঠান্ডা ও বৃষ্টি তাদের রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের যা কিছু আছে তা ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করেছে। আমার সন্তানদের কষ্ট পেতে দেখে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে আছি। এমনকি আমি চিন্তিত যে আমরা পরবর্তী ঝড় তুফান থেকে আদৌ বাঁচব কি না।'
স্বামীকে হারানোর পর ফিদার সংগ্রামী জীবন
গত বছর ইসরাইলি হানাদারদের হাতে ফিদার স্বামী শাহাদাত বরণ করেন। তিনি বলেছেন, "স্বামী হারিয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি এবং আমার জীবনে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তিনি ছিলেন আমাদের জীবনের স্তম্ভ, আমার অবলম্বন, আমার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী। তাকে ছাড়া এখন আমিই সন্তানদের মা আমিই সন্তানদের বাবা। এটা এমন এক জীবন যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তার অনুপস্থিতি আর্থিকভাবে আমাদের আরও সমস্যায় ফেলেছে।"
অবশ্য ফিদা জোর দিয়ে বলেছেন: "আমার অনুভূতিতে প্রতিরোধ শক্তি এবং আশা উভয়ের সংমিশ্রণ রয়েছে। আশা করি আমাদের এ কষ্টের অবসান ঘটবে এবং একদিন আমরা মর্যাদা ও শান্তিপূর্ণ জীবন ফিরে পেতে সক্ষম হব।"
এদিকে, বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই শীতে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং যদি এখনই সাহায্য না আসে তবে আরও মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সাহায্য পাঠানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে ঠান্ডায় আরও শিশু মারা যাবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
বিশ্বের কাছে ফিদার জরুরী বার্তা
তিনি বলেছেন, "আমি চাই বিশ্বের মানুষ যাতে বুঝতে পারে যে আমরা ফিলিস্তিনিরা শুধু পরিসংখ্যান তৈরির বস্তু নই। আমরাও স্বপ্ন, পরিবার এবং ভবিষ্যতের আশা নিয়ে বেঁছে থাকতে চাই, আমরাও মানুষ। আমরা চাই বিশ্ব আমাদের দেখুক, আমাদের দুরবস্থা সম্পর্কে জানুক এবং আমাদের জীবন পুনর্গঠনে সাহায্য করুক।"
আপনার মতামত লিখুন :