পার্স-টুডে- ইউরোপ ও মার্কিন সরকারের মধ্যে উত্তেজনা ও বাকযুদ্ধ জোরদার হয়েছে। এমন উত্তেজনা ও বাকযুদ্ধ অতীতে খুব কমই দেখা গেছে।
একদিকে পুনরায় নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট কানাডা ও ডেনমার্কের দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এবং অন্যদিকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তি ইলন মাস্ক জার্মান ও ব্রিটিশ সরকারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টির কাছে ব্যস্ত। মাস্ক সামাজিক গণমাধ্যম এক্স-এ লেখা এক পোস্টে জনমত জরিপের জন্য একটি প্রশ্ন তুলেছেন যেখানে বলা হয়েছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ব্রিটেনের জনগণকে তাদের অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে রক্ষা করবে নাকি করবে না? এখানে ব্রিটেনের লেবার দলীয় সরকারের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এর জবাবে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নেতৃবৃন্দ তাদের ঘরোয়া বিষয়ে মাস্কের হস্তক্ষেপের ও ইউরোপের নির্বাচনগুলোতে প্রভাব ফেলার প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, মার্কিনীরা ইউরোপে ফ্যাসিবাদকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছে। ওদিকে ড্যানিশরাও গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ কেনার ট্রাম্পের আহ্বান জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।
এভাবে আটলান্টিকের দুই তীরে বাক-যুদ্ধ জোরদার হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলো খুবই উত্তেজনাপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী মার্কিন গ্রুপ- যাদের শ্লোগান হল মেইক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন বা MAGA- এরা ইউরোপে তাদের মিত্র দেশগুলোতে বামপন্থীদের পরিবর্তে খুব রক্ষণশীল ও উগ্র ডানপন্থীদের ক্ষমতায় আনতে চায়, এমনকি তারা মধ্য-ডানপন্থীদেরকেও ক্ষমতায় দেখতে চায় না ।
MAGA এমন সব সরকারকে ইউরোপের ক্ষমতায় আনতে চায় যারা নিজ নিজ দেশের স্বার্থের চেয়েও মার্কিন স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ইউরোপকে হুমকি দিয়ে বলেছেন তারা আরও বেশি মার্কিন গ্যাস ও তেল না কিনলে ইউরোপীয় পণ্যগুলোর ওপর বড় ধরনের করারোপ করা হবে। ফলে ইউরোপীয় রপ্তানি শিল্পের প্রায় বারোটা বাজার উপক্রম হবে। অথচ ইউরোপ এখনও কোভিড-১৯-এর কোয়ারেন্টাইনের সৃষ্টি ধকলগুলো এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ চলার কারণে সৃষ্টি জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির ধকল থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
ট্রাম্প ও তার সঙ্গীদের মামাবাড়ির আবদার হল ইউরোপ যেন মার্কিন জনগণের কঠিন অবস্থা উপলব্ধি করে নতজানু হয়। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোতে বামপন্থী বা মধ্য-ডানপন্থীরা ক্ষমতায় থাকলে এই লক্ষ্য অর্জন করা হবে খুব কঠিন। আর এ জন্যই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ও প্রভাবশালী সামাজিক মাধ্যম এক্স-এর মালিক ইউরোপের সরকারগুলোর বিরুদ্ধে প্রচার-যুদ্ধ শুরু করেছেন এবং এরিমধ্যে এই প্রচার-যুদ্ধের প্রভাবে পতন ঘটেছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর। ইলন মাস্ক একই অবস্থা ঘটাতে চাচ্ছেন ব্রিটেন ও জার্মানিতে। ইউরোপের প্রভাবশালী এই দুই দেশের সঙ্গে সমন্বয় করা ছাড়া অন্যান্য ক্ষুদ্র ও দুর্বল সরকারগুলো ট্রাম্পের মার্কিন সরকারের অনুগত হবে না।
অবশ্যই ইউরোপের কয়েকটি সরকারের পতন ঘটলেও সেখানকার জনগণ ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের আধিপত্যকামী নীতি মেনে নেবেন না। ফলে গড়ে উঠবে প্রতিরোধ এবং তা আটলান্টিকের দুই তীরের দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে করবে বেশ নড়বড়ে। অবশ্য মার্কিন MAGA সরকার-গোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির জোরে ইউরোপকে নতজানু করতে পারবে বলে আশাবাদী। আর যদি এ দুইয়ের জোরে তা না ঘটে তাহলে মার্কিন সরকার সামরিক শক্তিকেও ব্যবহার করতে পারে ইউরোপের বিরুদ্ধে। আর তেমনটি ঘটলে যে ইউরোপ এতকাল রাশিয়াকে তাদের জন্য হুমকি মনে করত তারা মার্কিন স্বার্থান্ধ-প্রবণ আগ্রাসী নীতির মোকাবেলায় নিজেদের অরক্ষিত বলেই মনে করবে। ট্রাম্প-গ্রুপের এই নীতি ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ের কারণে দিনকে দিন আরও আক্রমণাত্মক ও স্বার্থান্ধ হয়ে উঠবে।
আপনার মতামত লিখুন :