ব্রাজিল থেকে এক ইসরাইলি সৈন্য পালিয়ে যাওয়ার পর এবং অন্তত ১০টি দেশে অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করার পর, ইসরাইলি সৈন্যদের বিদেশ ভ্রমণ এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে তাদের কার্যকলাপের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরাইলি সৈন্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তেলআবিব কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সরকারের নিরাপত্তা সূত্রগুলো এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। ইসরাইলি রেডিও এবং টেলিভিশন জানিয়েছে, বিশ্বের ১০টি দেশে ইসরাইলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৫০টি অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ রিপোর্ট করেছে যে ইসরাইলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গাজায় যুদ্ধাপরাধে অংশ নেওয়ার অপরাধে বিদেশে ভ্রমণ করার সময় গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি হতে পারে এমন সৈন্যদের সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইসরাইলি সৈন্যদের তাদের বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজনিয়তা ভালো করে যাচাই করার জন্য এবং একই সাথে তাদের সোসাল মিডিয়া কম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর তথ্য সুরক্ষা ইউনিট ধারণা করছে সৈন্যরা প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ বার্তা সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে, আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেল, ইসরাইলি মিডিয়ার বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে চারজন ইসরাইলি সৈন্যের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল এবং ফ্রান্সে তদন্ত করা হয়েছে।
ব্রাজিলের একটি আদালত দেশটির পুলিশকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ইসরাইলি সৈন্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। সদ্য চাকরি শেষ করে ছুটি কাটাতে ব্রাজিলে যাওয়া এই ইসরাইলি সৈনিক ব্রাজিলের আদালতের রায় জানার সঙ্গে সঙ্গে সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ইসরাইলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। নেসেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক ও নিরাপত্তা কমিটির প্রধান ইউলি এডেলস্টেইন মন্ত্রিসভাকে বিদেশে তাদের সৈন্যদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
বিরোধী দলের নেতা ইয়ার ল্যাপিডও নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভাকে বিশ্ব অঙ্গনে ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। ল্যাপিড বলেছেন: গাজা যুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে ইসরাইলি সৈন্যকে ব্রাজিল থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্ত্রিসভার একটি বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা।
আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি যেখানে ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসরাইলের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে এবং আমাদের সৈন্যরা গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে ভ্রমণ করতে অস্বীকার করছে। এদিকে, চিলির ৬২০ জন আইনজীবী সেদেশে উপস্থিত এক ইসরাইলি সৈন্যের অপরাধ তদন্ত করছে।
চিলির ৬২০ আইনজীবীর একটি দল সম্প্রতি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ৭৪৯তম ব্রিগেডের ইসরাইলি সৈনিক সার হিরচুরিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে, যে কিনা গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বর্তমানে চিলিতে রয়েছে।
আইনজীবীদের এই গ্রুপের প্রতিনিধি নেলসন হাদ্দাদ রাজধানীর আঞ্চলিক প্রসিকিউটর অফিসে জমা দেওয়া অভিযোগের বিশদ ব্যাখ্যা করে বলেছেন: "আমরা দখলদার সেনাবাহিনীর ৭৪৯তম ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের একজন কর্মকর্তার চিলি উপস্থিতিতে আমাদের বিরক্তি প্রকাশ করছি। গাজার আল-জাইতুন এলাকায় বসবাসকারী একজন ভুক্তভোগী এবং নিহতদের স্বজনদের সাক্ষ্যসহ আমরা যে সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছি, সে অনুযায়ী এই সৈনিক গুরুতর অপরাধ করেছে।
গত বছর অক্টোবরে, "ইন্ডিয়া রজব" ফাউন্ডেশন গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য ১০০০ ইসরাইলি সৈন্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। বেলজিয়াম-ভিত্তিক এই ফাউন্ডেশনের নামকরণ করা হয়েছে ছয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মেয়ের নামে, যে গাজায় ইসরাইলের হামলায় তার পরিবারসহ শহীদ হয়েছিল। এই গ্রুপটি চিলি এবং আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বজুড়ে ইসরাইলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা চালাচ্ছে।
এছাড়াও, ফরাসি পার্লামেন্টের সদস্য টমাস পোর্টেস, গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধে অংশ নেওয়ার অভিযোগে দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে যুক্ত ৪১৮৫ ফরাসি সৈন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণে ইসরাইলি দখলদার সেনাবাহিনীতে ৪ হাজারেরও বেশি ফরাসি নাগরিক গাজায় যুদ্ধ ও সহিংসতায় লিপ্ত রয়েছে।
এছাড়াও, ডাচ কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপিত অভিযোগে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সম্ভাব্য গণহত্যা সম্পর্কিত অভিযোগের একটি সম্পূর্ণ তালিকা দেয়া হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে জবাবদিহিতা করতে বলা হয়েছে।
হারুন রেজা নামের একজন ডাচ আইনজীবীও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন
আইসিসি যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০০০ ইসরাইলি সৈন্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা ইতিমধ্যেই যুদ্ধাপরাধ ও ফিলিস্তিনি হত্যার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইসরাইলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে। তাই আশা করা যায় যে, ইসরাইলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বহু সংখ্যক মামলা আদালতে তদন্ত করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :