দি প্রিন্ট/টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রতিবেদন: ভারতের সাম্ভালে সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বার্ককে ১৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২ কোটি (১.৯১ কোটি) টাকার জরিমানা পরিশোধ করার নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে অন্যথায় তার সম্পত্তি ক্রোকের মুখোমুখি হতে হবে। সমাজবাদী পার্টির এমপি জিয়াউর রহমান বার্কও সাম্ভালের শাহী মসজিদ সমীক্ষা চলাকালীন সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহী মসজিদ সমীক্ষার সময় সহিংসতার জন্য মামলার ফাঁদ সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বার্কের চারপাশে শক্ত হয়ে গেছে। কারণ ইউপি পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড (ইউপিপিসিএল) সতর্ক করেছে যে যদি তিনি বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে জরিমানার অর্থ প্রদান না করেন তবে তার সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে।
বিদ্যুত চুরি ও অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে সাম্ভাল জেলায় চলমান অভিযানে গত ১৯ ডিসেম্বর ওই মুসলিম এমপি’র বিরুদ্ধে এই জরিমানা করা হয়। ওই দিনই বড় আকারের বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে তার বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ইউপি পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের সাব-ডিভিশনাল অফিসার সন্তোষ ত্রিপাঠি বলেন, বিদ্যুৎ আইনের ধারা ৩ এর অধীনে শনিবার সাম্ভলের এমপির বাসভবনে নোটিশ দিয়ে তাকে ১.৯১ কোটি টাকা জরিমানা পরিশোধে ১৫ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। তিনি জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে তা পুনরুদ্ধারের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করা হবে। সরকারী বকেয়া আদায় করার জন্য তার সম্পত্তি ক্রোক করা হতে পারে। তবে ত্রিপাঠি জানান, এমপির বাসভবনে আমাদের কার্যকলাপ সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে বলে তিনি হুমকি দিয়েছেন। তল্লাশি চালিয়ে দুটি বিদ্যুতের মিটারে কারচুপির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে এত বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ বিলকে বিস্ময়কর বলে মনে করছেন অনেকে।
এছাড়া গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আদালতের নির্দেশিত জরিপের সময় শাহী মসজিদের বাইরে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে জিয়াউর রহমান বার্কের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওই সহিংসতায় চারজন নিহত এবং পুলিশসহ অনেকে আহত হন।
সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এমপির বাবা মুমলুক উর রহমান বার্কের বিরুদ্ধে গত ১৯ ডিসেম্বর একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়।
নির্বাহী প্রকৌশলী নবীন গৌতম বলেছেন, জরিমানা না দেওয়া পর্যন্ত এমপির বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। তার বাসভবনের দুটি মিটার গত ছয় মাস ধরে শূন্য রিডিং দেখাচ্ছে এবং এই বছরের বাকি কোনো মাসে ইউনিট ১০০ এর বেশি ছিল না।
ভারতের বিদ্যুত বিভাগ দাবি করেছে যে গত বৃহস্পতিবার সকালে জিয়াউর রহমান বার্কের বাসায় পরিদর্শনের সময় দুটি বিদ্যুতের মিটারে কারচুপির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার ফলে বার্কের বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান বার্ক জেলা বিদ্যুত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেন, তিনি বিদ্যুৎ চুরি বিরোধী আইনের ১৩৫ ধারার অধীনে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছেন। সাব ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) সন্তোষ ত্রিপাঠী অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘বৈদ্যুতিক লোড গণনা করা হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ। এমপির বাসভবনে বার্ষিক বিদ্যুতের ব্যবহার শূন্য হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছিল, এয়ার কন্ডিশনার এবং ফ্যানের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও। বাসস্থানের পুরানো মিটারগুলি সিল করার পর তা বিশ্লেষণের জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাটি এমপি বার্কের ক্রমবর্ধমান আইনি ঝামেলা বাড়িয়েছে। সাম্ভালের শাহী মসজিদ সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য তাকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে চারজন নিহত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ অভিযোগ করেছে যে বার্ক রাজনৈতিক লাভের জন্য তার বক্তৃতার মাধ্যমে জনতাকে উস্কে দিয়েছিল, যে অভিযোগটি তিনি এবং তার দল অস্বীকার করেছেন, অশান্তি উসকে দেওয়ার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন।
বার্ক গত ১৮ ডিসেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন, তার গ্রেপ্তারে স্থগিতাদেশ এবং সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত একটি এফআইআর বাতিল করার জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :