সৌদি আরবে বসবাস, শ্রম ও সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এ সপ্তাহের মধ্যে ২০ হাজার ১৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এঁদের মধ্য থেকে এরই মধ্যে ৯ হাজার ৫০০ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১১ হাজার ৩০২ জন বসবাস আইন লঙ্ঘনকারী, ৫ হাজার ৬৫২ জন সীমান্ত আইন লঙ্ঘনকারী এবং ৩ হাজার ২০৫ জন শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী রয়েছেন।
এ ছাড়া ১ হাজার ৮৬১ জনকে সৌদি আরবে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইয়েমেনি নাগরিক, ৬৫ শতাংশ ইথিওপিয়ার এবং ২ শতাংশ অন্যান্য দেশের নাগরিক। অন্য দিকে, ১১২ জনকে সৌদি আরব ছেড়ে অবৈধভাবে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় আটক করা হয়েছে।
এর বাইরে, আইন লঙ্ঘনকারীদের আশ্রয়, পরিবহন বা কাজের সুযোগ প্রদানের অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে ২৯ হাজার ৫৪০ প্রবাসী আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ২০ হাজার ৩৩৭ জনকে ভ্রমণ নথি প্রস্তুতের জন্য তাদের নিজ দেশের দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। ৩ হাজার ৪২৫ জন সৌদি আরব ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ৯ হাজার ৪৬১ জনকে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, অবৈধ বাসিন্দাদের সহায়তা করলে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা এবং সংশ্লিষ্ট যানবাহন ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের শাস্তি হতে পারে। মক্কা, রিয়াদ ও পূর্বাঞ্চলে ৯১১ নম্বরে এবং অন্যান্য অঞ্চলে ৯৯৯ ও ৯৯৬ নম্বরে ফোন করে এ ধরনের আইন লঙ্ঘনের তথ্য জানানোর জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে, গালফ নিউজেরই এক প্রতিবেদনে বলা হয়—প্রতিদিন চার হাজার থেকে ছয় হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে সৌদি আরব। এটি একটি রেকর্ড, কারণ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর গত ৫৩ বছরের কোনো বছর প্রতিদিন এত সংখ্যক বাংলাদেশিকে ভিসা দেয়নি সৌদি আরব।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে ৮৩ হাজার বাংলাদেশিকে শ্রমিক ভিসায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে সৌদির সরকার। এটিও রেকর্ড, কারণ এর আগে কখনো এক মাসে এত সংখ্যক বাংলাদেশিকে শ্রমিক ভিসায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি দেশটি।
সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বহুমুখী করে তুলতে ‘ভিশন ২০৩০ প্ল্যান’ নামের দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বিমানবন্দর, রেলপথসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও ভবন সংশ্লিষ্ট নির্মাণকাজ ব্যাপকভাবে চলছে দেশটিতে।
তা ছাড়া ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আসর বসবে সৌদিতে। দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল স্টেডিয়াম এবং এ–সংক্রান্ত স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এসব কাজের জন্য প্রচুর কর্মী প্রয়োজন দেশটির।
সৌদি সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের প্রতি শুভেচ্ছা ও সৌজন্যবশত এ দেশের কর্মীদের জন্য দুয়ার খুলেছে দেশটি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশের সরকারকে ৩৭২ টন মাংস দান করেছে রিয়াদ। বাংলাদেশের বিভিন্ন এতিমখানা এবং মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে সেই মাংস।
আপনার মতামত লিখুন :