ভারত–বাংলাদেশ দু’দেশেই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কবীর সুমন। সমসাময়িক বিষয় তাঁকে আলোড়িত করলে মন্তব্য করতে কসুর করেন না। সম্প্রতি ‘পতাকার অবমাননা’ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি তড়জা। সেই সঙ্গে হাসিনার পতনের পর কূটনৈতিক টানাপোড়েন তো চলছেই। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কবীর সুমন।
আগে-পিছে কোনো মেনশন ছাড়াই কবীর সুমন তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন—‘তোরা ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে ঝগড়া কাজিয়া ক’রে মর–আমি প্রেম করছি, প্রেম ক’রে যাবো।’
গতকাল তিনি লিখেছেন, ‘সীমান্তে কাঁটাতার–বেড়া থেকে ফেলানি যখন ঝুলছিলেন, কিসের কার অবমাননা হচ্ছিল তখন।’
বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবেরকুঠি এলাকায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ–এর সদস্যরা ১৪ বছরের ফেলানী খাতুনকে গুলি করে হত্যা করে। বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ানদের এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। হত্যার পর সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয় ফেলানির লাশ। পরে তারা লাশটি নামিয়ে নিয়ে যায়। দু’দিনব্যাপী পতাকা বৈঠক শেষে হত্যার ৩০ ঘণ্টা পর ফেলানির লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
এই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেই কবীর সুমন লিখেছেন—
কতগুলো উজবুক পতাকা মাড়ালো
বিজ্ঞরা তাই ব্লাড প্রেশার বাড়ালো।
পতাকার চেয়ে বড় ফেলানির বুক
সেটা তাক করেছিল কার বন্দুক।
কাঁটাতারে ঝুলছিল মেয়েটা আমার
দেশের বুলেট দেশপ্রেমের খামার।
কার দেশ কার ফ্ল্যাগ কার কাঁটাতার
কোথায় রইল ঝুলে ফেলানি আমার।
পরের জন্মে মেয়ে আমি আর তুমি
ফ্ল্যাগহীন কোনও দেশে খুঁজে পাবো ভূমি।
আমার সঙ্গে গান গাইবে তুমিও
গাইবে অন্য কোনও
জন্মভূমিও।।
আজ রোববার ভোরে আরেকটি কবিতা পোস্ট করেছেন কবীর সুমন। তিনি লিখেছেন—
কোন্ পতাকায় লাথি দেয় কেউ
কোন্ পতাকায় ফুল
আমার প্রেমের পতাকা তোমার
এলোমেলো হওয়া চুল
পতাকায় নয় কিছুই শুরু
পতাকায় নয় শেষ
আমিই ভারতবর্ষ প্রিয়া
আমিই বাংলাদেশ
কারা করে কার অপমান প্রিয়া
কতগুলো উজবুক
আদরে আদরে এঁকে দেবো চলো
সবার দেশের মুখ
ভুলে যাই কেন একজন ক্রুশে
ঝুলেছেন একা একা
সকলের হয়ে, চলো প্রিয়তমা
যদি পাই তাঁর দেখা
তিনি বলবেন এসো হাত ধরো
শত্রুতা ভুলে যাও
পতাকার চেয়ে ভালবাসা বড়
প্রেমের গানটা গাও।
আপনার মতামত লিখুন :