মহসিন কবির: বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা ভারতের গণমাধ্যম অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ভেরিফাইড পেইজ থেকেও চালানো হচ্ছে নানা প্রোপাগান্ডা। পুরনো এবং ভিন্ন স্থানের ছবি প্রকাশ করে দেওয়া হচ্ছে ধর্মীয় উসকানি। এতে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশিরা। তারা বলছেন, মিথ্যা ও ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
এমন অপপ্রচারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশিরা। সামজিক মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তারা বলছেন বাংলাদেশের সঙ্গে কোন কারণ ছাড়াই পায়ে পড়ে ঝগড়া করছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিতর্কিত হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর আবার বাংলাদেশকে নিয়ে ‘মিথ্যা’ খবরে সয়লাব হয় ভারতীয় মিডিয়াগুলো। সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেখা যায়, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের পর ২৬ নভেম্বর কলকাতা ইসকনের সহসভাপতি একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, ‘রাস্তায় লাশ পড়ে আছে।
হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ¦লছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য আজকের রাতটা খুব বড় হতে যাচ্ছে। দয়া করে তাদের জন্য এবং চিন্ময় দাসের জন্য প্রার্থনা করুন, যিনি দাগি আসামিদের সঙ্গে জেলে রাত কাটাচ্ছেন।’ যদিও ওইদিন চট্টগ্রামের কোথাও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ কিংবা ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। একই দিনে ভয়েজ অব বাংলাদেশি হিন্দুজ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর পক্ষ সমর্থনে আসা মুসলিম আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা হত্যা করেছে।’ এ ছাড়া মেঘ আপডেট নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকেও একই দাবিতে রিপাবলিক টিভির একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়।
রিপাবলিক টিভির অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষ সমর্থনকারী মুসলিম আইনজীবী খুন।’ রিপাবলিক টিভির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আদালতের বাইরে পুলিশের গুলিতে হিন্দু পুরোহিত কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হয়েছে।’ রিপাবলিক টিভির পোস্ট করা ভিডিওটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের ওপইন্ডিয়া।
এ হত্যার ঘটনায় ভুল বার্তা দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও। ‘বাংলাদেশে পুলিশের সাথে হিন্দু আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত একজন’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুলিশ অফিসার লিয়াকত আলী বলেছেন, ‘কোর্টের (চট্টগ্রাম) বাইরে হওয়া সংঘর্ষের মধ্যে দাসের পক্ষ সমর্থনকারী একজন উকিল নিহত হয়েছে।’
একই উক্তি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে লাইভমিন্ট, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য প্রিন্ট, হিন্দুস্তান টাইমস, ভয়েজ অব আমেরিকা, আরব নিউজ। এই উক্তিটির সবচেয়ে পুরনো সূত্রটি পাওয়া যায় রয়টার্সের প্রতিবেদনেই। যদিও চট্টগ্রাম পুলিশের এমন বক্তব্য না দেওয়ার বিবৃতির পর রয়টার্স দুবার সংশোধনী দিয়ে প্রতিবেদনে পরিবর্তন এনেছে।
স্বার্থে আঘাত আসায় বিশ্বের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে ভারত এমনটি বলছেন বলে গণমাধ্যম জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে দখল করে নিয়েছিল! এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের আওতায় নেয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করছে। তারা মনে করে, বাংলাদেশকে অষ্টম সিস্টার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তাদের সেভেন সিস্টার্স নিরাপদ থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলছেন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কোনো চেষ্টা সফল হবে না। তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের গণমাধ্যমকে বাংলাদেশে এসে পরিস্থিতি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তা না করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে দেশটির গণমাধ্যম।
সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘে জানিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) সংখ্যালঘু ইস্যু সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফোরামে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
আপনার মতামত লিখুন :