প্রফেসর এম এ রশীদ : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে মৈত্রী ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও, বিভিন্ন সময়ে কিছু বিষয় ঘিরে উভয়ের মধ্যে সন্দেহ এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের আবহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে কিছু মহল মাঝে মাঝে দাবি করে, ভারতের কিছু নীতি ও পদক্ষেপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করার উদ্দেশ্যে নেয়া। তবে এই বিষয়টি জটিল এবং অনেকাংশেই ভূরাজনৈতিক অবস্থান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসংশ্লিষ্ট।
ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রায়ই উঠেছে এবং এটি দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে। কিছু রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষক মনে করেন, ভারত তার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে। এই অভিযোগের মূল কারণগুলো নিম্নরূপ :
১. নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে, বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভ‚মিকা এবং সরকারের সাথে সম্পর্কের কারণে, ভারতকে কখনো পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়। নির্বাচনের সময় ভারতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বাংলাদেশ সফর, বিভিন্ন বৈঠক এবং কূটনৈতিক মন্তব্য অনেকের মধ্যে সন্দেহের জন্ম দেয় যে, ভারতের কিছু স্বার্থ রয়েছে যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।
২. রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক
ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, বিশেষত আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এ সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার জন্য কিছু রাজনৈতিক দল ভারতের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এটি একদিকে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, অন্যদিকে জনমনে প্রশ্ন তোলে যে, ভারত বাংলাদেশের স্বার্থের চেয়ে তার নিজের স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে কি না।
৩. নিরাপত্তা এবং কৌশলগত সম্পর্ক
ভারতের সাথে নিরাপত্তা ও কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু মহল মাঝে মধ্যে সন্দেহ প্রকাশ করে যে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর নিরাপত্তার ঝুঁকি বা হুমকি সৃষ্টি হতে পারে।
গোয়েন্দা সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদান
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমন এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তবে, কিছু মহল আশঙ্কা করে যে এ ধরনের গোয়েন্দা সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশে অতিরিক্ত নজরদারি চালাতে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, যেমন রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (জঅড) এর সাথে এ ধরনের যোগাযোগ বাংলাদেশের নিরাপত্তা নীতিতে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা ও বিএসএফের ভূমিকা
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) মাঝে মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যা বাংলাদেশীদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের প্রাণহানির ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। এর ফলে অনেকেই মনে করেন যে, সীমান্তে ভারত শক্তিশালী অবস্থান বজায় রেখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে চায়। সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা ও চাপে রাখা ভারত-বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টার মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তবে এটি কখনো কখনো বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় চাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বারবার চাপ দেয়া হয় যে, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে যেন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ভারতে প্রবেশ করতে না পারে। এর ফলে বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার চাপ তৈরি হয়।
৪. আঞ্চলিক কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং চীনের প্রভাব
বাংলাদেশের প্রতি ভারতের কৌশলগত আগ্রহ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং বিশেষত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, বিশেষ করে অবকাঠামো, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে। এই সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও, এতে ভারতের উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ ভারত মনে করে যে চীনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠতে পারে, যা ভারতের জন্য ভ‚রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
চীনা বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্প
চীন বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সড়ক ও রেল সংযোগ উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ খাতের মতো অবকাঠামো উন্নয়নে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগকে ভারত সতর্কভাবে দেখছে, কারণ বন্দরগুলো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা চীনের জন্য ভারত মহাসাগরে প্রবেশের সুবিধা তৈরি করতে পারে।
সামরিক সহযোগিতা
চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশ। বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। ভারতের দৃষ্টিতে, বাংলাদেশের সামরিক ক্ষেত্রে চীনের উপস্থিতি আঞ্চলিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে এবং এতে ভারতের কৌশলগত প্রভাব কমাতে পারে।
বাংলাদেশকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে
ভারত চায় বাংলাদেশ তার কৌশলগত সিদ্ধান্তে ভারসাম্য বজায় রাখুক এবং চীনের প্রতি অত্যধিক নির্ভরশীল না হোক। তাই ভারত তার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, যাতে বাংলাদেশ চীনের অতিরিক্ত প্রভাব থেকে দূরে থাকে। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রভাব রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এ প্রচেষ্টা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।
কৌশলগত ত্রিভুজে বাংলাদেশের ভূমিকা
ভারত, চীন এবং বাংলাদেশ একটি কৌশলগত ত্রিভুজের মধ্যে অবস্থান করছে। চীন এশিয়ায় তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (ইজও) প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে তার উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে, ভারত মনে করে যে চীন এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর মাধ্যমে ভারতকে ভূরাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতে এবং এ জন্য বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত অবস্থানে রাখতে চায়। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশকে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে হয় যাতে উভয় দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় থাকে।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য নিজস্ব কৌশলগত স্বাধীনতা অপরিহার্য। এ জন্য চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য এটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ।
৫. সামরিক সহযোগিতায় ভারসাম্যহীনতা
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতায় কিছু ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, যেমন অস্ত্র সরবরাহ, প্রশিক্ষণ এবং সামরিক প্রযুক্তি। ভারত বেশ কিছু সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেয়, তবে বাংলাদেশ এই সহযোগিতার পরিমাণ ও ধরন নিয়ে সতর্ক থাকে। কারণ অতিরিক্ত সামরিক নির্ভরশীলতা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৬. বাণিজ্যিক চুক্তি এবং স্থাপনা ব্যবহারের অনুমতি
বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই মনে করছেন এর মাধ্যমে ভারতের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত প্রভাব বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ এবং বাণিজ্যিক খাতে ভারতীয় বিনিয়োগকে ঘিরে এসব আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অবকাঠামো খাতে ভারতের বিনিয়োগ
ভারত বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে, বিশেষ করে সড়ক, রেল এবং বন্দর উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতীয় অংশীদারত্বের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কৌশলগত স্থাপনাগুলোর ওপর ভারতের একটি কার্যত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শঙ্কা তৈরি করে। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের কৌশলগত স্থাপনায় ভারতের এত বেশি অংশগ্রহণ আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান দুর্বল করতে পারে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত
বাংলাদেশে ভারতের বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে, যেমন বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। কিছু মহল মনে করেন, বাংলাদেশ এ খাতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এর ফলে এই খাতে বাংলাদেশের নীতিগত ও কৌশলগত স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে।
বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা এবং অর্থনৈতিক নির্ভরতা
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রচুর পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশের পণ্য ভারতে প্রবেশে নানা সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়। কিছু বিশ্লেষকের মতে, অসম বাণিজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হ্রাস করতে এবং ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশী শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি
বাংলাদেশের ব্যবসা ও শিল্পে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শঙ্কা আছে। অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচুর মূলধন ও প্রযুক্তিগত সুবিধা থাকায় স্থানীয় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়ছে, যা স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় বিনিয়োগের উত্থান বাংলাদেশের জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য হুমকি হতে পারে। এই প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারসাম্যপূর্ণ বিনিয়োগ নীতির প্রয়োজন
বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করা জরুরি, যাতে অন্য দেশের বিনিয়োগ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়, কিন্তু একই সাথে সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
৭. সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্যের ওপর প্রভাব
বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদান ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা থাকে, কারণ এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্য অবকাঠামোর ওপর ভারতের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়।
৮. গণমাধ্যমে প্রভাব ও জনমত তৈরির চেষ্টা
বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমের ওপর ভারতের প্রভাব থাকার অভিযোগও রয়েছে। রাজনৈতিক ইস্যুতে ভারতের ক‚টনৈতিক কার্যক্রম এবং মন্তব্য মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। অনেক সময় ভারতীয় গণমাধ্যমও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে পক্ষপাতমূলক অবস্থান নেয়, যা জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
৯. সীমান্ত ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং প্রচারণা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভারতের প্রতি জনগণের এই নেতিবাচক মনোভাবকে কখনো কখনো রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে। সীমান্ত সঙ্ঘাতের ইস্যুকে তুলে ধরে ভারতের প্রতি বিরোধী মত প্রকাশ করে কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে, যা জনমনে ভারতবিরোধী মনোভাবকে প্রভাবিত করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এসব ঘটনার নিন্দা জানায় এবং এ ধরনের ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের মনোযোগ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতির এই মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট দিকটি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সীমান্ত সঙ্ঘাত নিরসনে করণীয়
সীমান্ত সঙ্ঘাত ও উত্তেজনা কমানোর জন্য বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। নিয়মিত সীমান্ত বৈঠক, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি, নিরীহ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সংঘর্ষের বিষয়ে দ্রুত সমাধানমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে। জনমনে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা কমাতে হলে দুই দেশের সরকারকে একসঙ্গে কাজ করে সীমান্ত নিরাপত্তায় ভারসাম্য এবং মানবাধিকার সমুন্নত রেখে সমাধান খুঁজতে হবে।
লেখক : সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
আপনার মতামত লিখুন :