সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ডেমচকে এখনও পর্যন্ত দু’দেশই পাঁচটি করে ছাউনি সরিয়ে নিয়েছে ৷ ডেপসাংয়েও সেনা পিছিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে দু’দেশ ৷ সেনা সরানোর প্রক্রিয়াটি পূর্ব এলএসি বরাবর সৈন্যদের টহলের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি অনুযায়ী হচ্ছে ৷ যা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা অচলাবস্থার অবসান ঘটানোর দিকে বড় অগ্রগতি হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে।
দুই দেশের সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে থাকা সেনাদের সরানো শুরু হয়েছে। আপাতত দুটি অঞ্চলে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো ডেপস্যাং ও ডেমচক।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়াং শুক্রবার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সমাধান সূত্র মেনে দুই দেশের সেনাবাহিনী প্রাসঙ্গিক কাজ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সেই কাজ সুষ্ঠুভাবেই চলছে।
দিল্লিতে এক সরকারি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ডেপস্যাং ও ডেমচকেই দুই দেশের সেনাবাহিনী এখনো একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। সেই বাহিনী প্রত্যাহারের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি বলেও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।
গত সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি প্রথম জানান, পূর্ব লাদাখের বিতর্কিত এলাকার উত্তেজনা প্রশমনে ভারত ও চীনের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছে। সেই বোঝাপড়া অনুযায়ী দুই দেশ এলএসিতে টহলদারি করবে ও নজরদারি রাখাবে। ওই বোঝাপড়া মেনেই পরবর্তী সময়ে সেনা অপসারণের কাজ শুরু হবে এবং ২০২০ সালে এপ্রিল মাসে এলএসিতে সেনানীদের যে অবস্থান ছিল, সেখানে দুই দেশের সেনাবাহিনী ফিরে যাবে।
ওই ঘোষণার পরদিন চীনের পক্ষ থেকেও ওই সমঝোতা–সংক্রান্ত বিবৃতি দেওয়া হয়। তারপরই ভারত জানায়, কাজানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন।
পাঁচ বছর পর সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সেই বৈঠকের পর কোনো যৌথ বিবৃতি প্রচার করা হয়নি। দুই দেশের বিবৃতিতে যথেষ্ট ফারাকও দেখা যায়। ভারতের বিবৃতিতে যাকে ‘চুক্তি’ বলা হয়েছে, চীনের বিবৃতিতে তা ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’।
সেই ‘চুক্তি’ অথবা ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ কোন কোন ক্ষেত্রে, তার চরিত্রই–বা কী, দুই দেশের কেউই শুক্রবার পর্যন্ত তা স্পষ্ট করেনি। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস যদিও সেই চুক্তিতে কী কী রয়েছে, জানতে চেয়েছে। ভারত সরকার এখনো নীরব।
পাঁচ বছর আগে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্কে ভারত বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। টেলিকম ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে ব্যবহৃত প্রযুক্তি রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অনেক কড়াকড়ি করা হয়। সেই সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি চীন অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছে।
চীনের দাবি, সীমান্ত বিবাদের মীমাংসার বিষয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত নয়। বিবাদের এক ইতিহাস রয়েছে। সময় নিয়ে তার মীমাংসায় সচেষ্ট হওয়া দরকার। এর পাল্টা ভারতের বক্তব্য, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে, স্থিতাবস্থা না ফিরলে বাণিজ্যিক বা অন্য সম্পর্কও সাবলীল হতে পারে না।
সীমান্ত বিতর্ক ঘিরে দুই দেশ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলেও আলাপ–আলোচনার দরজা কখনো বন্ধ হয়নি। এ ক্ষেত্রে ভারতের ‘পাকিস্তান নীতি’ ও ‘চীন নীতি’ পৃথক। সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গত পাঁচ বছরে বিশটির বেশি বৈঠক হয়েছে। কূটনৈতিক স্তরেও আলোচনা অব্যাহত থেকেছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও চলেছে নানা বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও। আড়ষ্টতা সত্ত্বেও চীন–ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বহরে যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাপিয়ে গেছে চীন। ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে ভারত–চীন মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। যদিও চীনে ভারতের রপ্তানি ছিল মাত্র ১৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যঘাটতি এই মুহূর্তে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
চীনের চাহিদামতো বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ ভারত তুলে নিলে বাণিজ্যঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। টেলিকমসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো উন্মুক্ত হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতীয় শিল্প মহলেরও চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। বিশেষজ্ঞ মহল যদিও এই বিষয়ে ভারতকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি গভীর বিবেচনায় রাখতে বলেছে। সূত্র : প্রথমআলো, ইটিভি ভারত
আপনার মতামত লিখুন :