শিরোনাম
◈ মধ্যরাতে গ্রেফতার ব্যারিস্টার সুমন (ভিডিও) ◈ অক্টোবরেও ঊর্ধ্বমুখী  রেমিট্যান্সের গতি ◈ বাতিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প  ◈ বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে ◈ ‘আমি কোন দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নিই’: (ভিডিও) ◈ ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা (ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা প্রশ্নে যা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ◈ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে মশাল মিছিল (ভিডিও) ◈ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেননি: মানবজমিন সম্পাদক (ভিডিও) ◈ দিল্লি থেকে মীরাটের সেনানিবাসে শেখ হাসিনা?

প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৪:৩৭ দুপুর
আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সারা বিশ্বকেই কি ঝুঁকিতে ফেলে দিল ইসরায়েল‑ইরান সংঘাত?

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

সম্প্রতি গাজা ও লেবাননে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইরানের আইআরজিসি নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে স্বীকার করেছে তেহরান।

হামলার পরপরই ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ৯০ শতাংশই আয়রন ডোম ব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রতিহত করতে পেরেছে।

এরপর ইরান যদিও বলেছে, ইসরায়েলে হামলা আপতত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। তেল আবিব আর উসকানি না দিলে (অর্থাৎ ইসরায়েল পাল্টা হামলা না চালালে) তারা আর নতুন করে হামলা চালাবে না। তারপরও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, ইসরায়েল ও ইরানের এই সংঘাত গোটা বিশ্বের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যেভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠল মধ্যপ্রাচ্য
এক বছর আগের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য এখন অনেক বেশি উত্তপ্ত। এই সংঘাতের শুরু গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধ শুরুর মধ্য দিয়ে। পরে তা ক্রমশ লেবানন ও ইরানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

লেবাননে ছড়ানোর কারণ–ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ শুরুর পর হামাসকে সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলে মাঝে মাঝেই রকেট ছুড়তে শুরু করে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরপর হিজবুল্লাহকে থামাতে লেবাননে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। 

এর আগে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছিল ২০০৬ সালে। ওই সংঘাত ৩৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হিয়েছিল এবং অন্তত দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। এরপর থেকে উভয় পক্ষ একটি ‘ছায়া যুদ্ধের’ মধ্যে থাকলেও গত মাস থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে আবারও বড় ধরনের সংঘাত দেখা দেয়। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি লেবানিজ মারা গেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে। এর মধ্যে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা কতজন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

আর ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণ–হিজবুল্লাহকে ইরানের সমর্থন। এমনকি হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) সহায়তা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করার পর ইরান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং সেই হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যদিও এ হামলায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এ হামলার পরপরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ইরান বড় ভুল করেছে। তাকে অবশ্যই চড়া মূল্য দিতে হবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, গোটা মধ্যপ্রাচ্যই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। আর মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত হুমকিতে ফেলেছে গোটা বিশ্বকেই।

ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ–হামাসের বিরোধে ইরানের সম্পর্ক কী
ইরান এরই মধ্যে ইসরায়েলে হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, তারা হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানের সামরিক বাহিনীর ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইরানকে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডারেরা গাজা উপত্যকার হামাস, ইয়েমেনের হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাক ও সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর জন্য অভিন্ন নির্দেশিকা জারি করেছেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের আগে থেকেই এই গোষ্ঠীগুলো আদর্শগতভাবে ইসরায়েলবিরোধী ছিল। তবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে তারা হামাসকে সমর্থন দেয়নি। এখন ইসরায়েলকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে তারা সবাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইরানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয় ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র সৃষ্টির পর আশির দশকের শুরুতে ইরানের হাতেই হিজবুল্লাহর জন্ম হয়।

হিজবুল্লাহর ইতিহাস ও তাদের বর্তমান কার্যক্রম
লেবাননের ১৫ বছরের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সম্পর্ক রয়েছে। মূলত ওই গৃহযুদ্ধের গর্ভ থেকেই ১৯৮২ সালে হিজবুল্লাহর জন্ম। এরপর ১৯৮৩ সাল থেকেই হিজবুল্লাহ লেবাননে মার্কিন, ফরাসি ও অন্যান্য পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। ১৯৮৩ সালের ১৮ এপ্রিল বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসে প্রথম হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। সেই হামলায় লেবাননের এবং আমেরিকান দূতাবাসের ৫২ জন কর্মচারী নিহত হন।

একই বছরের অক্টোবরে মার্কিন সামুদ্রিক ব্যারাকে বোমা হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৪১ সেনাকে হত্যা করে হিজবুল্লাহ।

বৈরুতের সিআইএ স্টেশন প্রধান উইলিয়াম বাকলিসহ মার্কিন নাগরিকদের অপহরণ ও হত্যার জন্যও হিজবুল্লাহ দায়ী ছিল। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে একটি মার্কিন উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিল হিজবুল্লাহ।

সুতরাং হিজবুল্লাহর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

হিকজুল্লাহকে বলা হয় লেবাননে সরকারের ভেতরে আরেক সরকার। তারা সমান্তরাল সরকার হিসেবে কাজ করে। ফলে লেবাননে ইসরায়েলি হামলার কোনো জবাব দিচ্ছে না লেবাননের সরকারি সেনাবাহিনী। বরং ইসরায়েল গতকাল যখন লেবাননে স্থল হামলার ঘোষণা দিল, তখন সীমান্ত থেকে পিছু হটল লেবাননের সেনাবাহিনী। এ থেকেই বোঝা যায়, লেবাননে সরকারের থেকেও শক্তিশালী হিজবুল্লাহ।

হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের হামলা কতটা বিপজ্জনক
হিজবুল্লাহ হামাসের চেয়েও বড় এবং শক্তিশালী গোষ্ঠী। লেবাননজুড়ে তাদের অনেক ভৌত অবকাঠামো রয়েছে। এ ছাড়া হামাসের চেয়েও অনেক উন্নত অস্ত্র রয়েছে হিজবুল্লাহর কাছে।

হিজবুল্লাহ বাহিনীতে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার নিয়মিত যোদ্ধা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের রয়েছে দেড় লাখ থেকে ২ লাখ রকেট, ড্রোন এবং বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। হিজবুল্লাহর নেটওয়ার্ক শুধু লেবাননেই সীমাবদ্ধ নেই। ১৯৯০–এর দশকে আর্জেন্টিনায় এবং ২০১২ সালে বুলগেরিয়ায় ইহুদি পর্যটকদের ওপর হামলা করেছিল হিজবুল্লাহ।

হিজবুল্লাহর কাছে এখন ঠিক কতগুলো অস্ত্র রয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও হিজবুল্লাহর সক্ষমতাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত এক দশকে হিজবুল্লাহ যেভাবে নিজেদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণগত দিক থেকে উন্নতি করেছে, তা বিস্ময়কর।

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত কেন সারা বিশ্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
গত ৪০ বছরের হিজবুল্লাহর কার্যক্রম দেখলে বোঝা যায়, তারা সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নয়। হিজবুল্লাহর নেতারা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের প্রিয় নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধ নেবে। ইসরায়েল সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। সম্প্রতি পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইসরায়েল যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার মূল্য তাদের দিতে হবে।

হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর ইরানও ঘোষণা দিয়েছিল, তারা এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে। এরপর গতকাল ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে বসল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান হামলা চালিয়ে বড় ধরনের ভুল করেছে। তাদেরকে অবশ্যই খেসারত দিতে হবে।

যেভাবে একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এর শেষ কোথায়? মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই‑এর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল‑বিষয়ক ব্যুরোপ্রধান লুবনা মাসারওয়া বলেন, ‘আপতত এর শেষ দেখা যাচ্ছে না। নিজের শক্তি প্রদর্শন ও অস্ত্রের ঝনঝনানি দিয়ে ইসরায়েল আরব বিশ্বে এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করেছে, যারা একদিন প্রতিশোধ নিতে চাইবেই। ফলে গোটা বিশ্বই এখন নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে গেল।’
তথ্যসূত্র: দ্য করভারসেশন, আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও মিডল ইস্ট আই। উৎস: ইনডিপেনডেন্ট

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়