শিরোনাম
◈ সংবাদপত্রের ওপর কোনও ধরনের হামলা এই সরকার বরদাশত করবে না : মাহফুজ আলম ◈ বয়সসীমা ৩২-এর উপরে যাওয়ার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা রিজওয়ানা ◈ সরকারি খরচে কেউ হজ করতে পারবেন না ◈ তিনবার বিসিএসের নিয়ম অযৌক্তিক, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ◈ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে খুশি, কিন্তু বিএনপিকে নিষিদ্ধ করলে আমরা কী করব: গয়েশ্বর ◈ ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে নৌকায় ভাসছে ১৪০ রোহিঙ্গা ◈ ফুটবল ফেডারেশনের লোগো নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা যাবে না ◈ বাংলাদেশকে হারিয়ে ১০ বছর পর উপমহাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের খরা কাটলো: মার্করাম ◈ লড়াই করতে পারলো না, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সহজেই মিরপুর টেস্ট হেরে গেলো বাংলাদেশ ◈ সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গ্রেপ্তার 

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৪, ০৯:৩১ সকাল
আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশে ভারতের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি দক্ষিণ এশিয়াতে বিপর্যয়কর ফলাফল ঘটাতে পারেঃ ফরেন পলিসি

সুশান্ত সিংঃ ১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের নেতারা আমন্ত্রিত ছিলেন। এটি তার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ বৈদেশিক নীতির প্রতিফলন, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ছোট প্রতিবেশীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সমন্বয় গড়ে তোলা। কিন্তু এই নীতি দ্রুত ব্যর্থ  হয়- সীমান্তবিরোধ এবং দ্বিপক্ষীয় মতানৈক্য, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পাদনের ক্ষেত্রে  ভারতের ঢিলেমি এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে।

তবে বাংলাদেশকে তার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির সাফল্য হিসেবে দেখা হয়েছিল। বাংলাদেশের সাবেক  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি চলতি  মাসে ছাত্র বিদ্রোহের চাপের মুখে পদত্যাগ করার আগে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন।  বাংলাদেশে, হাসিনার যাত্রাপথের সূচনা গণতান্ত্রিক পথে হলেও পরে তিনি একজন কর্তৃত্ববাদী শাসকে রূপান্তরিত হন। তার বিরুদ্ধে দেশের মানুষের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়তে থাকে। সরকারি চাকরির কোটা সিস্টেমের  বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যদিয়ে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।  বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে  হাসিনা সরকারের  ব্যাপক দমনপীড়ন  দেশব্যাপী অস্থিরতার জন্ম দেয়। শেষমেশ  ৫ই আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হাসিনা এবং বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশে হাসিনার  জনপ্রিয়তা কম হওয়া সত্ত্বেও, তার পদত্যাগ ভারতীয় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংস্থার কাছে  একটি ধাক্কা হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। ভারত তার শাসনামলে হাসিনাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জুগিয়ে এসেছে, এমনকি  অন্যান্য স্টেকহোল্ডার এবং বাংলাদেশের জনগণের উদ্বেগ উপেক্ষা করেও।

মোদির অধীনে, নয়াদিল্লি তার বেশির ভাগ ছোট প্রতিবেশীদের সঙ্গে এই নীতি গ্রহণ করেছে, কখনো কখনো তার পরিণতি হয়েছে দুর্ভাগ্যজনক।

এটা স্পষ্ট যে, তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে  ভারতের নীতিগত ব্যর্থতা শুধুমাত্র বহিরাগত ঘটনার কারণে নয়। এগুলোর সঙ্গে  ভারতের বর্তমান অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও সম্পৃক্ত। মোদির শক্তিশালী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে গিয়ে নয়াদিল্লি দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের মধ্যে ভারতের  উদারপন্থি মনোভাবকে ক্ষুণ্ন করেছে। কর্পোরেট স্বার্থের জন্য হাসিনার মতো সরকারগুলোর সঙ্গে মোদির ঘনিষ্ঠ আচরণ-  নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য সম্পর্কে  সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থ, বিশেষ করে বাংলাদেশে ক্ষতির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৯  নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (ঈঅঅ) যা মুসলমানদের বাদ দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্যাতিত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছে, বাংলাদেশি জনসাধারণের মধ্যে  সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরে মুসলমানদের প্রতি বিজেপি সরকারের অশোভন আচরণের জন্যও   বিদেশে সমালোচিত হয়েছেন  মোদি। ২০২১ সালে  বাংলাদেশ সফরের সময়  সহিংস দাঙ্গার সম্মুখীন হয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। হাসিনার পদত্যাগ ভারত সরকারের জন্য  আত্মোপলব্ধির সুযোগ করে দিয়েছে, কিন্তু এটি  নীতি সংশোধনে ভারত সরকারকে চালিত করবে কিনা তা বলা কঠিন। বাংলাদেশে ভারতের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি দক্ষিণ এশিয়ায় মোদি সরকারের প্রথম বড় ব্যর্থতা নয়। একটি প্রকৃত হিন্দু রাষ্ট্রের অনুসরণ শুধুমাত্র ভারতের জন্যই ক্ষতিকর নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও এর বিপর্যয়কর ফলাফল ডেকে আনতে পারে।

হাসিনার সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্ক: শেখ হাসিনার পিতা তথা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর, হাসিনা এবং তার বোন ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে  বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ২০০৯ সালে পাকাপাকিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে আসার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার  দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের পর থেকে  তিনি কর্তৃত্ববাদী শাসকে রূপান্তরিত হন- যার নিশানায় ছিল  রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক এবং অধিকারকর্মীরা। হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ  দল আওয়ামী লীগ, কট্টরপন্থি ইসলামী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ভারতবিরোধী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশে ঘাঁটি স্থাপন করতে দেননি হাসিনা। ভারত অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হাসিনাকে  সমর্থন করে গেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমতা হারালে, ‘বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হবে।’ এমনকি এই বছর, হাসিনা একটি বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার  পর, ভারত গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের  প্রশাসনের কাছে তদবির করেছিল।

হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে  এবং সামরিক বাহিনীসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করে এসেছেন। ফলস্বরূপ, ভারত ধরে নিয়েছিল যে প্রতিবাদ সত্ত্বেও হাসিনা শাসন চালিয়ে যাবেন। কিন্তু এই মাসে নিরাপত্তাবাহিনী যখন  হাসিনাকে বাংলাদেশ  ছেড়ে চলে যেতে বলে তখন কূটনৈতিক ব্যর্থতা  নয়াদিল্লিকেও  হতবাক করে দেয়। কোনো পশ্চিমা সরকার তাকে আশ্রয় দেয়নি, নয়াদিল্লিতেই  আত্মগোপন করে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রতিবেশী কূটনীতির ক্ষেত্রে  ভারতের অতিনিরাপত্তামূলক দৃষ্টিভঙ্গি-হাসিনার প্রতি নয়াদিল্লির নিঃশর্ত সমর্থনে প্রতিফলিত। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায়  ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিরুদ্ধে গিয়ে  ভারত এটিকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। নয়াদিল্লি তার প্রতিবেশীদের আস্থা অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করেছে, ফলে এই দেশগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের বৃহত্তর জনসাধারণের অনুভূতি থেকে  বিচ্ছিন্ন হয়েছে ভারত, রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে যার পরিণতি গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ।

২০২১ সালে মিয়ানমারে, একটি অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার পক্ষে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের এড়িয়ে গেছে ভারত। আফগানিস্তানে আফগানদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের  সম্পর্ককে উপেক্ষা করে  তালেবান শাসকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। 

ভারতের, নিরাপত্তাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে তার আচরণে প্রকাশ পেয়েছে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর আচরণের ভুরি ভুরি অভিযোগ সামনে  এসেছে।  
মোদির শক্তিশালী রাজনীতি ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতিকেও প্রভাবিত করেছে। মোদি বিতর্কিত ভারত-চীন সীমান্তে চীনের অনুপ্রবেশের বিষয়ে নীরবতা বজায় রাখলেও, ভারতের ছোট প্রতিবেশীদের কাছে  তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারত ২০১৫ সালে মিয়ানমারে  বিদ্রোহীদের ট্রানজিট ক্যাম্পের বিরুদ্ধে একটি আন্তঃসীমান্ত অভিযান শুরু করে। একই বছর ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও  নেপালের ওপর একটি বাণিজ্য অবরোধ জারি করে ভারত। গত বছর মোদির সমর্থকরা ভারতীয় পর্যটকদের মালদ্বীপ বয়কট করার জন্য একটি প্রচারণা শুরু করেছিল, কারণ মালদ্বীপের কয়েকজন মন্ত্রী মোদির সমালোচনা করেছিলেন।

বাংলাদেশের জনগণের মনে  ভারতের সীমান্ত পুলিশের কঠোর আচরণের পাশাপাশি  পানি বণ্টন, ট্রানজিট সুবিধা এবং অন্যান্য বাণিজ্য-সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর বিষয়ে নয়াদিল্লির পদক্ষেপ সম্পর্কে ক্ষোভ রয়েছে।  সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ  হাসিনার  ওপর গিয়ে পড়েছে বলে মনে করা হয়। ভারতের রাজনৈতিক বিরোধীরা  মোদি ঘনিষ্ঠ  ফার্মগুলোকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেবার জন্য  সমালোচনা করে এসেছেন, বিশেষ করে ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন ফার্মগুলোকে। এই ঘনিষ্ঠতা  ভারতের প্রতিবেশীদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। গত বছর, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে তার পাওয়ার প্লান্ট মারফত ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা করার পর হাসিনার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছিল। ভীষণই ব্যয়বহুল এই প্ল্যান্টের জন্য বাংলাদেশকে  সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন যে হাসিনার  ‘রাজনৈতিক বৈধতা সুরক্ষিত করতে মোদির রাজনৈতিক অনুগ্রহ প্রয়োজন। বহুত্ববাদ, কর্তৃত্ববাদ এবং ক্রোনিজম বাংলাদেশে ভারতের সমস্যায় অবদান রেখেছে, কিন্তু মোদি সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুসরণ আরও ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৯  সিএএ আইন  শেষ পর্যন্ত একটি প্রকৃত হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছে। যে সকল নির্যাতিত সম্প্রদায়গুলো ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশের হিন্দুরা। এর জেরে  বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে ভারতবিরোধী মনোভাব। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সামনে এসেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (মোদির কার্যত ডানহাত)  বাংলাদেশি  অভিবাসীদের উইপোকা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন ।

এর আগে, ভারতীয় বিচার বিভাগ আইনি নাগরিকদের নথিভুক্ত করার জন্য এবং আসামের সীমান্ত রাজ্যে বাংলাদেশি অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি কঠোর জরিপের নির্দেশ দিয়েছিল- যাকে সমালোচকরা  অনথিভুক্ত ভারতীয় মুসলমানদের টার্গেট  করার একটি উপায় হিসেবে দেখেন। অমিত শাহ এই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (ঘজঈ) দেশব্যাপী কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও নয়াদিল্লি এনআরসিকে  একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।  কিন্তু বাংলাদেশ মনে করে, ভারতের ‘অবৈধ বিদেশি নাগরিক’ সমস্যার মূলে তাকেই রাখা হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছিলেন যে ঈঅঅ এবং ঘজঈ লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে।
এদিকে, হাসিনার সরকার দেশের মধ্যে এই ধারণাকে শক্তিশালী করতে থাকে যে তিনি নয়াদিল্লির অঙ্গুলি হেলনে  চলছেন। ২০২২ সালে যখন একজন বিজেপি মুখপাত্র মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)  উদ্দেশ্যে  অপমানজনক  মন্তব্য করেছিলেন, তখন এটি অনেক মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু  হাসিনা সরকার বিষয়টিকে ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা’ বলে উল্লেখ করে হালকা করার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশে অভিযোগ বাড়তে শুরু করে  এবং ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি বিজেপি সরকারের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যমূলক আচরণ ক্ষোভের জন্ম দেয়।  এই বছর ভারতের নির্বাচনী প্রচারে মোদির  মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব কারোর নজর এড়ায়নি। এদিকে গত বছর, তিনিই একটি নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেছিলেন যেখানে ভারতের সমস্ত ছোট প্রতিবেশীদের নিয়ে বড় বড় করে চিত্রিত আছে  ‘অখণ্ড ভারত’ (অবিচ্ছিন্ন ভারত)।

মোদির  জাতীয় ভাষণ: গত ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে, মোদি ভারতের ১.৪ বিলিয়ন নাগরিকদের বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা বলেছিলেন। এটি ছিল  ভারতকে বহুধর্মীয় এবং বহুভাষিক দেশ হিসেবে নয় বরং শুধুমাত্র একটি হিন্দুরাষ্ট্র  হিসেবে ফ্রেম করার কৌশলী উপায়। এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে বিজেপি সরকার তার ডানপন্থি সমর্থক এবং মিডিয়ার  নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে  যারা সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যার বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

মোদির সরকারের এখন আত্ম-বিশ্লেষণের  ক্ষমতা কমে  আসছে বলে মনে করছেন অনেকে। বাংলাদেশে হাসিনার পদত্যাগের ঘটনাগুলোর জন্য পাকিস্তান, চীন বা ইসলামপন্থিদের দোষারোপ করার পরিবর্তে, ভারতের  উচিত তার প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো। যারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে  কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। যদিও ভারতকে অনেকে একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসেবে দেখে, তবে এর  প্রতিবেশীরা মনে করে ভারত তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ভৌগোলিক কারণে তার ছোট প্রতিবেশীদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে কাজ করতে হবে, এই পরিস্থিতিতে  নয়াদিল্লির উচিত এখনই  নতুন  চুক্তির বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করা।

লেখক: ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক এবং ভারতের ক্যারাভান ম্যাগাজিনের একজন পরামর্শক সম্পাদক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়