শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২৪, ০১:৫৮ দুপুর
আপডেট : ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোদির ১৭৩টি বক্তৃতার ১১০টিতেই মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

রাশিদ রিয়াজঃ ভারতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মার্চ মাসে  আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রচারে বেড়িয়ে  যে ১৭৩টি বক্তৃতা দিয়েছেন তার মধ্যে ১১০টিতে ইসলামফোবিক মন্তব্য রয়েছে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একথা  জানিয়েছে। ১৪ আগস্ট একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা জানিয়েছে , আপাতদৃষ্টিতে এই মন্তব্যগুলো রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।  মোদি প্রচারে দাবি করে এসেছেন , বিরোধীরা  শুধুমাত্র মুসলিম অধিকারগুলো নিয়ে  গলা ফাটিয়ে  সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও বিভ্রান্তি  তৈরি করতে চেয়েছে। 'সূত্র : দ্য ওয়্যার

মোদি সম্প্রতি বলেছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশের মাটিতে  হিন্দু এবং অন্যান্য সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আশা করেন।   কিন্তু  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করছে যে,  এই বছরের শুরুতে মোদির  নির্বাচনী প্রচারাভিযানে  প্রায়ই ভারতে  মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ব্যবহার  করা হয়েছে ।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের  পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবরের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় মোদির  প্রচারাভিযানের বক্তৃতাগুলো ভীষণভাবে  সমালোচিত হয়েছিল। রাজস্থানের একটি সভায় গিয়ে তিনি বলেন, “কংগ্রেস  বলেছিল দেশের সম্পদের উপর মুসলিমদের অধিকার সকলের আগে। দেশের সম্পদ বন্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। কংগ্রেসের ইশতেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গয়নার হিসেব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলিমদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।” এখানেই শেষ নয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মোদির সমালোচনামূলক  মন্তব্যের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কথাও  নথিভুক্ত করেছে। বিজেপির সর্বভারতীয়  সভাপতি জেপি নাড্ডাকে নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়ে তাকে এবং  তার দলের সমস্ত তারকা প্রচারকদেরকে সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা করা থেকে বিরত থাকতে বলে,  কিন্তু মোদিকে বাধা দেয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে , মোদি  সারা প্রচারাভিযানের সময় জুড়ে উস্কানিমূলক বক্তৃতা চালিয়ে গেছেন। সংগঠনের এশিয়া ডিরেক্টর এলাইন পিয়ার্সন বলেছেন, ”ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেতারা তাদের প্রচারে স্পষ্টতই মিথ্যা অভিযোগ করেছেন মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পর্কে।

মোদি প্রশাসনের অধীনে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এক দশকের আক্রমণ এবং এই ধরনের বৈষম্যেমূলক বক্তৃতাগুলো মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকে আরও স্বাভাবিক করে তুলেছে।”

আদর্শ  আচরণবিধি অনুযায়ী , ভোট নিশ্চিত করার জন্য বর্ণ বা সাম্প্রদায়িক অনুভূতির প্রতি আঘাত করা উচিত নয়। ভারত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিরও একটি পক্ষ, যেখানে  বলা আছে  জাতিগত বা ধর্মীয় ঘৃণা, বৈষম্য, শত্রুতা বা সহিংসতার উদ্রেককারী যে কোনো বিষয়ে ওকালতি করা নিষিদ্ধ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্টে জানাচ্ছে ,ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সাধারণ নির্বাচনের পরেও  মুসলমানদের  টার্গেট করেছিল। উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে কানওয়ার যাত্রার আগে খাবারের দোকান এবং খাবারের দোকান মালিকদের   নাম জানতে চাওয়া হয়।  সেইসাথে  মধ্যপ্রদেশে যে সব বাড়িতে গরুর মাংস পাওয়া গেছে সেগুলি গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ।

এনজিওটি ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক আক্রমণগুলোও উল্লেখ করেছে এবং ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়েছে বলে দাবি করেছে । পিয়ারসন বলছেন, 'ভারত সরকার বহুত্ববাদের  দাবি করে,  গণতন্ত্রের  দাবি করে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর  অপমানজনক কর্মকাণ্ড সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দেয়। নতুন মোদি  সরকারকে তার বৈষম্যমূলক আচরণ পরিত্যাগ করতে হবে।  সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।‘

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়