পেস্তাবাদাম। পুরো পৃথিবীতেও এই বাদাম বেশ জনপ্রিয়। দুবাইয়ে পেস্তাবাদামের চকলেট বারও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মিষ্টান্ন, আইসক্রিম, বিশেষ ডিশ সাজাতে পেস্তা বাদামের ব্যবহার বেড়েছে। খাবারের সৌন্দর্য আর পুষ্টি দুটিরই পাওয়ার হাউস এই বাদাম। অল্প একটু খেলেই পাওয়া যায় অনেক পুষ্টি।
পেস্তা বাদাম শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা থাকছে আজকের প্রতিবেদনে—
১. পাকস্থলি ভালো রাখে: যুক্তরাজ্যের ডায়েটিশিয়ান হেলেন বন্ড বলেন, ‘এক মুঠো পেস্তা বাদামে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে তা থেকে শরীরের উপকারী শর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি হয়, যা আমাদের অন্ত্রের আস্তরণকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি সুস্থ অন্ত্রের প্রাচীর ক্ষতিকর পদার্থকে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। আমাদের হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পুষ্টি শোষণ এবং এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, অন্য যেকোনো বাদামের তুলনায় পেস্তাবাদাম খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশি বাড়ে। পেস্তা থেকে পলিফেনল, টোকোফেরলস ও লুটেইনের মতো কিছু উপাদান নিঃসৃত হয়, যেগুলো অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ফাংশনাল মেডিসিন এবং নিউট্রিশনাল থেরাপিস্ট নিষ্ঠা প্যাটেল বলেন, পেস্তায় থাকা ফাইবার আমাদের দেহের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর খাবার। যা অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে। মাইক্রোবায়োমের বৈচিত্র্য বাড়ায়, যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়ে। ক্ষেত্রে। ”
২. ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে: ডায়েটিশিয়ান হেলেন বন্ড বলেন, ‘পেস্তাবাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আছে। এগুলো শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ফাইবার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।’
পেস্তার উপাদান ডায়েটারি ফাইবার ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মলত্যাগ প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। যার ফলে দেহে ক্ষতিকর পদার্থ (কার্সিনোজেন) জমে থাকতে পারে না। এছাড়াও এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা ক্যানসার প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
২০২২ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, পেস্তা বাদাম স্তন, যকৃত এবং বৃহদান্ত্র ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিকে দমন করতে সক্ষম।
৩. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী: নিষ্ঠা প্যাটেল বলেন, ‘পেস্তা হৃদ-স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে উচ্চ পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উদ্ভিজ্জ স্টেরলস থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল (লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন-এলডিএল) কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এতে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট—যেগুলো ‘ভালো’ ফ্যাট হিসেবে পরিচিত এবং হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পেস্তাবাদাম যুক্ত করলে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি রক্তনালির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে পারে। হেলেন বন্ড বলেন, ‘অন্যান্য গাছজাত বাদামের তুলনায় পেস্তাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী—আর এটি সরাসরি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।’
৪. পেস্তা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে: হেলেন বন্ড বলেন, ‘পেস্তাতে কিছুটা স্যাচুরেটেড ফ্যাট (পরিপূর্ণ চর্বি) থাকলেও, এর বেশিরভাগ ফ্যাটই হলো হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। ফ্যাটের এই উপকারী ভারসাম্য আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পেস্তাতে ফাইটোস্টেরল নামের একটি উপাদানও রয়েছে, যা অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণের প্রক্রিয়া আংশিকভাবে আটকিয়ে কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে সাহায্য করে।’
পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা অনুযায়ী, এক মুঠো পেস্তা খাওয়ার ফলে শরীরের এলডিএল বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যেতে পারে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি এইচডিএল বা ‘ভালো’ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে, যদি প্রতিদিন পরিমাণমতো ক্যালরি গ্রহণ করেন।
৫. রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: পেস্তা হলো ভিটামিন বি৬-এর অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপকারী। এতে থাকা ফাইবার হজম এবং শর্করা শোষণের গতি কমিয়ে দেয়, যার ফলে রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া রোধ হয় এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না। যার ফলে ক্যালরি গ্রহণ কমে।
পেস্তা গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল (রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ) উন্নত করতে পারে। নিষ্ঠা প্যাটেল বলেন, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারে সমৃদ্ধ পেস্তা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে এবং ফ্যাট ও ফাইবার থাকায় তা ধীরে শোষিত হয়।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে: চীনে ‘হ্যাপি নাট’ নামে পরিচিত পেস্তাবাদাম অন্যান্য বাদামের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম ক্যালরিযুক্ত। এতে প্রোটিন ও ফাইবার বেশি থাকায় এটি অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, যার ফলে কম খাওয়া হয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
নিষ্ঠা প্যাটেল খোসাসহ পেস্তা বাদাম কেনার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘খোসা ছাড়াতে সময় লাগে বলে অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।’ বলেন তিনি। ২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা খোসাসহ পেস্তা খান, তারা খোসা ছাড়া খাওয়াদের তুলনায় ৪১ শতাংশ কম ক্যালরি গ্রহণ করেন।
৭. চোখের সুরক্ষায় সাহায্য করে: পেস্তাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট লুটেইন ও জিয়্যাক্সানথিন রয়েছে, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করতে করতে সাহায্য করে। হেলেন বন্ড বলেন, ‘এই উপাদানগুলো চোখকে বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন থেকে রক্ষা করে, যা চোখের একটি সাধারণ সমস্যা। যার প্রভাবে চোখের মাঝখানের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
টাফটস ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন পেস্তা খেলে চোখ ভালো থাকে। এতে থাকা উদ্ভিজ্জ রঞ্জক লুটেইন ম্যাকুলার পিগমেন্ট অপটিক্যাল ডেনসিটি (এমপিওডি) বাড়াতে সাহায্য করে। এটি চোখকে নীল আলো এবং বয়সজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।