শিরোনাম
◈ ঈদের ছুটিতে ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা, থাকবে যৌথ বাহিনীর টহল, ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত ও মহাসড়কে থাকবে সেনাবাহিনী ◈ ব্রাজিলের কোচ দরিভাল চাকরি হারাচ্ছেন! ◈ জিদান বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান, বাফুফের ডাকের অপেক্ষা ◈ গোল করে আর্জেন্টিনাকে গুড়িয়ে দেয়ার হুমকিদাতা রাফিনিয়াকে ক্ষমা করে দিয়েছেন মেসিদের কোচ ◈ শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি, সরাইলের এসিল্যান্ড প্রত্যাহার ◈ শবে কদর জেগে থাকুন প্রাণের আনন্দে ইবাদাত কর্মে ◈ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগজনক’ দেশ ভারত, র’য়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ ◈ শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেলো পাকিস্তান ◈ বৃহস্পতিবার ঢাকার যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না ◈ ২৪ দিনেই এসেছে প্রায় ৩৩ হাজার ৫৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০২৫, ০৪:০৬ সকাল
আপডেট : ২৬ মার্চ, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোলেস্টেরল কি সত্যিই প্রাণঘাতী হতে পারে, গবেষণায় উঠে এলো নানান তথ্য

কোলেস্টেরল সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা এবং নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে কোলেস্টেরলের সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে, তবে এটি কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ ছাড়াই বাড়তে পারে। তাই ৪০ বছরের বেশি বয়স হলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো উচিত। যদিও এটি একটি সহজ বিষয় বলে মনে হতে পারে, আমাদের ব্যস্ত জীবনের মধ্যে কোলেস্টেরল কখনো কখনো অবহেলিত থেকে যায়।

অনলাইনে প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা যেমন, কোলেস্টেরল থাকলে ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এতে পারে, কিংবা কিছু বিশেষজ্ঞদের দাবি যে হৃদরোগের জন্য মূলত চিনি দায়ী, কোলেস্টেরল নয় - এসব আমাদের বিভ্রান্ত করে। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, কোলেস্টেরল সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা এবং নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে কোলেস্টেরলের সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

কোলেস্টেরল কী: ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের (বিএইচএফ) সিনিয়র কার্ডিয়াক নার্স এমিলি ম্যাকগ্রাথ বলেন, ‘কোলেস্টেরল হলো একটি চর্বিজাতীয় পদার্থ, যা আমাদের রক্তে স্বাভাবিকভাবে থাকে।’ আমাদের শরীরের জন্য এর কিছু পরিমাণ প্রয়োজন। বিএইচএফ-এর সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান ট্রেসি পার্কার বলেন, ‘হরমোন তৈরি, যেমন ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন, এবং কোষকে শক্ত ও মজবুত রাখতে কোলেস্টেরল দরকার। কিন্তু যখন এর মাত্রা বেশি হয়, তখনই সমস্যা শুরু হয়।’ আমাদের শরীর নিজেই কোলেস্টেরল তৈরি করে, তবে জীবনযাত্রা ও জিনের প্রভাবেও এর মাত্রা পরিবর্তিত হয়।

ভাল ও খারাপ কোলেস্টেরল কী?

রক্তে দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে:

লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল): এটি "খারাপ" কোলেস্টেরল, কারণ এটি ধমনীতে জমে গিয়ে ব্লক তৈরি করতে পারে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল): এটি "ভাল" কোলেস্টেরল, যা শরীরের এলডিএল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

কখন কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাবেন: বিশেষজ্ঞদেরপরামর্শ অনুযায়ী, ৪০-৭৪ বছর বয়সীদের প্রতি পাঁচ বছরে এবং ৭৫-এর বেশি বয়সীদের প্রতি বছর পরীক্ষা করা উচিত। তবে পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে বা বুকে ব্যথার সমস্যা থাকলে যে কেউ ডাক্তারের কাছে পরীক্ষার জন্য বলতে পারেন।

পরীক্ষায় কী দেখা যায়: প্রাথমিক পরীক্ষায় মোট এলডিএল ও এইচডিএল-এর একটি সংখ্যা দেয়া হতে পারে। তবে ম্যাকগ্রাথ বলেন, সম্পূর্ণ লিপিড প্রোফাইল পাওয়া ভালো, কারণ এতে এইচডিএল, এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের বিস্তারিত তথ্য থাকে। পুরুষদের জন্য এইচডিএল ১ মিমোল/লি এবং নারীদের জন্য ১.২ মিমোল/লি-এর বেশি হওয়া উচিত। এলডিএল ৩ মিমোল/লি-এর নিচে থাকলে সুস্থ। কোলেস্টেরলের অনুপাত (মোট কোলেস্টেরল ভাগ এইচডিএল) ৬-এর নিচে থাকা ভালো।

ট্রাইগ্লিসারাইড কী: ম্যাকগ্রাথ বলেন, ট্রাইগ্লিসারাইড হলো অব্যবহৃত ক্যালোরি বা শক্তির মজুত। এটি রক্তে থাকা আরেক ধরনের চর্বি। কিছু পরিমাণ দরকার, তবে বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ মাত্রা ২.৩ মিমোল/লি বা তার কম।

জিনের ভূমিকা: মায়ার বলেন, লিপিডের মাত্রা অনেক ক্ষেত্রে জিনগত। যদি উচ্চ কোলেস্টেরল পিতামাতার কাছ থেকে পান, তবে শুধু খাদ্য পরিবর্তন করে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, ওষুধ লাগে। অন্যদিকে ম্যাকগ্রাথ বলেন, ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া একটি সাধারণ জিনগত সমস্যা, যা প্রতি ২৫০ জনের একজনের মধ্যে দেখা যায়।

হৃদরোগের ঝুঁকিতে অন্যান্য যেসব বিষয় প্রভাব ফেলে: ম্যাকগ্রাথ বলেন, বয়স, ওজন, পারিবারিক ইতিহাস, ধূমপান, অ্যালকোহল, উচ্চ রক্তচাপ, জাতি ও লিঙ্গ – এসব ঝুঁকি নির্ধারণ করে। ঝুঁকি ১০%-এর বেশি হলে স্ট্যাটিন দেয়া হয়।

স্ট্যাটিনের বিকল্প হিসেবে জীবনযাত্রা পরিবর্তন: জিনগত কারণ না হলে, জীবনযাত্রা পরিবর্তনের চেষ্টা করা যায়। ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য এলডিএল কমায় ও এইচডিএল বাড়ায়। ৬-৮ সপ্তাহে ফল দেখা যেতে পারে।

ওজন যেভাবে প্রভাব ফেলে: ম্যাকগ্রাথ বলেন, সব অতিরিক্ত ওজনের মানুষের কোলেস্টেরল বেশি হয় না, তবে এটি ঝুঁকি বাড়ায়। ওজন কমালে কোলেস্টেরলও কমে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে খাদ্যতালিকায় কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার যুক্ত করতে হবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে খাদ্যতালিকায় কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার যুক্ত করতে হবে।

ভালো কোলেস্টেরলের জন্য সেরা খাবার খেতে হবে: বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে খাদ্যতালিকায় কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার যুক্ত করতে হবে। এদের মধ্যে রয়েছে,ওটস, মটরশুটি ও মসুর ডালে থাকা বেটা-গ্লুকান কোলেস্টেরল শোষণ কমায়। উদ্ভিজ্জ খাদ্য, বাদাম, জলপাই তেল ও তৈলাক্ত মাছ ভালো।

যেসব খাবার কোলেস্টেরল বাড়ায়: প্রক্রিয়াজাত মাংস, উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, নারকেল ও পাম তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি, যা এলডিএল বাড়ায়।

উচ্চ কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

সঠিক খাদ্যাভ্যাস: বেশি পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস, শাকসবজি, ডাল ও বাদাম খাওয়া।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ: অলিভ অয়েল, বাদাম, অ্যাভোকাডো এবং মাছ থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাট বেশি খাওয়া উচিত।

স্ট্যাটিন ও অন্যান্য ওষুধ: উচ্চ কোলেস্টেরল কমানোর জন্য চিকিৎসকরা স্ট্যাটিন নামক ওষুধ দিয়ে থাকেন, যা শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরল উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে। তবে যারা খুব বেশি উচ্চ কোলেস্টেরল সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য পিসিএসকে৯ ইনহিবিটরস নামে নতুন ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে।

কোলেস্টেরল সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করলে অনেক ক্ষেত্রেই কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। তবে যদি জিনগত কারণে কোলেস্টেরল বেশি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। তাই নিয়মিত পরীক্ষা করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হতে পারে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর মূল চাবিকাঠি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়