আমাদের রান্নার অপরিহার্য উপাদান পেঁয়াজ। পেঁয়াজের কলি ও পেঁয়াজের পাতাও আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। পেঁয়াজের পাতা অনেক ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। তরকারিতে পেঁয়াজের পাতা মিশিয়ে দিলে স্বাদ অনেকটা বাড়ে। সবজি হিসেবে এর কদরও আছে। চায়নিজসহ উপমহাদেশীয় খাবারে পেঁয়াজের পাতা বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
পেঁয়াজপাতার গুণাগুণ
সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে: পেঁয়াজপাতার খনিজ উপাদান সালফার ছত্রাকের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে এবং ভিটামিন ‘কে’ রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রক্ত সংবহনের উন্নতি করে এবং শরীরে ভিটামিন ‘বি১’–এর শোষণের মাধ্যমে চাপ ও ক্লান্তি কমায়। শরীরের কলার প্রদাহ থেকে রক্ষা করে পেঁয়াজপাতার ভিটামিন ‘সি’।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: পেঁয়াজপাতায় আছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘বি১২’ এবং থায়ামিন। কোয়ারসেটিন নামের ফ্ল্যাভোনয়েডের উৎস এই পেঁয়াজপাতা। পেঁয়াজপাতার ভিটামিন ‘সি’ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপের উচ্চমাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
অ্যাজমা চিকিৎসায়: পেঁয়াজ পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-হিস্টামিন উপাদান থাকে। এসব উপাদান আর্থ্রারাইটিস ও অ্যাজমার চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়, বিপাকে সাহায্য করে।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়: লুটেইন ও জিয়াজেনথিন নামের ক্যারোটিনয়েডের উপস্থিতির জন্য পেঁয়াজপাতা চোখের প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখে। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন ‘এ’, যা বসন্তকালের পেঁয়াজের সবুজ অংশে থাকে।
কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশনে বলা হয়েছে, যাঁরা নিয়মিত পেঁয়াজপাতা খান, তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি কম। সবুজ পেঁয়াজের পাতায় সালফার, যাতে অ্যালাইল সালফাইড থাকে, তা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ক্যানসাররোধী উপাদান ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে।
শ্বাসযন্ত্র ভালো থাকে: অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় পেঁয়াজপাতা সাধারণ ঠান্ডা, ফ্লু ও ভাইরাল ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেঁয়াজপাতা শ্বাসযন্ত্রের কাজকে উদ্দীপিত করা এবং কফ বের করে দিতে সাহায্য করে।
প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে: পেঁয়াজকলিতে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান পাকস্থলী, অন্ত্র এবং মূত্র প্রদাহ রোধে কাজ করে।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে: পেঁয়াজকলি ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ; যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে পেঁয়াজকলি খাওয়া উপকারী।
পুরুষ হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়: পেঁয়াজের রস টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেয়।
ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমায় : সর্দি কমাতে পেঁয়াজকলি দারুণ উপকারী। এটা সর্দি কমাতে এবং শীতের সময়ে ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট উপকারী। পেঁয়াজকলিতে ব্যথা উপশমকারী উপাদান থাকায় এটি দ্রুত মাথা, মাংসপেশি এবং হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। অ্যান্টিপাইরোটিক উপাদান থাকায় খাবারে পেঁয়াজকলি ব্যবহার করলে জ্বর দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।
অস্টিওপোরোসিস ঝুঁকি কমায় : প্রতিদিন পেঁয়াজকলি খেলে শরীরের ভিটামিন ‘কে’-এর চাহিদা পূরণ হয়। এই ভিটামিন ‘কে’ রক্তজমাট বাঁধা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে : পেঁয়াজকলিতে থাকা সালফার শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বলে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে।
সতর্কতা : পেঁয়াজপাতা ও কলি ফাইবার–সমৃদ্ধ হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অ্যাসিডিটি, বদহজমের কারণে বুকে ব্যথাসহ নানা সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া পেঁয়াজপাতায় যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। তাই যাঁদের রক্তে বাড়তি পটাশিয়াম আছে, তাদের পেঁয়াজপাতা প্রয়োজনে খাওয়া বাদ দেওয়াই ভালো। ভিটামিন ‘কে’-এর পরিমাণ বেশি থাকায় যাঁদের হার্টে ব্লক আছে ও ভিটামিন ‘কে’–জাতীয় খাবারে বিধিনিষেধ আছে, এমন রোগীদের খাদ্যতালিকায় পেঁয়াজপাতা কম রাখাই ভালো। উৎস: প্রথম আলো।
আপনার মতামত লিখুন :