ডার্ক চকোলেটের বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এগুলোর মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগ থেকে রক্ষা এবং রক্তচাপ কমানোর বিষয়ও রয়েছে। বর্তমানে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ডার্ক চকলেট খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকি কমতে পারে।
বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, ১৯৯০ দশক থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, পৃথিবীজুড়ে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৯৯০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চারগুণ বেড়ে ৮৩০ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এদের বেশিরভাগই টাইপ-২ তে আক্রান্ত।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। একে জুভেনাইল ডায়াবেটিসও বলা হয়। সাধারণত যাদের অল্প বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেশি। এর ফলে অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন মানুষের শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তবে শরীরে ইনসুলিন গ্রহণে বাধা দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক হারে বেড়ে যায়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত জিনগত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই রোগটি অনেক বেশি দেখা যায়। আর টাইপ ২ ডায়াবেটিস খাদ্যাভ্যাস ও শরীরের ওজনের ওপর নির্ভর করে। এই রোগের লক্ষণ শরীরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।
বেশ কয়েকটি গ্রীক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের করা ২০২৩ সালের সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ৮.৪ মিলিয়ন মানুষ টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ১৩ মিলিয়ন থেকে ১৭.৪ মিলিয়ন হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
গবেষণায় যা দেখা গেছে : প্রায় এক লাখ ৯২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৩৪ বছর ধরে তিনটি গবেষণা করেছেন। এগুলো হলো, নার্সেস হেলথ স্টাডিজ ১ ও ২ এবং হেলথ প্রফেশনালস ফলো-আপ স্টাডি। গবেষণার শুরুতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ছিল না। অংশগ্রহণকারীরা তাদের ডায়াবেটিসের অবস্থা (যদি থাকে), খাদ্যাভ্যাস, সাধারণ ওজন এবং সময়ের সাথে সাথে চকলেট খাওয়ার কথাও জানায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ডার্ক চকলেট খান, বিশেষ করে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ বা তার বেশিবার, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন পরিমাণে চকোলেট গ্রহণকারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঘটনা তুলনা করে ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়েছিল। গবেষণা চলাকালীন, প্রায় ১৯ হাজার মানুষ যাদের আগে ডায়াবেটিস ছিল না, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
এছাড়া প্রায় এক লাখ ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে যারা চকলেট খাওয়ার কথা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। গবেষণায় ডার্ক চকলেটের উপকারী প্রভাব দেখা গেলেও, অন্যান্য চকোলেটের তেমন প্রভাব দেখা যায়নি।
হার্ভার্ডের পুষ্টি বিভাগের প্রধান গবেষক বিঙ্কাই লিউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, "আমাদের অনুসন্ধানগুলো বলছে, সব চকোলেট সমানভাবে তৈরি করা হয় না। যারা চকোলেট পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি অনুস্মারক হতে পারে, যেমন দুধের চকোলেটের চেয়ে ডার্ক চকোলেট বেছে নেয়া তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে।"
এদিকে অন্য গবেষণা অনুসারে, ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং গোটা শস্যের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এপিডেমিওলজি ইউনিটের সমন্বিত ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে ফল এবং শাকসবজি খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্তের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। উৎস: চ্যানেল২৪
আপনার মতামত লিখুন :